বয়োবৃদ্ধ রেমিট্যান্স যুদ্ধা নুর আহাম্মদের(৭০) শেষ ইচ্ছা তাঁর কলেজ পড়ুয়া ছেলে নুর উদ্দিনের সাগরকে (২১) দেখার। ছেলে জীবিত নাকি মৃত তা জানার।
এজন্য সব দপ্তরের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে এখন সহধর্মীনিকে নিয়ে নুর আহম্মেদ শয্যাশায়ী! সন্তান অপহরণের ২২ মাস পরও প্রতিক্ষার প্রহর যেন এখন কালরাত! দুর্বৃত্তদের হাতে অপহৃত সন্তানকে অক্ষত ফিরে পেতে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ পরিশোধ করেও ছেলের খোঁজ না পাওয়ার চিন্তায় পুরো পরিবারে অশান্তি ও হতাশার পাল্লাভারী হচ্ছে।
খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার বাটনাতলী এলাকা থেকে রেমিট্যান্স যুদ্ধা মো.নুর আহাম্মদের পুত্র মো. নুর উদ্দিন সাগর ২০২১ সালের ২৩ মে দুর্বৃত্তের হাতে অপহরণ হয়। রেমিট্যান্স যুদ্ধার অর্থে নিজ ভূমিতে পোল্ট্রি ফার্ম করতে গিয়ে একাধিকবার উপজাতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর পরিচয়ে চাঁদা দাবী করে হুমকির মুখোমুখিও পড়েছিল অপহৃত সাগর!
সন্তান অপহরণের পর গত ২২ মাসে পুলিশ,সেনাবাহিনী, র্যাব অফিস ও আদালতে আসা-যাওয়ায় এই রেমিট্যান্সযুদ্ধা জীবন অসাড়! এ প্রসঙ্গে অপহৃত সাগরের পিতা মো. নুর আহম্মেদ বলেন, বিদেশে শ্রমের অর্থ বৈধ উপায়ে দেশে নিয়ে সন্তানদের সুখ-শান্তির উদ্দেশ্যে পোল্ট্রি ফার্মে পুঁজি বিনিয়োগ করতে গিয়ে নানা বিড়ম্বনার এক পর্যায়ে সন্তান নুর উদ্দিন সাগর অপহরণের শিকার হয়। আদরের সন্তানকে অক্ষত ফিরে পেতে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দেওয়া থেকে শুরু করে পুলিশ,সেনাবাহিনী ও
র্যাব-৭ এর হেড অফিসে বহুবার গিয়েছি।
এখন আমি আর ভালোভাবে চলতে পারিনা। মাঝখানে আমিও আমার স্ত্রী দু’জনই স্ট্রোক করেছি। শেষ জীবনে আমার শেষ ইচ্ছা ছেলে নুর উদ্দিন সাগর জীবিত না মেরে ফেলা হয়েছে- তা জানতে ইচ্ছে করছে। তিনি আরও বলেন, মুক্তিপনের ৩ লাখ টাকা পরিশোধ করেও অপহরণের ২২ মাসেও কোন খোঁজ পাচ্ছিনা আমার ছেলের। পড়াশোনার ফাঁকে সে একটি মুরগি খামার করত।
পরিবারের অভিযোগ, ২০২১ সালের ২৩ মে রাতে খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার বাটনাতলির খামারবাড়ি থেকে নুর উদ্দিনকে অপহরণ করার অভিযোগ উঠে দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে। অপহরণকারীরা তাঁর কুয়েত প্রবাসী বাবার মোবাইল ফোনে কল করে। ভয়েস রেকর্ড পাঠিয়ে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। পরে বিভিন্ন মাধ্যমে নুর উদ্দিনের পরিবারের পক্ষ থেকে তিন লাখ টাকা পরিশোধ করলেও তাঁর এখনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনায় ২০২১ সালের ৩ জুন নুর উদ্দিনের ভাই মো. সালাউদ্দিন মানিকছড়ি থানায় একটি মামলা করেন।
পুলিশ জানায়, মামলার পর পুলিশ পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করেন। পরে আসামিরা জামিনে বেরিয়ে যান। মানিকছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ আনচারুল করিম বলেন, অপহৃত নুর উদ্দিন সাগরের মামলাটি এখন পিবিআই তদন্ত করছে।
পিবিআইর তদন্ত কর্মকর্তা মো. মনির হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘মো. নুর উদ্দিন সাগর অপহরণের মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব আমরা পেয়েছি মাত্র দু’মাস হলো। আমরা অপহৃতের বিষয়ে সঠিক ক্লু উদঘাটনে কাজ শুরু করেছি’।
থানায় মামলার পর,পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার মগাইছড়ি এলাকার শমসের আলীর ছেলে আফসার আলী, রুবেল মিয়ার ছেলে মো. রনি, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার বাজালিয়া এলাকার আশুতোষ মহাজনের ছেলে মাইকেল মহাজন, চন্দনাইশ উপজেলার দিয়ারকুল এলাকার সিরাজুল হকের ছেলে মোহাম্মদ হাছান এবং সাতকানিয়া উপজেলার জনারকেউচিয়া এলাকার হারুনুর রশিদের ছেলে ইয়াছিন আরাফাত।
এদের মধ্যে আফসার আলী ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন মর্মে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এদিকে মাইকেল মহাজন ও মোহাম্মদ হাছান বিকাশে ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন।
জবানবন্দিতে আসামিরা নূর উদ্দিনের পরিবারের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও অপহরণের ঘটনায় জড়িন নেই বলে আদালতে জানায়। তাঁরা প্রতারণার উদ্দেশ্যে অপহৃত পরিবারকে ফোন দিয়ে টাকা দাবি করেছিলেন।
এম/এস