হরিলুট চলছে লামায় উন্নয়ন বোর্ডের ৮টি সেচ ড্রেন নির্মাণ কাজে নেই তদারকি, নিম্নমানের মালামাল ব্যবহার, অব্যবস্থাপনা, ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি, গণমাধ্যমকে তথ্য না দেওয়া, তড়িগড়ি করে যেনতেন ভাবে লামা উপজেলায় নির্মাণ হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে প্রায় ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮টি আরসিসি সেচ ড্রেনের নির্মাণ কাজ। এই যেন নামমাত্র প্রকল্প দেখিয়ে সরকারি কোটি কোটি টাকা তসরুপ করার মহাযজ্ঞ চলছে।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে লামা পৌরসভায় ২টি (কলিঙ্গাবিল ও সাবেক বিলছড়ি), রূপসীপাড়া ইউনিয়নে ৩টি (ইব্রাহিম লিডার পাড়া, মাষ্টার পাড়া ও পূর্ব শিলেরতুয়া), লামা সদর ইউনিয়নে ১টি (মেরাখোলা), ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে ২টি (বনপুর বাজার ও বগাইছড়ি) সেচ ড্রেনের নির্মাণ কাজ চলছে। প্রতিটি ড্রেনের গড়ে বরাদ্দ প্রায় ১ কোটি টাকা। নির্মাণাধীন এইসব প্রকল্পের কোন তথ্য দেয়না বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। তাই সঠিক কোন তথ্য উল্লেখ করা সম্ভব হয়নি। উন্নয়ন তথ্য সম্পূর্ণ গোপন রেখে যেনতেন ভাবে পছন্দের ঠিকাদারদের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে এইসব প্রকল্প।
রূপসীপাড়া ইউনিয়নের ইব্রাহিম লিডার পাড়া ও লামা পৌরসভার কলিঙ্গাবিল এলাকার প্রকল্পের সুবিধাভোগী পর্যায়ের লোকজন নাম প্রকাশ না করা সত্তে¡ বলেন, ড্রেন নির্মাণে নিয়ম মেনে রড বাধা হচ্ছেনা। ড্রেন গুলো নির্মাণ কাজে উন্নয়ন সংস্থার কোন ধরনের তদারকি নেই। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ঠিকাদার ও মিস্ত্রিরা যেনতেন ও নিম্নমানের কাজ করছে। ৪/৫ সুতা রডের পরিবর্তে আড়াই-তিন সুতা রড দিয়ে ঢালাই করছে। কয়েক সারিতে রড না দিয়ে ঢালাই করে ফেলেছে। রাস্তার উপরে ধূলাবালিতে ময়লাযুক্ত বালু, নিম্নমানের সিমেন্ট ও কংকর দিয়ে মিশ্রণ করে ঢালাই দেয়া হয়। একদিকে কাজ করে না যেতেই অন্যদিকে ভেঙ্গে যাচ্ছে। মিস্ত্রিদের স্টিমিট ও ডিজাইন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন, ঠিকাদার যেভাবে দেখিয়ে দিয়েছে সেভাবে কাজ করা হচ্ছে।
কলিঙ্গাবিল সেচ ড্রেন প্রকল্পের ঠিকাদার সিন্ডিকেটের সদস্য মিন্টু দাশ বলেন, নিউজ করা দরকার নাই, আপনাদের সাথে সমন্বয় করা হবে। অনিয়ম ও সমস্যা গুলো ঠিক করা হবে।
নাম প্রকাশ না করা সত্ত্বে এক লামার ঠিকাদার বলেন, যে ড্রেন কয়েকবছর আগে আড়াই লক্ষ টাকা দিয়ে করেছি, সেই ড্রেন করা হচ্ছে কোটি টাকা দিয়ে। ড্রেন গুলো নির্মাণে প্রয়োজনের তুলনায় ২/৩ গুণ বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। উন্নয়নকে পুঁজি করে নামমাত্র প্রকল্প দিয়ে সরকারি কোটি কোটি টাকা উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বরত লোকজন ও ঠিকদাররা ভাগবাটোয়ারা করে আত্মসাতের মহোৎসব চলছে। চিহ্নিত ও নির্দিষ্ট কয়েকজন পছন্দের ঠিকাদার এইসব প্রকল্প গুলোর কাজ করছে। প্রকল্প গুলো অন্য একটি উন্নয়ন সংস্থা বা দুদকের মাধ্যমে তদন্ত করলে থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে।
উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর শুক্কুর বলেন, আমার গ্রামেও একটি সেচ ড্রেনের কাজ হচ্ছে। দায়সারাভাবে কাজ করে সরকারি টাকা আত্মসাতের চেষ্টা চলছে। কোটি টাকা কাজে কোন তদারকি নেই !
এই বিষয়ে মুঠোফোনে কথা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবানের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ত্রিদীপ কুমার ত্রিপুরার সাথে। তিনি বলেন, যেসব প্রকল্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসবে তা ভেঙ্গে পুণরায় করা হবে।
প্রকল্পের বিষয়ে জানতে বেশ কয়েকবার ফোন করা হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী ও সেচ ড্রেন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আবু বিন মোহাম্মদ ইয়াছির আরাফাত এর মুঠোফোনে। মোবাইলে সংযোগ না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।