রাঙামাটিতে আসন্ন ইউপি নির্বাচনের প্রত্যেক ধাপের আগে ভোট কেন্দ্রসহ নির্বাচনী এলাকাসমূহে নিরাপত্তা বাহিনী বিশেষ করে অস্থায়ীভাবে সেনাক্যাম্প স্থাপন ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য প্রশাসনিকভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনপূর্বক সফলভাবে প্রত্যেক নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য সাংবাদিকদের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগ।
আজ বৃহস্পতিবার (০৪ নভেম্বর) বিকাল ৩টায় রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের উদ্যোগে দলীয় কার্যালয়ে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন-২০২১ইং কে প্রভাবিত করার জন্য রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী তৎপরতা, প্রার্থীদের হত্যা, অপহরণের অপচেষ্টা প্রতিহত ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির দাবিতে ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা আওয়ামী লীগ ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এম.পি।
তিনি আরো জানান, সারা দেশে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শুরু হয়ে গেছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২য় ধাপে আগামী ১১ নভেম্বর ২০২১ থেকে শুরু হতে চলেছে রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি, কাপ্তাই এবং বরকল উপজেলায় ইউপি নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পার্বত্য এলাকার কিছু সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের উপর প্রচন্ডভাবে নিপীড়ন নির্যাতন চালিয়ে আসছে। তাদের পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলা ও আক্রমনে আমাদের বহু নেতাকর্মী হতাহত হয়েছেন। নির্বাচন আসলে তাদের সন্ত্রাসী তৎপরতা আরো বেড়ে যায়। যেমন চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফশীল ঘোষণার পর থেকে তাদের সন্ত্রাসী তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ১৬ অক্টোবর কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী নেথোয়াই মারমাকে গুলি করে হত্যা করে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এভাবে তারা আমাদের নেতাকর্মীদের খুন ও জখম করে চলেছে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, দ্বিতীয় ধাপে অর্থাৎ আগামী ১১ নভেম্বর যেসব ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হবে সেসব এলাকায় অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা তাদের তৎপরতা বাড়িয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় আতংক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে মাঝে মাঝে অনেকটা প্রকাশ্যে অবৈধ অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। তাদের এহেন অপতৎপরতার আসল উদ্দেশ্যেই হচ্ছে তাদের মনোনীত প্রার্থীকে জোরপূর্বক জিতিয়ে দেওয়া। এজন্য আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় প্রার্থী ও নেতা কর্মীদের টার্গেট করে ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও প্রাণ নাশের হুমকী দিচ্ছে। ২য় ধাপসহ আগামী প্রত্যেক নির্বাচনকে জোরপূর্বক তাদের অনুকূলে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে। জেলা আওয়ামীলীগ মনে করে তাদের এ ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন নিশ্চিতভাবে ব্যাহত হবে।
দীপংকর আরো জানান, অবৈধ অস্ত্রধারীদের এসব সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধ করা না গেলে আসন্ন নির্বাচনের নিরপেক্ষতা ও উদ্দেশ্য ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে এবং সন্ত্রাসীরা আরো উৎসাহী হয়ে আগামী সব নির্বাচনে আগের মতো একই পন্থা প্রয়োগ করবে। এতে ভোটাধিকার বঞ্চিত হবে জনগণ, ব্যাহত হবে গণতন্ত্র।
নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে বিগত দু-এক বছর তাদের অপতৎপরতা অনেকটা সংকুচিত হয়েছিল। কিন্তু আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা অধিক শক্তিশালী হয়ে আবার আমাদের নেতাকর্মী ও নিরীহ জনগণকে খুন, জখম এর পাশাপাশি প্রাণনাশের হুমকী, নির্যাতন, ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে আতংক সৃষ্টি করে নির্বাচনে তাদের প্রার্থীদের জেতানোর জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
সারা দেশে নিরাপত্তা বাহিনী সন্ত্রাস ও নাশকতা দমনে সফলতা দেখাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে অবৈধ অস্ত্রধারীদের সন্ত্রাস কিছুটা কমে এসেছে, এজন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান জেলা আওয়ামীলীগ। কিন্তু আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে ষড়যন্ত্রকারীদের সন্ত্রাসী তৎপরতা আবার বৃদ্ধি পেয়েছে। আসন্ন নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহনযোগ্য করার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর চলমান অভিযান আরো জোরদার করা আহব্বান জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
এসময় রঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি রুহুল আমিন, হাজী কামাল উদ্দিন, বৃষ কেতু চাকমা, সাধারণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ মুছা মাতব্বর, দপ্তর সম্পাদক রফিক তালুকদার, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদ অভয় প্রকাশ চাকমা, জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ফিরোজা বেগম চিনু, কৃষক লীগের সভাপতি জাহিদ আক্তারসহ বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।