স্টাফ রিপোর্টার:: ১৬ই ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে বীর শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ (পিসিএনপি) ও এর সহযোগী সংগঠনসমূহ। এই বিশেষ দিনটি স্মরণে পিসিএনপি বান্দরবান জেলা, ছাত্র পরিষদ, যুব পরিষদ ও মহিলা পরিষদের নেতৃবৃন্দ বান্দরবানের মেঘলায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রত্যুষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সকাল ১১:০০টায় ইসলামপুরের মুসাফির পার্কস্থ জেলা কার্যালয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এই আলোচনা সভা থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজমান অস্থিরতা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং অঞ্চলটিতে শান্তি ও সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনতে কঠোর পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
পিসিএনপি’র পৌর সভাপতি শামচুল হক সামুর সভাপতিত্বে এবং জেলা পিসিএনপি’র সহসাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহজালাল (জালাল)-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিসিএনপি’র কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান কাজী মোঃ মজিবর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিএইচটি সম্প্রীতি জোটের আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার থোয়াইচিং মং শাক এবং সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোস্তফা আল ইহযায।
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পিসিএনপি বান্দরবান জেলা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, যুব পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ইবরাহীম, ছাত্র পরিষদ বান্দরবান জেলা সভাপতি মোঃ আসিফ ইকবাল সহ বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিএইচটি সম্প্রীতি জোটের আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার থোয়াইচিং মং শাক পার্বত্য চট্টগ্রামের আইনি কাঠামো নিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধান অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে না; বরং এখনো ১৯০০ সালের ব্রিটিশ শাসনামলের আইনের প্রভাবেই পরিচালিত হচ্ছে।”
তিনি সশস্ত্র সংগঠন, বিশেষ করে জেএসএস ও ইউপিডিএফকে উদ্দেশ্য করে কঠোর ভাষায় বলেন, অস্ত্রকে যেন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের দিকে তাক না করে, বরং দেশ রক্ষার প্রয়োজনে আত্মনিয়োগ করা হয়। তিনি এই সংগঠনগুলোর প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন অবিলম্বে অস্ত্র সমর্পণ করে দেশ ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় এগিয়ে আসে। তার মতে, তবেই এই পার্বত্য জনপদে দীর্ঘদিনের কাঙ্ক্ষিত শান্তি ও সম্প্রীতির সুবাতাস বইবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পিসিএনপি’র কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান কাজী মোঃ মজিবর রহমান মহান বিজয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “মহান বিজয় দিবস আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সংবিধান রক্ষার অঙ্গীকারকে নতুন করে স্মরণ করিয়ে দেয়।” তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী বীর শহীদদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য তিনি সকলকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। একই সাথে, তিনি রাষ্ট্রবিরোধী সব অপচেষ্টা এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম কঠোরভাবে রুখে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্যটি করে তিনি বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ও সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনার জন্য এবং সন্ত্রাসমুক্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম গড়ার লক্ষ্যে প্রয়োজনে আমাদেরকে আবার একটি মুক্তিযুদ্ধ করতে হবে।” তিনি পিসিএনপি এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ আপামর জনসাধারণকে এই কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য সর্বদা সজাগ থাকার নির্দেশ দেন।
আলোচনা সভায় উপস্থিত নেতৃবৃন্দ পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।