মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমায় প্রায় দেড় বছর পর রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সারাদেশের ন্যায় ভোলার চরফ্যাসন উপজেলার দক্ষিণ আইচায় খুলছে স্কুল-কলজগুলো। শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানাতে প্রবেশ পথেই দাঁড়িয়ে ছিলেন শিক্ষকরা। দক্ষিণ আইচার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে ঘুরে দেখা গিয়েছে একই চিত্র। শিক্ষার্থীদের শারীরিক উপস্থিতিতে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনায় আগাম নির্দেশনায় আগে থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের বরণ করতে সাজানো হয়েছে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শ্রেণিকক্ষ। দক্ষিণ আইচা’র অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছিল যেন উৎসবের আমেজ।
রবিবারে দেখা গেছ, সকাল ৮ টা থেকেই চর আইচা ৫৮ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আসতে শুরু করে। প্রবেশ পথে প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিন মাষ্টার স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি তদারকি করে তাদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষার পর স্কুল প্রাঙ্গণে প্রবেশ করান। দক্ষিণ আইচা অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম কলেজ ও চর আইচা হোসানিয়া মাদ্রাসা এবং চর আইচা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ও শিক্ষার্থীদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করিয়ে শিক্ষার্থীদের বরণ করা হয়। দেওয়া হয় মাস্কও। একই ভাবে দক্ষিণ আইচা ক্যাডেট স্কুল এন্ড কলেজ, রাব্বানিয়া আলিম মাদ্রাসা, চরমানিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহ অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানিয়ে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতনতামূলক কথা বলা হয়।
২৫ নং উত্তর চরমানিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কামাল উদ্দিন বলেন, সরকারি ঘোষণা অনুসারে প্রতি কক্ষে ২০ জন শিক্ষার্থীকে জেড আকৃতিতে প্রায় দেড় বছর পর ভেঞ্চে একজন করে বসানো হয়েছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা খুবই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। শ্রেণী পাঠদানের পাশাপাশি করোনায় স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কেও তাদের ধারণা দেওয়া হচ্ছে।শিক্ষার্থীদের সঙ্গে করে বিদ্যালয় আসা কয়েকজন অভিভাবক বলেন, করোনার যে প্রাদুর্ভাব বিশ্ব স্তব্ধ করে দিয়েছিল, ভেবেছিলাম আর বোধহয় সন্তানদের পড়া-লেখা হবে না। কিন্তু প্রায় দেড় বছর পর হলেও ছেলে মেয়েকে আবার স্কুল আঙ্গিনায় উপস্থিত করাতে পেরে আমরা আনন্দিত। উচ্ছ্বসিত আমদের সন্তানরাও। এবং শিক্ষকদেরও দেখলাম উদ্বেলিত। চরকচ্ছপিয়া নীলিমা জ্যাকব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নাছির হোসেন আরিফ বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই স্কুল কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম শিফটে ২০২১ সালের এসএসসি ব্যাচের প্রায় দুইশ শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত ছিল। দ্বিতীয় শিফটে ২০২২ এর ব্যাচ ক্লাস চলছে। দীর্ঘদিন বন্ধের পর প্রথম দিনের ক্লাসে শিক্ষার্থীরা খুবই আনন্দিত।
করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে গেল বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সবধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়। সংক্রমণ কিছুটা কমে আসায় প্রথম ধাপে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলেছে রবিবার থেকে। স্কুল খুলবে বলে তাই আগেভাগেই শ্রেণি, অফিস কক্ষ থেকে শুরু সব কিছু ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আগমন উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিরাজ করে সাজসাজ রব। বিশেষ করে দুই শিফটের স্কুলগুলোতে খুব সকালেই শিক্ষার্থীরা নতুন স্কুল ড্রেস পরে অভিভাবকের হাত ধরে উপস্থিত হয়েছে।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রাথমিকে প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুইটি শ্রেণির পাঠদান অনুষ্ঠিত হবে। সে অনুযায়ী একটি রুটিনও প্রণয়ন করা হয়েছে। রুটিন অনুযায়ী, রবিবার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির সঙ্গে তৃতীয় শ্রেণির ক্লাস অনুষ্ঠিত চলছে। দক্ষিণ আইচা থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি হারুন অর রশিদ বলেন, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তদারকি করতে আগে থেকেই উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা দেওয়া আছে। দক্ষিণ আইচা স্কুলগুলোতে আমরা নিজেরাই নজর রাখছি। যাতে করে কোনো ধরনের ইভটিজিং না হয়।এবং স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সচেতনতামূলক বয়ান দিয়ে বলা আছে। সেভাবেই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমাদের পক্ষ থেকে প্রচারণা চলছে।