সাইফুর রহমান পারভেজ, গোয়ালন্দ রাজবাড়ী: পদ্মা নদীর নাব্য সঙ্কটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছেড়ে আসা মাল বোঝাই জাহাজ। মাঝ নদীতে পন্য খালাস করতে গিয়ে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ডকইয়ার্ড নারায়ণগঞ্জের প্রজেক্টের অধীনে ড্রেজিং হলেও ব্যাহত হচ্ছে ফেরি ও জাহাজ চলাচল।
গুরুত্বপূর্ণ রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া- মানিকগন্জের পাটুরিয়া নৌরুটে নৌযান পানি কম থাকায় ফেরিগুলো সোজাসুজি চলতে পারছে না। সাবধানতা অবলম্বন করে অনেক পথ ঘুরে ভিড়তে হচ্ছে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ার উভয় ঘাটে। এছাড়া চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে ছেড়ে আসা পাবনা-নগরবাড়ী ও সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী বন্দরগামী বিভিন্ন মালামাল সার, ভুট্টা, গম, কয়লা বোঝাই কোস্টার জাহাজগুলো গত কয়েক দিন ধরে পদ্মা যমুনার আরিচা অঞ্চলের হরিরামপুর, আন্ধার মানিক এলাকায় আটকে আছে। আটকে থাকা কার্গোগুলো থেকে ট্রলার ও বাল্কহেডের মাধ্যমে পণ্য খালাস করতে হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের বাড়তি অর্থ ব্যয় হচ্ছে। এবং মাঝ নদীতে তারা ডাকাত আতংকে নির্ঘূম রাত কাটাচ্ছে।
জানাযায়, রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভারি মালামাল পরিবহনের জন্য হিজলা-উলানিয়া হতে মাওয়া পর্যন্ত ১৩২ কিলোমিটার নদীপথ খননে ৪২ লাখ ঘন মিটার মাটি অপসারণে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এই প্রকল্পে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে জরুরি ভিত্তিতে দৌলতদিয়া এবং ধাওয়া পাড়া এলাকায় ২২ অক্টোবর থেকে শুরু করে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মিটার মাটি অপসারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ নৌ বাহিনী নারায়ণগঞ্জ ডক ইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং(ডিইডব্লিউ) নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি খনন কাজ করছে।
বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয়ের খনন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হাছান আহমেদ বলেন, দৌলতদিয়া থেকে পাটুরিয়া নৌপথের প্রায় দুই কিলোমিটার অংশে ১০০ মিটার প্রশস্ত করে নৌবাহিনীর দুটি ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং চলছে। এই নৌরুটে ফেরি চলাচলের জন্য সাধারণত ১২ ফুট গভীরতা পানি থাকা প্রয়োজন। বর্তমানে পানির গভীরতা কম থাকায় ড্রেজিং করে নাব্যতা ধরে রাখার চেষ্টা চলছে
এমভি নাফসান-৩ জাহাজের চালক আব্দুর সবুর খান বলেন, আমরা চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ভূটা বোঝাই করে পাটুরিয়া যাচ্ছিলাম নাব্যতা সংকটে এখানে এসে জাহাজ আটকে যায়, গত ১১ তারিখে এসে প্রথম দুইদিন আমরা এখান থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছি এতে প্রায় সাত/ আটশো লিটার তেল খরচ হয়ে যায়। পরে বের হতে না পেরে এই আন্ধার মানিক মাঝ নদীতে ভূটা খালাস করছি গত পাঁচ সাতদিন ধরে। এখানে যেমন অতিরিক্ত অর্থ ব্যায় হচ্ছে তেমনি ডাকাত আতংকে দিন কাটাতে হচ্ছে আমাদের। কোম্পানি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
দেশবন্ধু -৫ জাহাজের মাষ্টার মোঃ সেলিম বলেন, আমরা সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল ক্লিংকার নিয়ে আসছিলাম চট্টগ্রাম বন্দর থেকে। এখন পানি কম থাকায় জাহাজ আটকে গেছে আমরা গত তিনদিন ধরে এখানে রয়েছি। এখন এখান থেকে পন্য খালাস করছি। এতে কোম্পানির অতিরিক্ত অর্থ খরচ হচ্ছে এছাড়া আমরা এই নদীর মধ্যে খাবার ও পানি সংকটে রয়েছি। এসমস্ত মালামাল চলাচলের জন্য ড্রেজিং চালু রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
দেশবন্ধু -৫ জাহাজের সার্ভেয়ার এক্সিকিউটিভ মইন ইসলাম গণমুক্তি কে বলেন, জাহাজ চলাচলের জন্য এখানে ১৪/১৫ ফুট গভীরতা থাকা প্রয়োজন কিন্তু এখানে মাত্র ১০/১১ ফুট গভীরতা রয়েছে যেকারণে জাহাজ গুলো চলাচল করতে পারছে না বাধ্য হয়ে মাঝ নদীতে পন্য খালাস করতে হচ্ছে। তাছাড়া আমি নিয়মিত এই নৌরুটে নিয়মিত চলাচল করি এই নৌরুটে এখনো পর্যন্ত কোন ড্রেজিং হয় নি।
পদ্মা নদীতে ড্রেজিংয়ের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ নৌবাহিনী ডকইয়ার্ড নারায়ণগঞ্জের প্রজেক্ট অফিসার আব্দুল মান্নান বলেন, ফেরিঘাট এলাকা খনন করতে আমরা বিআইডব্লিউটিএর অধীনে কাজ করছি। খননের আগে তারা জরিপ করেন এবং কোথায় কতটুকু খনন করতে হবে সে নির্দেশনা দেন। বিআইডব্লিউটিএর নির্দেশনা অনুযায়ী ড্রেজিং করা হচ্ছে। নির্দেশনার বাইরে আমরা কিছুই করতে পারি না। করার ক্ষমতাও নেই।
বিআইডব্লিউটিএ দৌলতদিয়া কার্যালয়ের খনন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হাছান আহমেদ বলেন, দৌলতদিয়া থেকে পাটুরিয়া নৌপথের প্রায় দুই কিলোমিটার অংশে ১০০ মিটার প্রশস্ত করে নৌবাহিনীর দুটি ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং চলছে। এই নৌরুটে ফেরি ও জাহাজ চলাচলের জন্য ১২/১৫ফুট গভীরতা পানি থাকা প্রয়োজন। বর্তমানে পানির গভীরতা কম থাকায় ড্রেজিং করে নাব্যতা ধরে রাখার চেষ্টা চলছে।