• শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৩০ অপরাহ্ন
শিরোনাম
খাগড়াছড়িতে বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতার ডাকে ৭২ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ ফেসবুক স্ট্যাটাস কলেজ ছাত্রের, কর্ণফুলী নদীতে মিলল মরদেহ খাগড়াছড়িতে সংঘাতের জেরে সহিংসতা ও নাশকতা রোধে ১৪৪ ধারা জারি রুখতে হবে ষড়যন্ত্র- আলমগীর কবির গোয়ালন্দে অটোরিকশা সহ চোর চক্রের প্রধান আটক জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধে বান্দরবানে জলবায়ু ধর্মঘট রাঙ্গামাটিতে উপজাতি সন্ত্রাসী কতৃক মসজিদে হামলার প্রতিবাদে লংগদুতে বিক্ষোভ মিছিল খাগড়াছড়িতে সহিংস ঘটনায় নিহত ৩- আহত ৯ খাগড়াছড়ির দীঘিনালার লারমা স্কয়ার দুই পক্ষের বিরোধে বাজারে আগুন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, বরকল উপজেলায় কমিটি ঘোষণা রামগড়ে বিজিবি ও পুলিশের যৌথ অভিযানে ভারতীয় পণ্যসহ আটক ২ লক্ষ্মীছড়ি কলেজে শিক্ষক পরিষদ গঠন

পিসিসিপি লংগদু উপজেলার আংশিক কমিটি ঘোষণা

রাঙামাটি প্রতিনিধিঃ / ২৫১ জন পড়েছেন
প্রকাশিত : সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

রাঙামাটি: পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সভাপতি মো. হাবিব আজমের নেতৃত্বাধীন পিসিসিপি রাঙামাটি লংগদু উপজেলা শাখার আংশিক কমিটি গঠন করা হয়েছে।

রোববার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মাইনীমুখ ইউনিয়ন পরিষদ হল রুমে পিসিসিপি লংগদু উপজেলা শাখার বার্ষিক সম্মেলনে সভাপতি মো. সুমন তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক মো. মনির হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. খালিদ রেজার নাম ঘোষনা করে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ পিসিসিপি লংগদু উপজেলা শাখার আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আংশিক কমিটিকে আগামী এক মাসের ভিতর ৭১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো. হাবিব আজম বলেন, বিগত ৩৯ বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চাকমা জনগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামের মোট জনসংখ্যার ২৫%। চাকমা জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষার হার ৭৫% এবং সরকারি কোটা প্রাপ্তির হার ৬৫%। অপর দিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য
১২টি ক্ষুদ্র-নৃ- গোষ্ঠীর মোট জনসংখ্যা পার্বত্য চট্টগ্রামের মোট জনসংখ্যার শতকরা ২৪ ভাগ। চাকমা ব্যতীত অন্য সকল ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর গড় শিক্ষার হার মাত্র শতকরা ৪৫ ভাগ যা চাকমা সম্প্রদায়ের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। একই ভাবে সরকারি কোটা সুবিধার মাত্র ৩৫% চাকমা ব্যতীত অন্যান্য সকল ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠী ভোগ করে যা সম্মিলিত ভাবে চাকমা সম্প্রদায়ের তুলনায় অর্ধেক। আবার সরকারি চাকুরির অধিকাংশ উচ্চপদে চাকমা সম্প্রদায়ের লোকজন আসীন রয়েছে। চাকমা ব্যতীত অন্যান্য ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর উচ্চ শিক্ষার হার তুলনামূলক ভাবে অত্যন্ত কম হওয়ায় এসব সম্প্রদায়ের লোকজন সাধারণত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর চাকুরিতে তুলনামূলক ভাবে অধিকসংখ্যায় বহাল রয়েছে। এ কারণে আর্থ- সামাজিক প্রতিটি ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে চরম বৈষম্য বিরাজমান। পার্বত্য চট্টগ্রামের বসবাসকারী বাঙালি জনগোষ্ঠীর অবস্থা আরও শোচনীয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের মোট জনসংখ্যার ৫১% হলেও পার্বত্য এলাকায় বসবাসকারী বাঙালি জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষার হার মাত্র ২৩% যা বাংলাদেশের সর্বনিম্ন এবং সরকারির চাকরির ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী বাঙালিদের কোটা প্রাপ্তির হার শূণ্য শতাংশ।

তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সকল ক্ষেত্রে শুধুমাত্র একটি সম্প্রদায়ের একচেটিয়া আধিপত্য রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য জেলা পরিষদসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য জেলা পরিষদের অধীনে ন্যস্ত প্রতিটি বিভাগে চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৮০-৯০ ভাগ নিয়োগ ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর লোকজন পেয়ে থাকে। এর মধ্যে সিংহ ভাগ নিয়োগ চাকমা সম্প্রদায়ের লোকজন পেয়ে আসছে। মোট জনসংখ্যার ৫১% হওয়া সত্ত্বেও বাঙালিরা এসব বিভাগে মাত্র ১০-১৫ ভাগ নিয়োগ প্রাপ্ত হয়।

অন্যান্য বক্তারা বলেন, শিক্ষার হার, সরকারি চাকরিতে নিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত সুযোগ সুবিধা, জীবন মানের উন্নয়ন প্রভৃতি সূচক বিবেচনায় বলা যায় বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে অগ্রসর জনগোষ্ঠী হলো চাকমা সম্প্রদায়। এসব সূচক বিবেচনায় একই ভৌগলিক এলাকায় চাকমা সম্প্রদায়ের পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী বাঙালি সম্প্রদায় নিশ্চিত ভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে অনগ্রসর জনগোষ্ঠী। ১৯৮১ সালের পূর্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি জনগোষ্ঠী ছিল সাড়ে চার লক্ষ। ১৯৮১ সালের পর থেকে প্রায় আড়াই লক্ষ বাঙালিকে সমতলের বিভিন্ন জেলা থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকারি খাস জমিতে স্থায়ী বন্দোবস্ত দিয়ে পুনর্বাসন করা হয়। ১৯৮০ সালের ২৫ মার্চ তারিখে পিসিজেএসএস তথা শান্তিবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত কাউখালী গণহত্যা, ১৯৮৪ সালে রাঙ্গামাটির বরকল উপজেলায় সংঘটিত পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসের ভয়াবহতম ভূষণছড়া গণহত্যা, ১৯৮৬ সালের ২৯ এপ্রিল তারিখে সংঘটিত খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইনদং গণহত্যা, ১৯৯৬ সালে রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলায় সংঘটিত পাকুয়াখালী গণহত্যাসহ অসংখ্য ঘটনায় পিসিজেএসএস এর সন্ত্রাসীদের হাতে ৪০ হাজারের অধিক বাঙালি নিহত হয়, অসংখ্য বাঙালি পঙ্গুত্ব বরণ করেন, অসংখ্য পরিবার ধ্বংস হয়ে যায়।

এক পর্যায়ে এসব বাঙালি জনগোষ্ঠীকে তাদের পুনর্বাসিত এলাকাসমূহ হতে গুচ্ছ গ্রামে স্থানান্তর করা হয়। এর পর থেকে দীর্ঘ ৩ যুগ ধরে পুনর্বাসিত বাঙালিরা গুচ্ছগ্রামে বস্তির চেয়েও মানবেতর অবস্থায় বসবাস করে আসছে। ৩ প্রজন্ম ধরে একই বস্তিতে বসবাসকারী এসব বাঙালির একটি বৃহৎ অংশ অদ্যাবধি পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দার সনদও পায়নি। তাদের স্থায়ী বাসিন্দার সনদপত্রের জন্য মৌজা হেডম্যানের সনদপত্র গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু পিসিজেএসএস এবং ইউপিডিএফ অধ্যুষিত এলাকায় বসবাসকারী বাঙালিদের দীর্ঘ দিন ধরে সংশ্লিষ্ট হেডম্যান এই সনদপত্র প্রদান করে না। পার্বত্য চট্টগ্রামে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বসবাস করার পরেও অনেক বাঙালি একারণে তারা সকল ধরনের নাগরিক সুবিধা যেমন উচ্চ শিক্ষা, ব্যাংক ঋণ, বিদেশ গমনের পাসপোর্ট তৈরী সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চরমভাবে হয়রানী ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ লংগদু উপজেলার ১ নং আটারকছাড়া ইউনিয়ন শাখার সভাপতি মো. সুমন তালুকদারের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য রাখেন পিসিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল মাহমুদ, পিসিসিপি লংগদু উপজেলা শাখার সাবেক সভাপতি মো. রকিব হোসেন, পিসিসিপি চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন প্রমুখ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ