এম মহাসিন মিয়া, স্টাফ রিপোর্টার (খাগড়াছড়ি)
শিরোনামটি শুনতে কাকতালীয় হলেও সত্য। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পুরোনো জরাজীর্ণ ১০ শয্যা বিশিষ্ট দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির মেয়াদপূর্ণ হয়েছে অনেক আগেই।
জেলার আয়তনে সবচেয়ে বড় উপজেলা এবং জনসংখ্যার গরিষ্ঠতার কথা বিবেচনা করে পুরনো ১০ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় রুপান্তরের জন্য পরিকল্পনা নেয় সরকার। এমনকি ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির কাজও শুরু হয়। জানাযায় কাজটি করাচ্ছে হেলথ ইঞ্জিনিয়ার ডিপার্টমেন্টের আওতাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান “ম্যাক কন্সটেশন”।
প্রকল্পের মেয়াদ কয়েকবছর আগে শেষ হলেও নানা অজুহাতে একাধিকবার সময় নিয়েও এখন পর্যন্ত ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির কাজ শেষ করতে বা বুঝিয়ে দিতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এদিকে ২ বছরের কাজ ৬ বছরেও শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছে অনেকেই।
এদিকে শয্যা সংকট থাকায় পুরোনো জরাজীর্ণ ১০ শয্যায় রোগীদের ভর্তি ও চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসকরা। দীঘিনালা উপজেলা সহ পাশ্ববর্তী লংগদু ও বাঘাইছড়ি উপজেলার রোগীরা আসলে ভর্তি ও চিকিৎসা দিতে না পারায় সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
সম্প্রতি দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, পুরোনো ১০ শয্যায় ভর্তি পূর্বক চিকিৎসা নিচ্ছে রোগী। শয্যা সংকট থাকায় মেঝেতে বসে বা শুয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে অনেক রোগীদের। বৃষ্টি এলে পুরোনো জরাজীর্ণ টিনের ফুটো দিয়ে জরাজীর্ শয্যাগুলোতে পানি পড়ছে রোগীদের শরীরে। পুরোনো শয্যা জরাজীর্ণ টিনের চালের ঘরে ভালোমতো বিদ্যুত সার্ভিসও নেই। বেড়েছে মশারও প্রকোপ।
চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে প্লাবিত বিভিন্ন এলাকার মানুষের পানি বাহিত রোগ দেয়া দিলে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে ভীড় জমায় রোগীরা। রোগীদের সাথে কথা বলে জানাযায়, অতিরিক্ত শয্যা না থাকায় প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ফেরত যাচ্ছে অনেক রোগী। অনেক রোগীকে প্রেরণ করা হচ্ছে জেলা সদর হাসপাতালে। পরিপূর্ণ স্বাস্থ্য সেবার পরিবেশ না থাকায় মা ও শিশুদের জন্য অনিরাপদে পরিণত হয়েছে জরাজীর্ণ এ হাসপাতাল। যদিও নিরুপায় চিকিৎসক ও কতৃপক্ষ।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কতৃক কবে নাগাদ ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের কাজ শেষ বা ভবনগুলো বুঝিয়ে দেয়া হবে তা জানা নেই কারো। এভাবেই নিশ্চয়তা-অনিশ্চয়তায় মধ্যে চলছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সাধারণ ভুক্তভোগী রোগীদের চিকিৎসা সেবা।
সংশ্লিষ্টদের মতে, কাজের মেয়াদ কয়েকবছর আগে শেষ হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারনেই বিভিন্ন অজুহাতে পিছিয়ে আছে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাজ। যেকারণে দীঘিনালা এবং পাশ্ববর্তী লংগদু ও বাঘাইছড়ি উপজেলা থেকে ভর্তি ও চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের ভোগান্তি ও বিঘ্নতা ঘটছে। সংশ্লিষ্টরা এও মনে করেন যে, যতো দ্রুত সম্ভব ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাজটি শেষ করে বুঝিয়ে দিলেই মানসম্মত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত হবে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান কর্মকর্তা ডা. তনয় তালুকদার জানান, কাজের মেয়াদ শেষ হবার পরও একাধিকবার সময় বাড়িয়ে নিয়েও ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাজ শেষ বা বুঝিয়ে দিতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এদিকে শয্যা সংকটে অতিরিক্ত রোগীদের চাপে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। নতুন কমপ্লেক্স বুঝে পেলেই মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি বা ইঞ্জিনিয়ারের সাথে যোগাযোগ সম্ভব না হলেও প্রকল্পটির তত্বাবধায়ক মো. মেহেদী হাসান জানান, তৎকালীন কোভিড-১৯ সমস্যাসহ নানা কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজটি সম্পূর্ণ হয়নি। এরমধ্যে একাধিকবার সময়ও নেয়া হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে অবগত করা হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে এ প্রকল্পের বিষয়ে আলোচনা হবার কথা রয়েছে। সেটা হলেই কাজটি দ্রুত শেষ করে বুঝিয়ে দেয়া সম্ভব হবে।