ছোটন বিশ্বাস, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি।। বিশ্বে সাইক্লিস্ট এর তালিকায় নিজের নাম তুলতে এবং সাইক্লিস্ট হওয়ার নেশায় চাকুরি ছেড়ে রংপুরের ছেলে রাকিবুল ইসলাম এখন খাগড়াছড়ি। রাকিবুল পেশায় ছিলেন একজন ফার্মাসিস্ট। ঢাকা এভারকেয়ার হাসপাতালে ভালো বেতনে কাজ করতেন রাকিবুল। পড়ালেখায় ভালো ছাত্র ছিলেন জানা যায় রাকিবুল। ক্লাসে ১০ জনের মধ্যে একজন ছিলো থাকতো রাকিবুল। পড়া-লেখায় ভালো থাকায় বাবা-মা’ ইচ্ছে সর্বকনিষ্ঠ সন্তানকে চেষ্টা করে উচ্চ শিক্ষিত করবেন। ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্বিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে স্নাতক এবং সার্ক স্কলারশিপ নিয়ে দিল্লির সাউথ এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়েটেকনোলজিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
ছোট বেলা থেকেই অন্যান্য খেলাধুলার মধ্যে সাইকেল নিয়ে দৌঁড়াতে পছন্দ করতেন রাকিবুল। সেই নেশা আস্তে আস্তে রূপ নিতে থাকে জীবনের লক্ষ্য হিসেবে।
তাই ফার্মাসিস্ট রাকিবুল ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালের এর চাকুরি ছেড়ে সাইক্লিং অনুশীলনের জন্য চলে আসেন খাগড়াছড়িতে। প্রায় তিন বছর ধরে খাগড়াছড়ির উঁচু পাহাড় আলুটিলার তাড়েং সহ এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে সাইকেল নিয়ে আরোহন করে অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
শুরুতেই এই রকম কঠোর সিদ্ধান্ত পরিবার মেনে নেয়নি। আমি আমার আর্থিক খরচ মেটাতে অনলাইন এবং অপলাইন সাইক্লিং ট্রেনিং ব্যবস্থা চালু রেখেছি। এবং আমার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আর আমার সাহসিকতার আরো মাত্রা বৃদ্ধি আর সাহস যুগাতে সহযোগীতা করছেন আমার স্ত্রী। দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবসময় আমার অনুশীলনে সঙ্গী হিসেবে সাথে থেকে সহযোগীতা করছেন সবসময়।
স্ত্রী শারমিন করিম ক্যামি জানান, রাকিব কঠোর পরিশ্রমী। ফজরের ওয়াক্ত থেকে আমাদের সকালটা শুরু হয়। তারপর হালকা নাস্তার পর রাকিব ২/৩ ঘন্টা অনুশীলনে বেড়িয়ে পরে। অনুশীলন শেষে বাসায় ফিরে কিছু খেয়ে আবার অনলাইন ট্রেনিং বসে পরে। আবার বিকেল এ আরেক বার সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পরে। আবার বাসায় ফিরে অনলাইন ট্রেনিং দিতে বসে। আর আমি সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করি রাকিব এর খাওয়া-দাওয়া ঠিক রাখতে। রাকিব কঠোর পরিশ্রমী মেধাবী একজন ছেলে। সে অন্যান্য ছেলেদের মতো মোবাইল আর গেমস্ নিয়ে পড়ে না থেকে তার অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা দাম্পত্য জীবনে অনেক সুখে আছি। আমি রাকিবুল’কে নিয়ে গর্ব বোধ করি। তার ইচ্ছে সে ২০২৫ সালে পাকস্তিানে অনুষ্ঠিতব্য সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসে ডুয়াথলন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে এবং দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনবে।
সাইক্লিস্ট রাকিবুল ইসলাম জানান, এবার এক ভিন্ন রকম উচ্চতায় ওঠার রেকর্ডে বাংলাদশেকে তালকিাভুক্ত করার চেষ্টা করছি । পাহাড় আরোহণের ভাষায় একে বলে ‘হাফ এভারেস্টিং বা এভারেস্টের বেইজ ক্যাম্প র্পযন্ত উচ্চতায় সাইক্লিং করে ওঠা। আর পাহাড়ে অনুশীলন করার যতেষ্ট সময় পাওয়া যায়। তাই আমি পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িকে বেছে নিয়েছি। ঢাকাতে সাধারণত সকাল ৯টার পর অনশীলন করার সুযোগ থাকে না। কর্ম ব্যস্থ শহরে মানুষের পদ চারণা আর গাড়ীর কোলাহলে অনুশীলন করার সুযোগ থাকে না। তাই মূলত সবুজ অরণ্যে ঘেরা আর উঁচু-নিচু পাহাড় বেষ্টীত খাগড়াছড়িকে আমার বেছে নেওয়া।
রাকিবুল আরোও জানান, বাংলাদেশ থেকে এখন র্পযন্ত কেউই এই রেকর্ডের আনুষ্ঠানিক চেষ্টা করনেনি। তিনিই প্রথম এই রেকর্ডের জন্য অফিসিয়ালি অ্যাটেম্প নিলেন। এর আগে নেপাল থেকে একজন এবং ভারত থেকে বেশ কয়কেজন এই রেকর্ড করেছেন।
কোনো র্অজনই রাকিবুলের সহজ ছিলো না। এর আগে যখন সাইক্লিং এ গিনেজ রেকর্ড করনে, তখনো বৈরী আবহাওয়া ছিল। গত বছর যখন রাকিব ডুয়াথলনের বিশ্ব আসরে অংশ নিতে যান, তখনো প্রথম প্রচষ্টোয় ভিসা পাননি তিনি। পাহাড়ে অনুশীলনের জন্য যখন বের হই, মাঝের মধ্যে বিভিন্ন প্রতিকূলতার সম্মূখীন হতে হয় আমাকে। একদিন যখন সকালে সাইকেল নিয়ে পাহাড়ে আরোহণ শুরু করি তখন হঠাৎ করে শুরু হয় তুমুল বৃষ্টি সঙ্গে পাহাড় ধস। এরকম আরো অনেক গল্প রয়েছে রাকিবুলের জীবনে।
তবে কোনো বাধাই রাকিবকে আটকাতে পারেনি। প্রবল ইচ্ছা শক্তি সমস্ত প্রতিকূলতাকে উপক্ষো করে রাকিবুল নিজের লক্ষ্যের দিকে ছুটে চলেছেন অবিরাম। বাংলাদশেরে জন্য একটি সম্মান জনক শিরোপা এবং সাইক্লিং এ বাংলাদেশের নাম যুক্ত করার আশা ব্যক্ত করেন রাকিবুল।
এ জন্য আমি প্রতিনিয়ত সকাল বিকাল দুই টাইম অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছি। এর মধ্যে এক, দুই করে মোট ১৮ বার সাইক্লিং করে খাগড়াছড়ি জিরোমাইল থেকে ‘তাড়েং’ (সমতল থেকে ২৬০ মিটার উঁচু) পাহাড়ে ওঠানামা করেন।
কেন এমন প্রচেষ্টা জানতে চাইলে রাকিবুল বলনে, ‘বিশ্বে সাইক্লিংয়ের আত্মমর্যাদার যে লড়াই সেখানে বাংলাদশে অনেক পিছিয়ে। এই ধরনরে প্রতিযোগতিায় বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণ অনেক কম। সে কারণেই আমার এই প্রচষ্টো।’
খাগড়াছড়িকে বেছে নেওয়ার কারণ জান্তে চাইলে রাকিবুল বলেন, পাহাড়ের মানুষ সাধারণত অনেক পরিশ্রমী। সকাল থেকে সন্ধ্যা র্পযন্ত তারা একটানা কাজ। অনেকে ভারী বোঝা নিয়ে পাহাড়ে ওঠানামা করে। তাদেরকে দেখেই আমি অনুপ্রাণতি হয়েছি ।
রাকবিুল ২০২১ সালে বাংলাদশে গেমসে স্বর্ণ পদক পেয়েছেন। ২০২২ সালে তিনি জাতীয় সাইক্লিং প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন। একই বছরে তিনি মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত পাওয়ারম্যান ডুয়াথলন (সাইক্লিং ও রানিং) এশয়িা চ্যাম্পয়িনশিপে বয়সভিত্তিক প্রতিযোগতিায় চ্যাম্পিয়ন হন। এরপর ২০২৩ সালে সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ডুয়াথলন চ্যাম্পিয়নশিপে বয়সভিত্তিক ক্যাটাগরিতে পঞ্চম স্থান অধকিার করনে।
এবং ২০২৫ সালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসে ডুয়াথলন প্রতিযোগতিায় বাংলাদশেকে একটি সম্মান জনক মর্যাদার পুরষ্কার এনে দিতে চান বলে জানান রাকিবুল।