নিজস্ব প্রতিবেদক
গুইমারা উপজেলায় দীর্ঘ হচ্ছে রোহিঙ্গা ভোটারের তালিকা। ২নং হাফছড়ি ইউপির ৬নং বড়পিলাক ওয়ার্ডে একই পরিবারের ৯ রোহিঙ্গার নামে জন্মনিবন্ধন ও বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ছয়জনের পরিচয় প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করেছেন এলাকাবাসী। অভিযোগ আছে সংশ্লিষ্ট এলাকার মেম্বার ও চেয়ারম্যান রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করছেন বলে জানা যায়, রোহিঙ্গা যুবক মো. মাতালম বড়পিলাকে আসেন তার স্ত্রীর ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ির সুবাদে। তার নাম মো. শামসু মণ্ডল, এনআইডি নং-৮৬৮৮৭৬২৫৩৬। অভিযোগ আছে, শামসু মণ্ডল পরিচয় গোপন করে অন্যজনকে পিতামাতা বানিয়ে ভোটার হয়েছেন। এনআইডিতে পিতার নাম মো. দুলাল মিয়া, মাতার নাম হাজেরা বেগম। মূলত মো. শামসু মণ্ডলের আসল পিতামাতার নাম মো. আবদুুল মালেক, এনআইডি নং-৪২০১৬৯৩৫৪৮, মাতার নাম মোছা. আম্বিয়া খাতুন, এনআইডি নং-৯১৫১৬৬৫৯৪১।
আটককৃত যুবকের স্ত্রীর নাম দিলারা বেগম, এনআইডি নং-২৮৫৬২৩৬৭৯৫।হালনাগাদ ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। মো. জাফর আলম, এনআইডি নং-১৯৭৪১৫৪৮০৭। তার পিতার নাম মো. আবদুুল মালেক, এনআইডি নং-৪৬০৬০৮০০০৪৫২, মাতা মোছা. আম্বিয়া খাতুন এনআইডি নং-৪৬০৬০৮০০০৪৬১।
মো. শামসু মণ্ডলের স্ত্রী সবুজ আক্তার স্বীকার করেন, মো. শামসু মণ্ডল যখন প্রবাসে ছিল, তখন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে জন্মনিবন্ধন করা হয়েছে স্থানীয় একটি চক্রের মাধ্যমে। তার পরিচয় বলতে অপরগতা প্রকাশ করেন তিনি। রোহিঙ্গা যুবক মো. শামসু মণ্ডল নিজেকে ও তার পরিবারের সবাইকে রোহিঙ্গা বলে স্বীকার করেন। এবং হালনাগাদ ভোটার তালিকায় মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তার ছোটভাই জাফর আলম ও পরিবারের ভোটার তালিকাভুক্তি এবং দুজনের পাসপোর্ট করার কথাও স্বীকার করেন।
হাফছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মংশে চৌধুরী, জন্ম নিবন্ধনের ব্যাপারে বলেন, স্থানীয় মেম্বার সুপারিশ ও যথাযথ কাগজপত্র যাচাই করেই জন্মনিবন্ধন সনদ দেওয়া হয়। যাচাই করার দায়িত্ব মেম্বারের। তার পরও রোহিঙ্গা জন্মনিবন্ধনের ব্যাপারে আমরা সচেতন। যাতে করে নতুন করে কেউ জন্মনিবন্ধন করতে না পারে।
গুইমারা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা- রাজিব চৌধুরী বলেন, স্থানীয় মেম্বার ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের প্রত্যয়ন ও জন্মনিবন্ধন ছাড়া ভোটার হওয়া সম্ভব নয়। চেয়ারম্যান-মেম্বার চূড়ান্ত করলেই আমরা ভোটার তালিকাভুক্তি করি। তারা সহযোগিতা না করলে রোহিঙ্গারা ভোটার হতে পারত না।
উল্লেখ্য, গত ৯ মার্চ খাগড়াছড়িতে পাসপোর্ট করতে এসে এক রোহিঙ্গা যুবক আটক হওয়ার ঘটনায় রোহিঙ্গা ভোটারের তথ্য সামনে আসে। পরের দিন অর্থাৎ ১০ মার্চ আটক ওই রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি মামলা করে পুলিশ। জানা যায়, আত্মীয়তার সুবাদে স্থানীয় মেম্বারের সহযোগিতায় ২০১৪ সাল থেকে জন্মনিবন্ধন জালিয়াতি করে রোহিঙ্গাদের ভোটার করা হচ্ছে। আটক রোহিঙ্গা যুবক মো. মাতালমকে আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক। বিষয়টি তদন্তে দুদককে অনুসন্ধানের আদেশ দেন। একই সঙ্গে জন্মনিবন্ধন ও ভোটার আইডি সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে মামলায় সম্পৃক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে স্থানীয় তদন্তের মাধ্যমে উক্ত মামলায় সংশ্লিষ্ট ২নং হাফছড়ি ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান, উশ্যেপ্রু মারমা ২নং হাফছড়ি ইউপি সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক ইউপি সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম, ইউপি উদ্যোক্তা মো.আরমান হোসাইনকে বিবাদী করে অত্র মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।