ইব্রাহীম বাঘাইছড়ি প্রতিনিধি :-
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার আমতলী উচ্চ বিদ্যালয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা উপেক্ষা ও অনিয়ম করে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে।
আমতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকসহ একটি প্রভাবশালী মহল গঠনতন্ত্র উপেক্ষা এবং আইন লংঘন করে পছন্দের লোকজন দ্বারা একটি পকেট কমিটি গঠন করেছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর । এ নিয়ে আমতলী এলাকাবাসী শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
পকেট কমিটি গঠনের পর থেকে বিদ্যালয়ের অভিভাবকরা তা অবিলম্বে বাতিল করে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আমতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা এডহক কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পূর্বে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড থেকে কমিটি গঠনের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিদ্যালয়ের কমিটি গঠনের নির্দেশনা থাকলেও বোর্ডের নির্দেশনা গোপন রেখে, নির্বাচনের বিধান ভঙ্গ করে, তফসিল মনোনয়ন এবং নির্বাচনের সার্বিক বিধান অমান্য করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পরিমল মন্ডল আমতলী এলাকার একটি প্রভাবশালী মহলকে নিয়ে গোপনে একটি পকেট কমিটি গঠন করে বোর্ডে জমা দেন। কমিটি গঠনের পর দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি গোপন রাখেন।
এডহক কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আক্তার গত ৯ অক্টোবর স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে জানতে পারেন নতুন কমিটি গঠনের কথা, তখই প্রকাশ হয় কমিটির সভাপতি সুলতান আহমেদ মাস্টার, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরী, ইউনিয়ন আওয়ামিলীগের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন, ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম শিক্ষক প্রতিনিধি সহ মোট ১০ জনের কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি জানার পর থেকে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এলাকাবাসীর দাবী বাঘাইছড়ি উপজেলার একসময়ের সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমতলী উচ্চ বিদ্যালয়, এই স্কুলের কমিটি গঠন নিয়ে সব সময় স্থানীয়দের আগ্রহ থাকে কিন্তু এবার কমিটি গঠন হওয়া নিয়ে স্থানীয় জনগণ, অভিভাবক, ছাত্র-ছাত্রী, জনপ্রতিনিধি কেওই কিচ্ছু জানে না, শুধু জানে যারা কমিটির সদস্য তারাই যার ফলে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলো না তারা নিজেরাই কমিটি গঠন করেছে।
আমতলী উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচন ২০২৩ এর প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জয়াস চাকমা, তার কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয় প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব দেন আমি চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচন বিধিমালা অনুযায়ী ৩০ জুলাই তফসিল ঘোষণা করেছি, তফসিল টি প্রচার প্রচারণার জন্য স্কুলের প্রধান শিক্ষককে মৌখিক এবং লিখিত ভাবে নির্দেশনা দিয়েছি। তিনি আরো বলেন প্রচারনার জন্য আমার নির্দেশনা ছিলো স্কুলের বোর্ডে নোটিশ টানানো, এসেম্বলিতে টানা ৩ দিন বিষয়টি ছাত্রছাত্রীদের জানানো, ক্লাসে শ্রেণী শিক্ষকদের দ্বারা জানানো এবং বহুল প্রচারের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
নির্ধারিত সময় শেষে প্রধান শিক্ষক জানান কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নেই তাই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। ২০ আগস্ট স্কুলে সাধারণ সভার মাধ্যমে কমিটি গঠন করে বোর্ডে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়, কিন্তু কখন কমিটি অনুমোদিত হয়েছে এব্যাপারে আমার কাছে লিখিত কোন নথি আসেনি বলে জানান জয়াস চাকমা।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পরিমল মন্ডলকে নির্বাচন তফসিল ঘোষণার প্রচারনার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমি ছাত্র-ছাত্রীদের কে জানিয়েছি কমিটি গঠনের ব্যাপারে যেন তারা তাদের অভিভাবকদের জানায় এবং বোর্ডে নোটিশ টানানো হয়।
স্কুলের ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের শ্রেণীকক্ষে গিয়ে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির বিষয়ে তারা জানে কিনা জিজ্ঞাসা করলে সকলে বলে তারা জানে না এবং কোন শিক্ষক তাদের জানায়নি বিষয়টি।
এডহক কমিটির সদস্য মো আব্দুল কুদ্দুস বলেন আমি এডহক কমিটির সদস্য এবং নিয়মিত স্কুলে যাতায়াত ছিলো কিন্তু কখন কিভাবে কমিটি গঠন হয়েছে আমি সহ অভিভাবকরা কিছুই জানে না।
বর্তমান কমিটির সভাপতি সুলতান আহমেদ কমিটিতে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়ে সভাপতি হোন এই বিষয়েও এলাকাবাসীর আপত্তি রয়েছে এর আগে কোন কমিটিতে তিনি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন না সাধারণ সদস্য হিসেবে ছিলেন।
সুলতান আহমেদ বলেন, স্কুলের লেখা পড়ার মান উন্নয়নের জন্য দায়িত্ব নিয়েছি যদি আমার চেয়ে ভালো কেও থাকে তার জন্য আমি দায়িত্ব ছেড়ে দিতে প্রস্তুত আছি।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মজিবর রহমান বলেন গত ৫ মাস যাবৎ আমি স্কুলের উন্নয়ন কাজের জন্য ইউ এন ও মহোদয়ের সহযোগিতা নিয়ে কাজ করছি এরমধ্যে কমিটি গঠনের বিষয়ের প্রধান শিক্ষক সহ কমিটির কেও আমাকে জানায়নি বা আমি জানতে পারিনি।