* গত তিন মাসে চারা বিক্রি করেছেন প্রায় সাড়ে ৪ লাখ।
* বিক্রি করেন ফলজ, বনজ ও ঔষধি চারা ।
* জনকল্যাণমুখি পেশা হলেও নেই সরকারি পৃষ্টপোষকতা।
পুরো নাম ছালে আহমদ। পেশায় একজন মৌসুমী চারা বিক্রেতা। বর্ষাকালে চারা লাগানো সময়ে অন্যকাজ ছেড়ে করেন চারা বিক্রির কাজ। সপ্তাহের সাতদিনই বান্দরবানের লামা বাজারে প্রধান সড়কের পাশে (কৃষি ব্যাংকের সামনে) বসে চারা বিক্রি করেন। লামা পৌরসভার মধুঝিরি এলাকায় রয়েছে নিজস্ব নার্সারি ‘মেসার্স মাশাল্লাহ নার্সারি’। কাকডাকা ভোরে ভ্যানে করে নার্সারি থেকে চারা এনে রাস্তার পাশে ফুটপাতে সাজিয়ে বসেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বেচাবিক্রি। শখের বসে শুরু করলেও এখন পেশা হিসাবে নিয়েছে এইকাজ। চারা বিক্রির পাশাপাশি ক্রেতাদের কিভাবে চারা লাগাবে বা কখন কোন চারা লাগাবে দেন তার পরামর্শ। একাডেমিক লেখাপড়া না থাকলেও করতে করতে চারারোপন ও পরিচর্যার বিষয়ে সে অনেক পারদর্শী।
চায়ের আড্ডায় কথা হয় লামা বাজারের চারা ব্যবসায়ী ছালে আহমদ (৩৫) এর সাথে। সে লামা পৌরসভার মিশনঘাট গ্রামের মৃত মোঃ শাহ আলমের ছেলে। তিনি বলেন, সবুজ ভালোবাসে না, এমন মানুষ হয়তো পাওয়া যাবে না। সে কারণে প্রকৃতি ও সৌন্দর্যপিয়াসী প্রত্যেক মানুষ তাঁদের বাড়ির আঙিনা, বাড়ির ছাদে বা নিজস্ব জমিতে গাছের চারা লাগাতে ভালোবাসেন। যাদের জায়গা বেশি তারা বাণিজ্যিকভাবে গাছ লাগান। যাদের জায়গা কম তারা বাড়ির আঙিনার আশপাশে বা ছাদে চারা লাগান। কেউবা আবার টবে লাগিয়ে বাড়ির ছাদ বা বারান্দায় রাখেন।
আরো বলেন, সপ্তাহের সাতদিনই চারা বিক্রি করি। তবে শনিবার ও মঙ্গলবার লামা বাজারের হাটের দিনে বেশি চারা বিক্রি হয়ে থাকে। হাটের দিনে গড়ে ৮/১০ হাজার ফলজ, বনজ ও ঔষধি চারা বিক্রি করি। অন্যান্য দিন ৩/৪ হাজার চারা বিক্রি হয়। দৈনিক বিক্রির হিসাবের খাতা দেখে বলেন, এই মৌসুমে (তিন মাসে) প্রায় ৪ লাঘ ৭৫ হাজার চারা বিক্রি হয়েছে। বেশিরভাগ মানুষ বনজ গাছের চারা নেয়। তবে এখন মানুষ ফলজ চারাও কিনছে। তার এই কাজের আরো একজন পার্টনার রয়েছে। বর্ষাকাল চলে গেলে অন্য পেশায় কাজ করি। এখন চারা বিক্রি করেই চলছে সংসার। তবে আক্ষেপ করে বলেন, গাছ পরিবেশের জন্য অন্যতম সহযোগি। আমরা গাছ লাগাতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করি। অথচ সরকারি কোন সাহায্য সহায়তা আমরা পাইনা। বৃক্ষরোপনের পুরষ্কার পায় অন্যরা।
আমার নার্সারিতে ফলজ জাতের মধ্যে নারিকেল, সুপারি, আম, আমঁড়া, লিচু, বরই, মাল্টা, সফেদা, আমলকী, চায়না কমলা, দেশী কমলা, বেলুম্বো, কামরাঙ্গা, কাঁঠাল, জলপাই, লেবু, খেজুর, কাটবাদাম, তেতুল, ড্রাগন, রামবুটান, আঙ্কুর, ট্যাং ফল, পেয়ারা, জাম্বুরা, থাই জাম্বুরা, শফেদা, শরিফা, ঔষধি জাতের মধ্যে- তেজপাতা, অর্জুন, বয়েরা, হরতকি, নিম, বনজ জাতের মধ্যে- একাশি, বেলজিয়াম, সেগুন, ম্যালেরিয়া, মেহগনি, আকাশমনি, গামারি চারা রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ফুলের চারাও বিক্রি করি। স্কুল কলেজের ছেলে-মেয়েরা ফুলের চারা বেশি ক্রয় করে।
তার মতো আরো দুইজন ব্যবসায়ী লামা বাজারে গাছের চারা বিক্রি করেন। তারা হলেন, লামা উপজেলা পরিষদের সামনের তাপস দাশ (৬০) ও মনির হোসেন (৪৫)। তাপস দাশ লামা পৌরসভার হরিণঝিরি এলাকার মোঃ নুরুজ্জামান এর সায়মন নার্সারি হতে চারা এনে বিক্রি করেন। অপর দিকে মোঃ মনির নিজের নার্সারি বা কখনো কখনো বাহির থেকে চানা কিনে এনে বিক্রি করেন। তারা পরিবেশবান্ধব এই কাজে সরকারি সহযোগিতা করার কথা বলেন।
লামা বন বিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা একেএম আতা এলাহি বলেন, প্রতিবছরই বৃক্ষরোপনের বন বিভাগ অনেককে সহায়তা করে। চারা ব্যবসায়ীদের সহায়তার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলব। এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি অনেক সংস্থা বৃক্ষরোপন আন্দোলনের সাথে জড়িত লোকজনকে পুরষ্কৃত করেন। ওইসব সংস্থার বৃক্ষরোপন আন্দোলনের এইসব নিরব সারথিদের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন।