লামার ইতিহাসে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা ও পাহাড়ধসে পৌর এলাকার ক্ষয়ক্ষতি এবং বন্যা পরবর্তী সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন পৌরসভার মেয়র মোঃ জহিরুল ইসলাম। শনিবার (১৯ আগস্ট) বিকেল ৩টায় লামা প্রেসক্লাবের হলরুমে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময়ে লামা উপজেলার কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে মেয়র বলেন, বান্দরবান জেলার সবচেয়ে জনবহুল উপজেলা লামা। গত ৭, ৮ এবং ৯ আগস্ট প্রবলবর্ষণের ফলে উপর থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে লামা পৌরসভাসহ এ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন বন্যা প্লাবিত হয়। এ বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় লামা পৌরসভা। মানুষের ঘর-বাড়ি, দোকানপাট, কৃষি জমি এবং পুকুর টানা তিন দিন বন্যার পানিতে ডুবে ছিল। ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক আকার ধারন করে। বন্যা কালিন বিদ্যুৎ এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় জনদূর্ভোগ চরম আকার ধারন করে।
পৌরসভার দক্ষিন দিকে আলীকদম উপজেলার মায়ানমার সীমান্ত পর্যন্ত, পূর্ব দিকে রূপসীপাড়া এবং লামা ইউনিয়নের শেষ সীমান্ত পর্যন্ত এবং উত্তর দিকে গজালিয়া ইউনিয়নের সর্বশেষ সীমান্ত পর্যন্ত এলাকার সমস্ত বৃষ্টির পানি লামা পৌরসভার লামা বাজারের পাশ ঘেঁষে সুখিয়া-দুখিয়া দুই পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে মাতামুহুরী নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়। সরু পাহাড়ের মাঝ দিয়ে স্বাভাবিকভাবে পানি প্রবাহিত হতে না পেরে বাধাগ্রস্ত হয়ে ফুলে ফেফে লামা শহর প্লাবিত হয়।
তিনি আরো বলেন, এবারের বন্যায় লামা পৌরসভা এলাকায় প্রতিটি ওয়ার্ড প্লাবিত হয়েছে। এসময় ৮ থেকে ২৫/৩০ ফুট পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে জনবসতি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সরকারি বিভিন্ন দপ্তর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কৃষি জমি, পুকুরসমুহ ও রাস্তাঘাট। প্রবল বর্ষনের ফলে বিভিন্ন স্থানে পাহায় ধসে অসংখ্য ঘর-বাড়ি বিধস্ত হয়েছে। বন্যায় লামা পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে সাড়ে ৪ হাজার পরিবার বন্যা কবলিত ও পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার মধ্যে সম্পূর্ণ ঘর বিধ্বস্থ হয় ২শত পরিবার এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ৫শত পরিবার। লামা বাজার এবং আশপাশ এলাকার প্রায় ১ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়। এসকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৭০ ভাগ মালামাল নষ্ট হয়ে ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হন। আভ্যন্তরীন বিভিন্ন সড়ক ভেঙ্গে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ৮৫ ভাগ আবাদী জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি দপ্তর বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে ক্ষতি সাধিত হয়েছে। অসংখ্য গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগী বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এলাকার প্রায় ৯০ ভাগ রিংওয়েল বন্যা প্লাবিত হয়েছে।
পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশেসিং এমপি বন্যাকালিন সময়ে লামাবাসীর খোঁজখবর নিয়েছেন। বন্যা পরবর্তী সময়ে অত্যান্ত দ্রæততম সময়ে লামা বাজারের সড়ক সহ বিভিন্ন গলি ও আভ্যন্তরীণ সড়ক সমুহ পরিস্কার করে লোকজনের চলাচল উপযোগি করে তোলা হয়েছে। পার্বত্য মন্ত্রী ইতিমধ্যে বন্যা কবলিত ২ হাজার ৯শ’ পরিবারের মাঝে খাদ্য শস্য এবং ২শত পরিবারের মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ করেছেন। এছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ, বান্দরবান জেলা প্রশাসন, লামা উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসন বন্যা কবলিতদের মানবিক সহায়তা করেছে। দুর্দিনে আমরা সকলে এক সাথে কাজ করবো।
মতবিনিময় সভা শেষে লামা পৌরসভার মেয়র মোঃ জহিরুল ইসলাম পাবর্ত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি’র পক্ষ থেকে লামা উপজেলার কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।