বান্দরবানের লামা উপজেলার ভয়াবহ বন্যায় বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার কারণে মৎস্য চাষীদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চাষীদের অনেকের পুকুর ও গোদার মাছ ভেসে গেছে। উপজেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে, এবারের বন্যায় লামা উপজেলায় ২ কোটি ৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সরজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বন্যার পানিতে পুকুর, গোদা ও জলাশয় ডুবে ভেসে গেছে মাছ। টানা বৃষ্টিতে ভেঙ্গে গেছে অনেক ছোট-বড় বাঁধ (ক্রিক)। লামা পৌরসভার রাজবাড়ি, হরিণঝিরি, লাইনঝিরি, ছাগলখাইয়া, মধুঝিরি, করিঙ্গাবিল, লামামুখ, কুড়ালিয়া টেক, লামা সদর ইউনিয়নের মেরাখোলা, বেগুনঝিরি, মেওলারচর, বৈল্যারচর, রূপসীপাড়া ইউনিয়নের অংহ্লা পাড়া, ইব্রাহিম লিডার পাড়া, পুকুরিয়া খোলা, শিলেরতুয়া, দরদরী, মাষ্টার পাড়া, হাফেজ পাড়া, সরই ইউনিয়নের আন্ধারী, হাছনা পাড়া, পুরাং পাড়া, আমতলী, লম্বাখোলা, লুলাইং, কম্পনিয়া, টংগঝিরি এলাকার বেশিরভাগ পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
লামা মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, বন্যায় ১৫০টি পুকুর, ৩০টি গোদা (ক্রিক) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলা বেশিরভাগ জলাশয় বানের পানিতে ডুবে গেছে। প্রাথমিক প্রাপ্ত তথ্যমতে ২১০ জন মৎস্যচাষী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবারের বন্যায় চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে লামা পৌরসভায়। আনুমানিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২ কোটি ৫ লাখ টাকা। এই পরিমাণ আরো বাড়তে পারে।
উপজেলার সর্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষী সরই ইউনিয়নের আন্ধারী এলাকার সাদেকুল মাওলা। ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য খামার দেখতে গেলে তিনি জানান, গত ৬ থেকে ৯ আগস্টের ভয়াবহ বন্যায় তাঁর ১৩টি পুকুরের সবকয়টির পাড় ভেঙ্গে যায় এবং বিক্রয়যোগ্য আনুমানিক ২৫ লক্ষ টাকার মাছ ভেসে গেছে। ভেঙ্গে যাওয়া পুকুরের পাড় সংস্কারসহ আনুষাঙ্গিক মিলে আরো ১০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়। সব মিলিয়ে তাঁর ৩৫ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হঠাৎ করে বন্যায় সব হারিয়ে এখন তিনি সর্বশান্ত হয়ে গেছেন।
লামা পৌরসভার কুড়ালিয়া টেক গ্রামের মৎস্যচাষী আনোয়ার হোসেন বলেন, বন্যায় তার জলাশয় ডুবে গেছে এবং জলাশয়ের সব মাছ পানিতে ভেসে গেছে। অনেক টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে। মেরাখোলা ছোটবমু এলাকার মৎস্য খামারের মালিক ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন বলেন, আমার পাঁচ একরের একটি মাছের লেক ছিল, লেকটির পাড় এবারের বন্যায় ভেঙে সব মাছ ভেসে গেছে। রুই, কাতলা, মৃগেল, তেলাপিয়া, পাঙ্গাসসহ বহু জাতের মাছ বড় হয়েছিল। বন্যায় আমার ১০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।
মৎস্যচাষী মোঃ হেলাল, মোঃ তসলিম ও চিত্ত রঞ্জন দে সহ অনেকে জানান, বেশিরভাগ চাষীই বেশি সুদে ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করেছিলেন। মাছ ভেসে যাওয়ায় একদিকে সংসার চালানোর চিন্তা, অন্যদিকে ঋণ শোধের চিন্তা। সব মিলিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা।
লামা মৎস্য অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল গফুর বাবুল বলেন, এবারের বন্যায় বান্দরবানের বেশিরভাগ মৎস্য চাষী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আর বৃষ্টির কমার পর থেকেই আমরা বিভিন্ন চাষীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য যাচাই করছি। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, লামা উপজেলায় ২ কোটি ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। যা আরও বাড়তে পারে। বন্যা পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষীদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে এবং তাদের সহায়তার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।