এবারের বন্যায় বান্দরবানের লামা উপজেলায় ৪৪১২ হেক্টর জমির ফসল বিনষ্ট হওয়ায় কৃষিতে ৩৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এতে ২ হাজার ৪৫০ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার লামা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। তবে এই হিসাব শুধু সমতলের জমির। পাহাড়ের ঢালুতে চাষাবাদ হওয়া ফসলের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করতে মাঠে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।
অতিবৃষ্টির ফলে গত ৬ আগস্ট থেকে ৯ আগস্ট পাহাড়ি জনপদ লামার বিভিন্ন নদী-খাল থেকে নেমে আসা পানিতে সৃষ্ট বন্যায় আমন ধান, আমন বীজতলা, আউশ, সবজি, কলা, পেঁপে, শাক-সবজিসহ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত। ভয়াবহ বন্যার কারণে এই মৌসুমে ৬৪২৫ মেট্রিক টন আমন ধান ও ৩০৪৬ মেট্রিক টন আউশ ধান উৎপাদনে ক্ষতি হয়।
লামা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে সমতল জমিতে ৪ হাজার ৪১২ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছিল। ভারী বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় ৪৪১২ হেক্টর ফসলি জমি। ৪ দিনব্যাপী বন্যায় ৩ হাজার ৬১৭ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ও ১ হাজার ৬৬৭ হেক্টর জমির ফসল আংশিক ক্ষতি হয়েছে। এতে উৎপাদনে ক্ষতি হয়েছে মোট ৯ হাজার ৪৭১ মেট্রিকটন ফসলের। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আমন ধান, কলা, পেঁপে ও সবজি ক্ষেতের।
অপরদিকে ৩৫০ হেক্টর জমিতে চাষ করা কলা বাগানের মধ্যে ক্ষতি হয়েছে ২৮০ হেক্টর জমির কলা। ক্ষতি হয়েছে ৯১০ হেক্টর জমির পেঁপে ক্ষেত। লামায় আবাদ করা বিভিন্ন ফসলের মধ্যে রয়েছে আমন, আউশ ধান, শাক-সবজি, পেঁপে, কলা, ভুট্টা, মরিচ, আদা, হলুদ, পেঁয়াজ, আখ ও সরিষা।
লামা রূপসীপাড়া ইউনিয়নের ইব্রাহিম লিডার পাড়া গ্রামের কৃষক মোঃ ইসহাক মিয়া (৪১) জানান, ‘তিনি এ বছর ৬ বিঘা জমিতে আউশ ধান, ১০ বিঘা জমিতে আমন ও সবজি রোপণ করেছিলেন। টানা বৃষ্টিপাত ও চারদিনের বন্যায় তার সব জমি পানিতে ডুবে যায়। সব ফসল পচে নষ্ট হয়ে যায়।’
লামা পৌরসভার কলিঙ্গাবিল গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ ও মোঃ ফারুক জানেন না কিভাবে এ ক্ষতি তারা কাটিয়ে উঠবেন। তারা বলেন, ‘আমরা গৃহস্থ। এ জন্য সরকারি বা বেসরকারি কোন সাহায্যও পাই না। এছাড়া জমিতে বালু ও মোটা স্তরে পলি পড়ে যাওয়ায় আগামীতে চাষাবাদ করাও কঠিন হয়ে পড়বে।’
লামা সদর ইউনিয়নের মেরাখোলা গ্রামের কৃষক ক্যাচিনু মার্মা বলেন, ‘তিনি দেড় বিঘা জমিতে আউশ ধান রোপণ করেছিলেন। কিন্তু বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সব ধানের গাছ পঁচে গেছে।’
রূপসীপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ছাচিং প্রু মার্মা বলেন, ‘বন্যার কারণে ইউনিয়নের প্রায় ৫শত একর জমির ধান, ৩শত একর জমির কলা, ৫০ একর জমির পেঁপে এবং ৪শত একর জমির সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। বন্যায় ফসলের যে ক্ষতি হয়েছে, তা অকল্পনীয়।’
লামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রতন কুমার বর্মন বলেন, ‘আমরা সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করে সরকারকে অবগত করেছি। যা আগামী দিনে একটি পুনর্বাসন ও প্রণোদনার আওতায় এ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এবছরে আমরা বোরো মৌসুমে ৩ হাজার ৬শত, আউশ মৌসুমে ২ হাজার ৪শত ও চলতি আমন মৌসুমে ৮শত কৃষককে প্রণোদনা দিয়েছি। এছাড়া ১২০ জন কৃষককে ভুট্টা ও সরিষা চাষে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে বান্দরবান জেলা পরিষদ হতে দেড় টন বীজধান বরাদ্দ পেয়েছি। যা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৪৫০ জন কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হবে। সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অন্তর্ভুক্ত করে তাদের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। কৃষকেরা যেন স্বল্পমূল্যে কৃষি ঋণ পেতে পারেন তার উদ্যোগও নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।’