মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ব্যুরো প্রধান, বান্দরবান:
বান্দরবানের রুমায় টানা প্রবল বর্ষনে পাহাড় ধসে রুমাখালের ক্রাইখ্যং মুখ এলাকার বাঁধ তৈরি হয়েছে। এতে রুমা খালের প্রবাহমান ও পাহাড়ি ঢলে নেমে প্রায় দুই কিলোমিটার জায়গা জুঁড়ে জমেছে পানি। এঅবস্থায় সেখানকার পাঁচটি পাড়ার ১২০-১৩০ পারিবারের লোকজন কোথাও যেতে পারছে না।
তাছাড়া বাঁধটি হঠাৎ ভেঙ্গে গেলে জমে থাকা পানিগুলো দ্রুত সরিয়ে গিয়ে স্রোতের বেগে নীচের অংশে বিভিন্ন স্থানে থাকা জনজীবনসহ ক্ষেতখামার ও স্থাপনা ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, রুমা উপজেলা সদর রুমা- বগালেক রাস্তায় সাত কিলোমিটার জায়গা থেকে পায়ে হেঁটে রুমাখালের দুরত্ব প্রায় দুই কিলোমিটার। সেখানে ক্রাইখ্যং নামক এ স্থানটি। এ ক্রাইখ্যং মুখের একটু উপরে পাহাড় ধসের বাঁধটি অবস্থান। প্রাকৃতিক সৃষ্ট টানা প্রবল বর্ষনে পাহাড় ধসে বাঁধ তৈরি নিয়েও এর মধ্যে হয়েছে নানা কল্পকাহিনী ও আতঙ্ক। বাঁধের পার্শ্ববতীর এলাকায় বসবাসরত কয়েকজন নারী বলেছেন,
গত সোমবার (৭ আগস্ট) ভোরের দিকে ধুক করে বিকট শব্দে শুনা যায়। সকালে দেখেন, বিশাল জায়গার জুরে পাহাড় ধসে নেমে রুমা খালে জেমেছে মাটি। এতে সল্প সময়ে খালের উজানে পানি বাড়তে থাকে। এ বাঁধ ভেঙ্গে পানি নামার সময় খালের দেবী মাথা নেবে, তাই খালের দেবী নিয়ে আলোচনা করা কিংবা তাদের নাম বলতে মানা। কল্প কাহিনি জানতে চাইলে আমরা ভয় করি, এসব কথা বলে মুখ ফিরিয়ে নেন এসব নারীরা।
তবে রুমা সদর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার ভাগ্যমনি পাড়া বাসিন্দা জনমনি ত্রিপুরা (৪৫) বলেন, পাহাড় ধসে রুমাখালের কৃত্রিম বাঁধ তৈরি উজানের দিকে পানি বাড়তেই চলেছে । ফলে ভাগ্যমনি পাড়াসহ ওই এলাকায় কয়েকটি পাড়ার লোকজন বাজারে আসা- যাওয়া করতে পারছেন না। কারণ ওই এলাকার লোকজন এ রুমাখাল বেযে বেয়ে রুমা সদরে যেতে হয়। এই রাস্তা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প রাস্তা বলতে নেই।
জনমনি মেম্বার আরো বলেন টানা বৃষ্টি বা প্রবল বর্ষনে সদ্য হয়ে যাওয়া বন্যার পানি অন্যান্য স্থানে নেমে গেলেও ক্রাইখ্যং মুখ বাঁধের পানি বাড়তে থাকে। এজন্য কয়েকটি পাড়ার লোকজন এক ধরনের পানি বন্দিতে থাকতে হয়েছে।
বাঁধ তৈরি এলাকায় আরো কথা হয় সাবেক মেম্বার শুই হ্লা প্রু মারমা সঙ্গে। তিনি হাত দেখিয়ে বলেন, ধসে আসা এ পাহাড়টি কমপক্ষে ৩০-৫০ একর জুরে। এজন্য এ রুমাখালে টানা প্রায় এক কিলোমিটার লম্বা জুরে মাটি জমেছে। জমানো মাটির উচ্চতাও পক্ষে ২৫ ফুটের বেশি হবে বলে দৃঢ় কন্ঠে বলেন, শুই হ্লা প্রু মারমা।
তিনি আরো বলেন এ বাঁধের উজানের দিকে বগামুখ পাড়া, ভাগ্যমনি পাড়া ও উবাংকই পাড়া রয়েছে। তাছাড়া পাহাড়ে অবস্থিত খুলেন ও লিনতং নামে দুইটি পাড়া আছে। এখাল দিয়েই তাদের রাস্তা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর হক বলেন, বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে ওইখালে বাঁধ তৈরি হওয়ার বিষয়টি ফায়ার সার্ভিসের মাধ্যমে কি সমাধান করা যায় তা দেখে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তাছাড়া এলাকার সচেতন ব্যক্তি ও স্থানীয় যুবকদের নিয়ে কি উদ্যোগ নেয়া যায়, তাও ভেবে দেখতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানান ইউএনও।
পার্বত্যকন্ঠ নিউজ/রনি