সারা দেশে পুকুর, নদীসহ বিভিন্ন জলাশয়ে ডুবে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে প্রতিদিনই। গত সাত মাসে ১৫ জেলাতে মারা গেছে তিনশতাধিক শিশু। শুষ্ক মৌসুমে কম হলেও বর্ষা এলে নদ-নদী, খাল-বিলে পানি বাড়ায় বাড়ে প্রাণহানির ঘটনাও। এ ধরনের ঘটনায় উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা।
বিভিন্ন জেলায় গোসলে নেমে কিংবা খেলতে গিয়ে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর ঘটনা আগের তুলনায় বেড়েছে। এ জন্য পরিবার ও অভিভাবকদের অসচেতনতাকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা।
গত ৫ জুলাই নোয়াখালীর ৪ উপজেলায় মারা যায় ৬ শিশু। আর ছয় মাসে অন্তত ১০০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে পানিতে ডুবে। এই হার অন্য জেলার তুলনায় কিছুটা বেশি বলছেন গবেষকরা।
নদী-খালবেষ্টিত ঝালকাঠিতে এক বছরে ৯৩ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গত ৬ মাসে সে সংখ্যা ১৯। এ ধরনের দুর্ঘটনাকে পরিবারের উদাসীনতার কারণ বলছেন স্থানীয়রা।
নেত্রকোণায় গত ৩ মাসে মারা গেছে ৩৫ শিশু। আড়াই বছরে এ সংখ্যা ছাড়িয়েছে দুইশো। চলতি বছরে ঝিনাইদহে মারা গেছে ১৫ শিশুসহ ১৬ জন।
কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মনজুর মোর্শেদ বলেন, গত ৭ মাসে কুড়িগ্রামে মারা গেছে ১৭ জন। বাড়ির পাশে অরক্ষিত জলাশয়ই দুর্ঘটনার কারণ।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক আবুল কালাম আজাদ বলেন, হাওরবেষ্টিত কিশোরগঞ্জে চলতি বছরে ১৫ এবং দেড় বছরে মারা গেছে ৮৬ শিশুসহ দেড়শো জন। অভাভাবকদের নজরদারি এবং অসচেতনতায় এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে।
এছাড়া গত সাত মাসে হবিগঞ্জে, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ এবং শেরপুরে ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। শিশুদের সাঁতার শেখানোর পাশাপাশি অভিভাবকদের সচেতনতা হবার তাগিদ দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
দিনাজপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক আমিরুল ইসলাম বলেন, পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু এড়াতে বাবা-মাকে সচেতন হতে হবে। এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে সাঁতার শেখার বিকল্প নেই।
বেশিরভাগ পুকুর বা বাড়ির পাশের জলাশয়ে নেই কোনও নিরাপত্তা বেষ্টনি। শিশুমৃত্যু রোধে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কোন সচেতনতামূলক প্রচারণা নেই বলে জানান স্থানীয়রা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের সাঁতার না জানা এবং বাড়ির পাশের জলাশয় অরক্ষিত থাকার কারণে বাড়ছে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর ঘটনা।
পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু রোধে সচেতনতা বাড়ানোসহ কার্যকর উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান অভিভাবকদের।