রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে সংঘর্ষের পর গতকাল শনিবার দুপুর ১২টার দিকে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে নিয়ে আসা হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে। সেখানে তাকে ডিবি প্রধান আপ্যায়ন করছেন, এমন একটি ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা যায়, গয়েশ্বরের প্লেটে খাবার তুলে দিচ্ছেন ডিবি প্রধান। এরপর থেকে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। এ বিষয়ে আজ রোববার (৩১ জুলাই গয়েশ্বর জানালেন, এটি অনেকটা ‘খাইয়ে খোটা দেওয়ার মতো।’ তিনি জানান, ডিবি প্রধানের অনুরোধের প্রেক্ষিতে এবং সৌজন্যতা রক্ষায় হারুনের জন্য বাসা থেকে নিয়ে আসা খাবার থেকে ভাতসহ হালকা সবজি ও রুই মাছের একটি টুকরা গ্রহণ করেন তিনি।
আজ রোববার (৩০ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে ব্যক্তিগত কার্যালয়ে এ কথা বলেন গয়েশ্বর। এসময় ধোলাইখালে রাজপথে ফেলে পুলিশ গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে পিটিয়ে রক্তাক্ত এবং পরে তাকে পুলিশ ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া নিয়েও বিভিন্ন কথা বলেন তিনি।
বিএনপি নেতা গয়েশ্বর জানান, ডিবি কার্যালয়ে তার জন্য যে খাবারের আয়োজন করা হয়, তা তার স্বাস্থ্যের পক্ষে উপযোগী ছিল না। এ ছাড়া এই খাবার নিয়ে তার সন্দেহও ছিল। সে কারণে তিনি আর ওই খাবার গ্রহণ করেননি।
গয়েশ্বর আরও জানান, ডিবি প্রধানের অনুরোধের প্রেক্ষিতে এবং সৌজন্যতা রক্ষায় হারুনের জন্য বাসা থেকে নিয়ে আসা খাবার থেকে ভাতসহ হালকা সবজি ও রুই মাছের একটি টুকরা গ্রহণ করেন তিনি।
গয়েশ্বর বলেন, ‘ডিবি প্রধান আমাকে অনুরোধ করেছেন, রুই মাছটি তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। আর যেহেতু ডিবি প্রধান নিজেই খাবারটি খাচ্ছেন, তখন আমার মনে হলো—এটা যদি গ্রহণ করি, তাহলে সমস্যা হবে না।’
তবে, আপ্যায়ন করে সেটার ছবিসহ ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাকে অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ও ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড বলে আখ্যায়িত করেন এই বিএনপিনেতা। তিনি বলেন, ‘যারা এ কাজটি করেছে এটি অত্যন্ত নিম্ন রুচির পরিচায়ক। এক ধরনের তামাশাপূর্ণ নাটক। এতে কি সরকার প্রমাণ করতে চায় যে, আমরা হা-ভাতে? ভিক্ষা করে খাই? গ্রামের ভাষায় বলা হয় ‘খাইয়ে খোটা দেওয়া’। ডিবি অফিসে আমার সঙ্গে যা করা হলো, তা ওই রকমই। আমার বাড়িতে তো বিভিন্ন সময় অনেক লোক খায়। এটা আমার জন্য অত্যন্ত সম্মানের, কিন্তু এই খাবারের ছবি উঠিয়ে কি আমি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেব? এটা কি আমার জন্য ভালো হবে?’
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘একমাত্র মৃত্যু চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলন থেকে আমাকে থামাতে পারবে। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে চলমান গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সফল না হওয়া পর্যন্ত তিনি যেন আমাকে চিতায় না তোলেন।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সরকারের কোনো প্রলোভন গয়েশ্বরকে কিনতে পারবে না। সরকারের কাছে এত টাকা নেই যে, গয়েশ্বরকে কিনতে পারে। সরকার গ্রেপ্তার করতে পারে, এমনকি প্রাণও নিতে পারে—এই শক্তি সরকারের রয়েছে, কিন্তু গয়েশ্বরকে কিনতে পারবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঈশ্বরের কাছে আমার প্রার্থনা, চিতায় উঠার আগে যেন এই সরকারের পতন দেখে যেতে পারি।’ চলমান জনসম্পৃক্ত আন্দোলন সফল হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন গয়েশ্বর রায়।