সাড়ে চার কিলোমিটার এইচবিবি সড়ক নির্মাণে পাল্টে যাচ্ছে একটি ইউনিয়নের অবকাঠামো ও আর্থ-সামাজিক দৃশ্যপট। এতে করে উপজেলা সদর সহ পার্শ্ববর্তী দুইটি উপজেলার সাথে তৈরি হচ্ছে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ। সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন প্রায় ২৫টি গ্রামের ১০ হাজারের অধিক জনগণ সংযুক্ত হচ্ছে উন্নয়নের মূল স্রোতধারায়।
এক বছরের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ শেষ করে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সড়কটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন, লামা উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ মাহাফুজুল হক। বলছিলাম লামা উপজেলার রূপসীপাড়া ইউনিয়নে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) লামার অর্থায়নে নির্মিত শিলেরতুয়া-রূপসীপাড়া সাড়ে ৪ কিলোমিটার সড়কের কথা।
উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের জানুয়ারী মাসে শিলেরতুয়া হতে রূপসীপাড়া সড়কের উন্নয়ন কাজ শুরু হয়। এইজিইডি’র অর্থায়নে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে ৪ কিলোমিটার এইচবিবি সড়কটি নির্মাণ করে যৌথ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘হাসান এন্ড এম.এম. ট্রেডার্স’। সাড়ে ৪ কিলোমিটার এইচবিবি সড়কটিতে ছোট বড় মিলে ১৬টি কালভার্ট, পুরো রাস্তার দু’পাশে ড্রেন, অসংখ্য গাইড ওয়াল ও টাই রিটার্নিং ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া বিশেষ চাহিদা বিবেচনা করে সিএইচটি (আরডিপি-২) প্রকল্পের আওতায় সড়কটির শিলেরতুয়া অংশে প্রায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে মাতামুহুরী নদীর উপর ১৮৪ মিটার দীর্ঘ গার্ডার ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এলজিইডি লামা অফিস জানিয়েছে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সড়ক ও ব্রিজটি জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। এদিকে ৩১ জানুয়ারী সোমবার এলজিইডি বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী এন এস এম জিললুর রহমান শিলেরতুয়া-রূপসীপাড়া সড়ক পরিদর্শনে লামায় আসছেন। নির্বাহী প্রকৌশলী বান্দরবানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে উন্নয়ন কাজটি সম্পাদিত হয়েছে।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সড়কটি লামা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড শিলেরতুয়া এলাকা হতে শুরু হয়ে নব-নির্মিত ১৮৪ মিটার দীর্ঘ ৪র্থ মাতামুহুরী ব্রিজের উপর দিয়ে রূপসীপাড়া ইউনিয়নের পূর্ব শিলেরতুয়া, ছামাইছড়ি, বেতঝিরি, শিংঝিরি, দোছড়ি, হাতিরঝিরি, চিংকুম মুরুং পাড়া, পুলিশ ক্যাম্প পাড়া হয়ে রূপসীপাড়া বাজারে সংযুক্ত হয়েছে। নতুন এই সড়কটির কারণে হাজার হাজার সমতল ও পাহাড়ি অনাবাদি জমি আবাদের আওতায় আসবে।
পূর্ব শিলেরতুয়া গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, মোঃ শাহীন আলম, আব্দুল মন্নান সহ অনেকে বলেন, আমাদের এই এলাকাটি ছিল উপজেলার সবচেয়ে পশ্চাৎপদ ও দুর্গম এলাকা। আমরা পাহাড়, বন জঙ্গল দিয়ে নদী, খাল পেরিয়ে দীর্ঘ পথ ধরে ঘন্টার পর ঘন্টা হেঁটে লামা বাজার ও রূপসীপাড়া বাজারে যেতাম। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় সময়মত হাসপাতালে নিতে না পারায় কত মানুষ যে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে তার হিসেব নেই। বর্ষাকালে আমরা সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তাম। যেখানে আমাদের লামা বাজারে যেতে ২/৩ ঘন্টা ও রূপসীপাড়া বাজারে যেতে ২ ঘন্টা লাগতো, সেখানে আমরা এখন ১৫ মিনিটে পৌঁছে যেতে পারি। আমাদের কাছে এখন স্বপ্ন মনে হচ্ছে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, পার্বত্য মন্ত্রী ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কে ধন্যবাদ জানাই।
বেতঝিরি এলাকার বাসিন্দা মুকিম মিয়া, শিংঝিরির আব্দুল সামাদ, চিংকুম পাড়ার রাজ্জাক মিয়া বলেন, বর্তমান সরকার ঘোষণা দিয়েছে গ্রাম হবে শহর, আমরা এখন তার শতভাগ বাস্তবায়ন দেখছি। উন্নয়নের জন্য এই সরকারে কোন বিকল্প নেই। সাড়ে ৪ কিলোমিটার সড়কের কারণে আমরা লামা উপজেলা সদরের সাথে যুক্ত হচ্ছি। এছাড়া পার্শ্ববর্তী আলীকদম ও চকরিয়া উপজেলার সাথে আমাদের সরাসরি যোগাযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
এলজিইডি লামার সার্ভেয়ার মোঃ জাকের হোসেন মোল্লা বলেন, এলজিইডি বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী এন এস এম জিললুর রহমান স্যারের সার্বিক তত্ত্বাবধান ও নির্দেশনায় সড়কের কাজ শেষ পর্যায়ে। ব্রিজ, কালভার্ট গুলোতে রংয়ের কাজ চলছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, জনগণ আমাদের চমৎকার সহায়তা করেছে। প্রকল্পের নির্দিষ্ট মেয়াদকালে উন্নয়ন কাজ শেষ করতে পেরে আমরা আনন্দিত।
লামা উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ মাহাফুজুল হক বলেন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে রাস্তাটি জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। আজ সোমবার নির্বাহী প্রকৌশলী এন এস এম জিললুর রহমান সড়কটি পরিদর্শনে লামায় আসছেন।