লামায় রোকসানা বেগম (১৬) নামে এক গৃহবধূর গাছে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। শুক্রবার দিবাগত রাত ১০টায় উপজেলার রূপসীপাড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড পূর্ব শিলেরতুয়া এলাকার ছামাইছড়ি পাড়াস্থ নিহতের শশুর বাড়ির উত্তর পার্শ্বের পাহাড় থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। সে ছামাইছড়ি এলাকার মৃত রুহুল আমিন ও আয়েশা খাতুনের ছেলে ইদ্রিস মিয়া (৪০) প্রকাশ বেচুর স্ত্রী।শুক্রবার দিবাগত রাত ১০টায় লামা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক শাহীন পারভেজ সঙ্গীয় পুলিশ সদস্য নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। তিনি বলেন, রাতেই প্রাথমিক সুরতহাল শেষে লাশটি থানায় আনা হয়। নিহতের স্বজনদের খবর দেয়া হয়েছে। তারা নোয়াখালী জেলার হাতিয়া থেকে সকালে লামার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে।
লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শহীদুল ইসলাম চৌধুরী গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় নারীর লাশ উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, রাতে লাশ থানা আনা হয়েছে। শনিবার ভোরে লাশটি বান্দরবান জেলা সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। সন্ধ্যায় ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের মা ও ভাইদের কাছে লাশটি হস্তান্তর করা হয়েছে।
সরজমিনে গেলে ওই এলাকার মিনারা বেগম নামে এক নারী বলেন, নিহত রোকসানা বেগমের সাথে তার শাশুড়ি আয়েশা খাতুনের সম্পর্ক ভালো ছিলনা। মেয়েটির বয়স কম হওয়ায় বদমেজাজি ও একরোখা ছিল। আশপাশের কারো সাথে সে মিশতো না।
ছামাইছড়ি এলাকার আব্দুল মতিনের ছেলে মোঃ ওসমান গনি বলেন, রাত সাড়ে ৭টায় পূর্ব শিলেরতুয়া বাজারে গিয়ে খবরটি শুনতে পাই। সাথে সাথে ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার আবু তাহের সহ ৩০/৩৫ জন লোক ইদ্রিসের বাড়িতে যাই। লাশ খুঁজে না পেয়ে পার্শ্ববর্তী মোঃ হানিফ নামে একজনকে ফোন দিলে সে বলে নিহতের স্বামী তাকে জানিয়েছে লাশটি বাড়ির উত্তর পাশে পাহাড়ের উপরে ছোট একটি গামারী গাছে ঝুলে আছে।
নিহতের বোন জাহানারা বেগম বলেন, শুক্রবার সকালে তার ভাই ইদ্রিস মিয়া তাকে ফোন করে। সে বোনকে বলে তার স্ত্রী রোকসানা বেগম এখানে থাকতে চাচ্ছেনা। সে নিজের বাড়ি হাতিয়া চলে যেতে চাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, শুক্রবার জুমার নামাজ পড়ে বাড়িতে এসে রোকসানা কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। আমার ভাই আশপাশের বেশ কয়েকটি ঘরে তাকে খোঁজ করেও পায়নি। রাত ৭টায় পাহাড়ের উপরে আমার ভাইয়ের স্ত্রী গাছে ঝুলে থাকার খবর পাই। ধারনা করা হচ্ছে দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন এক সময় এই ঘটনা ঘটেছে। গত ১ বছর আগে আমার ভাইয়ের ১ম স্ত্রীর সাথে ডিভোর্স হয়ে যায়। সে ঘরে তার তিন সন্তান রয়েছে। গত ৯ মাস আগে হাতিয়া গিয়ে সেখানে রোকসানার সাথে ইদ্রিসের বিয়ে হয়। মাস তিনেক হাতিয়া থেকে ৫/৬ মাস আগে লামায় আসে। এখানে এসে সে তার বড় ভাই মোঃ বাবুল এর বাড়িতে বউ নিয়ে বসবাস করত। গত ১৫ দিন আগে বউ নিয়ে বড় ভাইয়ের বাড়ি থেকে নিজের বাড়ি যায়।
নাম প্রকাশ না করা সত্ত্বে ওই এলাকার এক নারী বলেন, তিন সন্তান রেখে নির্যাতন করে প্রথম স্ত্রীকে বের করে দিয়েছে ইদ্রিস। তারপর ১৫ বছরের নাবালক ছোট একটা মেয়েকে বিয়ে করে। এত ছোট মেয়ে সংসারের কি বুঝে ? এই মেয়েটিকেও থাকা-খাওয়া নিয়ে কষ্ট দিত। ঘটনাটি গভীর তদন্ত প্রয়োজন আছে। তাছাড়া ঘটনার পরপরই ইদ্রিস ও তার বাড়ির সবাই পালিয়ে গেছে।
লাশ উদ্ধারের সময় প্রত্যেক্ষদর্শী ছিলেন এমন কয়েকজন বলেন, যে রশিতে রোকসানাকে গাছে ঝুলন্ত পাওয়া গেছে, সেটি ইদ্রিসদের বাড়ির গরুর রশি। রোকসানা ঝুলে থাকা রশিটির গলায় চেপে লেগে ছিলনা। রশির গিটটা অনেক ফাঁক ছিল। লাশের পায়ের নিচে নিহতের একটি লাল ওড়না পড়েছিল।