মাগুরা সংবাদদাতা:
গত ১৫ ই আগস্ট রোজ শনিবার সময় সন্ধ্যা ৬:৪৫ এ মাগুরা মোহাম্মদপুর উপজেলার কেরিনগর গ্রামের রতন মোল্লার মেয়ে আকলিমা খাতুন (২১) নিজের শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছেন। বর্তমানে সে দগ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন, ডাক্তারদের মতে মেয়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেয়ের বাবা রতন মোল্লা বেশ কিছুদিন ধরে মেয়েকে মতের বিরুদ্ধে জোর করে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছিল আর তারই সূত্র ধরে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটে।
ঘটনার গভীরে যেয়ে দেখা যায়, আকলিমা খাতুন এর সঙ্গে একই গ্রামের মাসুদ মোল্লার ছেলে নাজমুল হোসেনের সঙ্গে দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল এবং উভয়ে গত ২৯ মার্চ ২০১৭ সালে দুই পরিবারের অমতে গোপনে বিবাহ করেন। প্রথমে দুই পরিবারের কেউ না মেনে নিলেও কিছুদিন পর ছেলের পরিবার মেনে নেয় এবং পরবর্তীতে গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের চাপে মেয়ের পরিবারও বিয়ে মেনে নিতে বাধ্য হয়। ছেলের মা শাহনাজ পারভীন (৪০) জানান, আকলিমাকে আমরা কখনোই ছেলের বউ মনে করতাম না, সব সময় তাকে নিজের মেয়ের মত করে আদর করতাম। কিন্তু তার মা ও বাবা কখনোই মন থেকে এই বিয়ে মেনে নেয়নি। তিনি আরো জানান, আকলিমার মা নার্গিস আক্তার সব সময় মেয়েকে কুমন্ত্রণা দিয়ে আমাদের প্রতি এক ধরনের বিতৃষ্ণা তৈরি করার চেষ্টা করতেন। যার ফলশ্রুতিতে গত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখ দিয়ে দুইজনের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।
নাজমুলের ইচ্ছে ছিল নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আবার ঘর বাঁধার, সেজন্য সে মাগুরার রামনগর গ্রামের শরিফুলের গাড়িতে ড্রাইভিং এর উপর প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল। এদিকে মেয়ে আকলিমা এতদিনে তার মায়ের চালাকি বুঝে ফেলে এবং সে আবার নাজমুলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে ও উভয়ের মধ্যে আবার একটা প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নার্গিস আক্তার মেয়ের মতিগতি টের পেয়ে দ্রুত মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগে এবং এ নিয়ে মেয়ের সঙ্গে কয়েকবার কথা-কাটাকাটিও হয়।
ঘটনার আগের দিন ১৪ই আগস্ট শুক্রবার মেয়ের বাবা রতন মোল্লা ও মা নার্গিস আক্তার গিয়েছিলেন পাত্র দেখতে। এ বিষয় নিয়ে মা-বাবার সাথে আকলিমার তীব্র ঝগড়া শুরু হয় এবং পরদিন সন্ধ্যায় আকলিমা নিজের শরীরে ডিজেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে। ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য ও নিজের দোষ আড়াল করতে মেয়ের বাবা রতন মোল্লা গত ১৭ আগস্ট মোহাম্মদপুর থানায় নাজমুল হোসেন ও তার পিতা মাসুদ মোল্লাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন, ইতিমধ্যে ৫ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
এদিকে নাজমুল হোসেনের মা শাহনাজ পারভীন ন্যায় বিচারের জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন। তিনি ঘটনাটি তদন্ত করে প্রকৃত সত্য ঘটনা উদঘাটন করে অবিলম্বে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত ৫ জনকে মুক্তি দিতে আহ্বান জানান।