সাম্প্রতিক টেক দুনিয়ার অন্যতম আলোচনার বিষয় মেটার নতুন অ্যাপ থ্রেডস। উন্মোচনের মাত্র প্রথম সাত ঘণ্টায় এক কোটি ব্যবহারকারীর মাইলফলক অতিক্রম করেছে অ্যাপটি। ইউরোপ বাদে বিশ্বের একশ’র বেশি দেশে থ্রেডস অ্যাপ চালু করেছে মেটা।
গত ৬ জুলাই ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা চালু করে থ্রেডস অ্যাপ। অ্যাপটিতে যুক্ত হতে প্রয়োজন হবে একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের। অ্যাপটিতে ৫০০ ক্যারেক্টারের পোস্ট করার পাশাপাশি ৫ মিনিট দৈর্ঘ্যের ভিডিও শেয়ার করা যাবে।
গত অক্টোবরে মাস্ক টুইটার অধিগ্রহণের পর থেকে ওই প্ল্যাটফর্মে অনেক প্রযুক্তিগত সমস্যা দেখা দেয়। এ ছাড়া ব্লু টিকের যাচাইকরণ নীতি পরিবর্তন, প্ল্যাটফর্মের নিয়ন্ত্রণসহ নানা কারণে ব্যবহারকারী ও বিজ্ঞাপনদাতাদের নানা সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে টুইটার।
বলা যায়, মাস্কের একের পর এক সমালোচিত সিদ্ধান্ত টুইটারের প্রতিদ্বন্দ্বী প্ল্যাটফর্মগুলোকে উঠে আসার মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছে। এরই মধ্যে টুইটারের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে মাস্টোডন, ব্লুস্কি ও স্পিল। এখন প্রশ্ন, টুইটারকে কি আসলেই পেছনে ফেলতে পারবে থ্রেডস?
থ্রেডস যেভাবে ব্যবহার করতে হবে
থ্রেডস ব্যবহার করা বেশ সোজা। অ্যান্ড্রয়েড প্লে-স্টোর অথবা অ্যাপল অ্যাপস্টোরে গিয়ে ডাউনলোড করা যাবে অ্যাপটি। অ্যাপটিতে লগ ইন করতে হবে ইনস্টাগ্রাম আইডির ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে। যদি একই ডিভাইসে ইনস্টাগ্রামে লগ ইন করা থাকে, তাহলে থ্রেডস অ্যাপ খুলে নিজের ইনস্টাগ্রাম আইডির ওপর ট্যাপ করলেই যুক্ত হওয়া যাবে অ্যাপটিতে। এরপর থ্রেডসের প্রোফাইলে বিভিন্ন তথ্য নিজের মতো করে আপডেট করে নেওয়া যাবে। ব্যবহারকারীরা ইনস্টাগ্রামে যাদের ফলো করছেন, তাদের থ্রেডসেও ফলো করবেন কিনা তা আলাদা করে নির্বাচনের সুযোগ পাবেন।
কেউ আলাদা অ্যাপ ডাউনলোড করতে না চাইলে ব্রাউজারে থ্রেডস ডট নেট ঠিকানায় গিয়ে যুক্ত হতে পারেন প্ল্যাটফর্মটিতে। আপাতত উইন্ডোজ বা ম্যাকের জন্য কোনো আলাদা ডেস্কটপ অ্যাপ আনছে না মেটা।
থ্রেডসের কি আছে যা টুইটারের নেই?
থ্রেডসকে টুইটারের হুবহু নকল মনে হলেও একটু গভীরে গেলে কিছু পার্থক্য পাওয়া যায়। এসব পার্থক্য থ্রেডসকে টুইটার থেকে এগিয়ে রাখবে। যেমন, ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ব্যবহার করা যাবে থ্রেডস। ফলে অ্যাপটিতে সহজেই নিজের বন্ধু ও ফলোয়ারদের খুঁজে পাওয়া যাবে। ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতেও শেয়ার করা যাবে থ্রেডসের পোস্ট।
থ্রেডস বিকেন্দ্রীভূত সামাজিক-নেটওয়ার্কিং প্রোটোকল ‘অ্যাক্টিভিটিপাব’ ব্যবহার করবে। অর্থাৎ, থ্রেডস অ্যাকাউন্ট এবং ফলোয়ার মেটার মতো একক কোম্পানি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হয়ে স্বাধীন সার্ভারে হোস্ট করা যাবে।
এতে এক দিনে পোস্ট পড়ার কোনো সীমা নেই। অন্যদিকে, টুইটারের সাধারণ ব্যবহারকারীরা প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৬০০টি পোস্ট পড়তে পারবেন। আর ব্লু টিক সাবস্ক্রাইবাররা প্রতিদিন ৬ হাজার পোস্ট পড়তে পারবেন।
সবশেষে যে বিষয়টি থ্রেডসকে টুইটার থেকে এগিয়ে রাখবে তা হলো- এতে আপাতত কোনো বিজ্ঞাপন নেই। তবে ভবিষ্যতে প্ল্যাটফর্মটিতে বিজ্ঞাপন যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়নি মেটা।
থ্রেডস পিছিয়ে কীসে?
অনেকদিক দিয়ে টুইটারের থেকে পিছিয়েও আছে থ্রেডস। এই দিকগুলো বিবেচনায় না নিলে টুইটারকে পেছনে ফেলতে বেগ পেতে হবে মেটার।
থ্রেডসে এই মুহূর্তে শুধু একটি প্রধান অ্যালগরিদমিক ফিড রয়েছে। ফিডে ব্যবহারকারীরা যাদের ফলো করছেন তাদের পোস্ট এবং প্ল্যাটফর্মে জনপ্রিয় ব্যবহারকারীদের পোস্ট দেখতে পাবেন৷ শুধু যাদের ফলো করছেন তাদের পোস্ট বা সম্পূর্ণ কালানুক্রমিক ফিড দেখা যাবে না।
থ্রেডসে সর্বোচ্চ ৫০০ ক্যারেক্টারের পোস্ট দেওয়ার সীমা থাকলেও কত অক্ষর লেখা হয়েছে তা দেখানো হয় না। ফলে সীমার কাছাকাছি চলে এলে বোঝার কোনো উপায় থাকে না। এ ছাড়া পোস্টে এডিটের সুবিধাও নেই এখানে। নেই হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে অনুসন্ধানের সুবিধাও। থ্রেডসে কাউকে ব্যক্তিগত মেসেজ পাঠানো যাবে না। এর জন্য ফিরে যেতে হবে ইনস্টাগ্রামে।
থ্রেডস নিয়ে শঙ্কা
থ্রেডসের গোপনীয়তা নীতিমালা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। অ্যাপল অ্যাপ স্টোর বা প্লে-স্টোরে থ্রেড অ্যাপের বিস্তারিততে গেলে দেখা যাবে অ্যাপটি ব্যবহারকারীর নানা ধরনের ডেটা সংগ্রহ করবে। স্বাস্থ্য, ক্রয়, আর্থিক তথ্য, অবস্থান, পরিচিতিসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করবে এটি। তবে মেটা কেন বা কীভাবে এই ডেটা ব্যবহার করবে সে সম্পর্কে তেমন কিছু জানানো হয়নি।
টুইটারকে ছাড়িয়ে যাবে থ্রেডস?
টুইটারের প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার ক্ষেত্রে আলাদা একটি সুবিধা পাচ্ছে মেটা। তা হলো, এটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের সহজে যুক্ত হওয়ার সুবিধা দিচ্ছে। ফলে মাত্র প্রথম চার ঘণ্টায় এতে ৫০ লাখেরও বেশি ব্যবহারকারী যুক্ত হয়। ৭ ঘন্টায় এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক কোটিতে। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবহারকারীর সংখ্যায় টুইটারকে শিগগিরই ছাড়িয়ে যাবে থ্রেডস।
পার্বত্যকন্ঠ নিউজ এমএস