মাসুদ রানা, বিশেষ প্রতিনিধি:
হুট করেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। অপ্রত্যাশিত সেই ঘোষণার এক দিন পর ওয়ানডে অধিনায়ককে দলে ফেরানো হয় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে। তামিমকে দলে ফেরানোয় আরেকজনের অবদান ছিল অনেক বেশি, তিনি সাবেক অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা।
বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) ক্রিকেট বোর্ডকে না জানিয়ে ব্যক্তিগতভাবে সংবাদ সম্মেলন ডেকে অবসরের ঘোষণা দেন তামিম ইকবাল। পরিস্থিতি বিবেচনায় তখনই আন্দাজ করা যাচ্ছিল, কোনো ক্ষোভ কিংবা অভিমানে এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন ওয়ানডে ওপেনার। তবে ঘোষণার দিন ক্রিকেট বোর্ডেরও তেমন কিছু করার ছিল না। কারণ, অশ্রুসিক্ত বিদায়ের পর তামিমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে বোর্ড।
তামিমের অবসর ঘোষণার রাতে একটি জরুরি বৈঠক ডাকে বোর্ড। সেখানে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, ওয়ানডে অধিনায়ককে ফেরানোর চেষ্টা করবেন তারা। তবে তামিমকে যে তখনও পাওয়া যাচ্ছিল না মোবাইল ফোনে। শেষমেশ ত্রাণকর্তা হিসেবে হাজির হন মাশরাফী।
তামিমের অবসর ঘোষণার পর তার সঙ্গে ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা করতে চান প্রধানমন্ত্রী। তবে বোর্ডের মাধ্যমে তাকে পাওয়া না গেলে শেষমেশ মাশরাফীর মাধ্যমে তামিমকে ডেকে পাঠান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অবসর ঘোষণার এক দিন পর গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন ৩৪ বছর বয়সী ওপেনার। আর তার নির্দেশেই ভাঙেন অবসর।
তামিমের অবসর ভাঙার পর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দেশের এক সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন মাশরাফী। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তামিমের যোগাযোগ থেকে শুরু করে গণভবনের আলোচনার অনেকটা অংশ তুলে ধরেন সাবেক অধিনায়ক।
মাশরাফী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ওর সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইছিলেন। তামিম তো সবকিছু থেকে দূরে ছিল। প্রধানমন্ত্রী তাই আমাকে বলেছেন ওর সঙ্গে যোগাযোগ করতে। আমি তাকে বলেছি যে, তামিমকে আমি নিয়ে আসছি আপনার কাছে। এরপর তামিমকে আমি বলেছি যে, তুই গিয়ে মনের কথা বল। প্রধানমন্ত্রীর যে কথা আছে, সেটা তিনি বলবেন। তারপর যে সিদ্ধান্ত হওয়ার হবে। আমার দায়িত্ব ছিল ওকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়ে যাওয়া।’
শুক্রবার (৭ জুলাই) বিকেল ৩টার দিকে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকাকে নিয়ে তামিম গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন মাশরাফী। আলোচনা শুরুর কিছুক্ষণ পরেই গণভবনে যান বিসিবি সভাপতি নাজমুল হোসেন পাপন। ঘণ্টা তিনেকের আলোচনা শেষে তামিম জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অধিনায়ক হিসেবেই আবারও ক্রিকেটে ফিরছেন তিনি।
তামিমের সিদ্ধান্ত বদল নিয়ে মাশরাফী বলেন, ‘এর চেয়ে ভালো সমাধান আমি আশা করিনি। তামিম বিরতি চেয়েছে, সেটা নিক। পুরো ফিট হয়ে, মানসিকভাবে তরতাজা হয়ে ফিরুক। কিন্তু এভাবে অবসরের মানে নেই। বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনেক কিছুই হয়। কোচের সঙ্গে ঝামেলা হতে পারে, বোর্ডের সঙ্গে হতে পারে। আমার ২০ বছরের ক্যারিয়ার আর অধিনায়কত্বের ৫-৬ বছরে তো কম হয়নি এসব। সব দলেই কম-বেশি এসব হয়। এসব সামলেই চলতে হয়।’
অনেক আলোচনা-সমালোচনার পর তামিম জাতীয় দলে ফিরলেও এখনও অনেকটা দায়িত্ব তার কাঁধে। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে দেড় মাসের ছুটি পেলেও নিজেকে পুরোপুরি প্রস্তুত করতে হবে এই সময়ের মধ্যে। এরপর ফিরতে হবে বিশ্ব আসরের মতো জায়গায় দলের অধিনায়ক হিসেবে। সে ক্ষেত্রে তাকে আরও শক্ত থাকতে হবে বলে মনে করেন মাশরাফী।
ম্যাশের মতে, ‘আমার কথা হলো, সে যেন ট্রেনিং করে পুরো ফিট হয়ে আসে। দায়িত্ব এখন পুরোপুরি ওর। প্রধানমন্ত্রীর সামনেই ওকে বলেছি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৫ হাজার রান করছিস, তোর ক্যারেক্টারে সেই দাপট থাকা উচিত। এত আমতা আমতা করে, এত সংশয় নিয়ে ক্রিকেট খেলা যাবে না। ক্রিকেটে অভিমানের কোনো মূল্য নেই। এভাবে অবসর নিলে তিন মাস পর তোকে কেউ মনে রাখবে না। মনে রাখার মতো কিছু করতে হবে।’
এদিকে, তামিম ইকবাল অবসর ভেঙে ফিরে আসার খবরে খুশির জোয়ার বইছে চট্টগ্রামে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে চলমান সিরিজে না খেললেও দেড় মাস বিরতি দিয়ে আবারও মাঠে ফেরার কথা জানিয়েছেন ওয়ানডে অধিনায়ক।
পার্বত্যকণ্ঠ নিউজ/রনি