খাগড়াছড়ি বাজারে ছেলেকে বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলেন মা-সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি পোস্ট ভাইরাল হলে আলোড়ন সৃষ্টি হয় পাহাড়জুড়ে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, সন্তানকে বিক্রি করে দিতে বাজারে তুলেছেন মা- এমন শিরোনামে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবরটি প্রকাশিত হওয়ার পর এ নিয়ে শুরু হয় আলোচনা- সমালোচনা। নিজের মা সন্তানকে বিক্রি করতে চাইছেন, তা অনেকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। বিষয়টির সত্যতা জানতেও আগ্রহী ছিলেন গণমাধ্যমকর্মীরা।
এ বিষয়ে খোঁজ নিতে শুক্রবার গনমাধ্যমকর্মীরা হাজির হয় খাগড়াছড়ি সদরের ভাইবোন ছড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের পাক্কুজ্যছড়ি গ্রামে। সেখানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রতিবেশী ও স্বজনদের সাথে কথা বলে ছেলেকে বিক্রি করতে বাজারে তোলার ঘটনাটির সত্যতা পাওয়া যায়। অভাব অনটনের সংসারে ছেলেকে ঠিকমতো খাবার ও ভরণপোষণ দিতে পারছিলেন না সোনালী চাকমা। তবে তার সিদ্ধান্তে স্বজন ও স্থানীয়রা হতবাক।
এদিকে শুধু অভাব নয়, সোনালী চাকমার কিছু অস্বাভাবিক আচরণের কথাও জানিয়েছেন তার পরিচিত মানুষেরা। তারা জানান, ৪৭ বছরের সোনালী চাকমার স্বামী শতোর্ধ্ব এবং পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। সোনালীর তিন ছেলের মধ্যে বড় দুই ছেলের একজন বিয়ে করে আলাদা আর মেঝো ছেলে খাগড়াছড়ি সদরে দিনমজুরের কাজ করেন। ছোট ছেলে রামকৃষ্ণকে নিয়ে পৈত্রিক ভিটায় একটি গোয়ালঘরের পাশেই থাকেন সোনালী। বাবা, মা ও ভাইয়ের বাড়ি পাশাপাশি হলেও অভাব অনটনে কেউই তার খোঁজ খবর রাখে না। এ অবস্থায় দিনমজুরি করে যা আয় হয়, তা দিয়ে সোনালীর সংসারও চলে না। এর মধ্যেই দীর্ঘদিন ধরে মৃগী রোগে ভোগছেন তিনি। তাই ছেলের মুখেই খাবার তুলে দিতে না পারা সোনালীর জন্য মৃগী সহ অন্যান্য রোগের ওষুধ কিনে খাওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। নানা প্রচেষ্টার পরও চিকিৎসা নিতে না পেরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি সদরের বাজারে নিয়ে ছেলেকে বিক্রি করে দিতে দর হাঁকেন সোনালী। ছেলেকে ছেড়ে থাকতে অনেক কষ্ট হবে জানিয়ে অভাব ঘুচাতে তাকে বিক্রির চেষ্টা অকপটে স্বীকার করেন সোনালী নিজেও। এ সময় কেঁদে ওঠেন তিনি।
সোনালী চাকমার ভাই ভারতব চাকমা বলেন, ‘দিদি (সোনালী) মানসিকভাবে কিছুটা ভারসাম্যহীন। মৃগী রোগী। এ জন্য মাঝেমাঝে এলোমেলো কথা ও কাজ করেন। গত বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি বাজার থেকে এক চেয়ারম্যান ফোন করে ছেলেকে বিক্রি চেষ্টার কথা জানালে বাবা গিয়ে দিদি ও ভাগিনাকে নিয়ে আসেন।’ এ সময় নিজেরদের অভাবের কারণে সোনালীর চিকিৎসা করাতে পারেন না বলেও আক্ষেপ করেন ভারতব।
ঘটনার জানাজানি–
বৃহস্পতিবার সকালে খাগড়াছড়ি বাজারে এসে সবজি বিক্রি করতে আসা কয়েকজন নারীর কাছে ছেলেকে বিক্রির প্রস্তাব দেন সোনালী। তাদের মধ্যে একজন তার ছেলেকে ৫ হাজার টাকায় কিনতে চান। কিন্তু সোনালী ১২ হাজার টাকার কমে বিক্রি করবেন না বলে জানিয়ে দেন।এভাবে দর কষাকষির এক পর্যায়ে সদর উপজেলার কমলছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুনীল জীবন চাকমা বিষয়টি জানতে পারেন। পরে তার হস্তক্ষেপে মা ও ছেলেকে উদ্ধার করে পরিবারের জিম্মায় দেয়া হয়।
ভাইবোনছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ানম্যান সুজন চাকমা জানান, তিনি ব্যক্তিগতভাবে ওই মা-ছেলের পাশে দাড়াঁনোর পাশাপাশি শিশুটিকে একটি সদনে থাকার ব্যবস্থা করতে চেষ্টা করছেন।
সংরক্ষিত আসনের সাংসদ বাসন্তী চাকমা জানান, পরিবারটির জন্য ৬ মাসের খাদ্য শস্য ও নগদ কিছু টাকা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া সদর ইউএনও-কে বলে একটি সরকারি ঘরের ব্যবস্থা করা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন ডা. মো. ছাবের জানান, মৃগী রোগীদের মানসিক সমস্যা হতে পারে। তবে বর্তমানে সময়মতো চিকিৎসা নিলে তা অনেকটাই ভালো হয়ে যায়।
তিনি জানান, জেলা সদর হাসপাতালে এই রোগে ভালো ও বিনামূল্যে চিকিৎসা হয়। সোনালী চাইলে তাকে স্বাস্থ্য বিভাগ সহযোগিতা দেবে।
এম/এস