দুই কণ্যা নিয়ে বাঁশ-ছনের ঝুপড়ি ঘরে বসবাস ছিল আলুটিলা হৃদয় মেম্বারপাড়া এলাকার বিধবা বরিকা ত্রিপুরার। সারাদিন অন্যের জুম ক্ষেতে হাড়ভাঙা পরিশ্রম শেষে ঝুপড়ি ঘরই তার ঠিকানা ছিল। বাইরে বৃষ্টি পড়ার আগেই তার ঘরে বৃষ্টির পানি ছুইয়ে পড়তো। রোদ-বৃষ্টির সাথে মিতালী করেই ঝুপড়ি ঘরই যেন বরিকা ত্রিপুরার ঠিকানা।
একটি নতুন ঘর না করতে পারার যন্ত্রনা যখন বরিকা ত্রিপুরাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায় তখন দেবদুত হয়ে তার হাতে ধরা দেয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন-২ প্রকল্প। ‘মেঘ না চাইতে বৃষ্টি’র মতো তাঁর কুঁড়ে ঘরে হাজির হয় মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজ তৃলা দেব ও মাটিরাঙ্গা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হেমেন্দ্র ত্রিপুরা। তাকে বরাদ্ধ দেয়া হয় দুই শতক জমিসহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের সেমিপাকা ঘর।
শুধু বিধবা পরিত্যাক্তা বরিকা ত্রিপুরাই নয় প্রধানমন্ত্রী আশ্রয়ন-২ প্রকল্পে রঙীন টিনের সেমি পাকা ঘর পেয়েছে ইছাছড়ার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হিমিন্দ্র ত্রিপুরা। এখন নতুন ঘরেই বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছে প্রতিবন্ধী হিমিন্দ্র ত্রিপুরা।
বিধবা পরিত্যাক্ত বরিকা ত্রিপুরা ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হিমিন্দ্র ত্রিপুরার মতো প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের রঙীন ঘরে ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে দু:স্থ, প্রতিবন্ধী, বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্ত নারীসহ গৃহহীন-ভূমিহীন ৪’শ ৬৯ পরিবার।
সম্প্রতি সরেজমিনে মাটিরাঙ্গা মাটিরাঙ্গা সদর ইউনিয়নের দূর্গম এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে পিছিয়েপড়া দুর্গম পাহাড়ী জনপদের পাহাড়ের কোনায় কোনায় মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে রঙীন টিনের পাকা ঘর। সেখানে স্থায়ী ঠিকানা গড়েছে পাহাড়ের দু:স্থ, অসহায়, স্বামী পরিত্যাক্ত ও প্রতিবন্ধীদের।
মাটিরাঙ্গা সদর ইউনিয়নের দূর্গম হৃদয় মেম্বার পাড়ার বিধবা বরিকা ত্রিপুরা বলেন, দশ বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছি। সংসারে উপার্জন করার মতো কেউ নেই। আমি পরের জায়গায় থেকে, অন্যের জুম ক্ষেতে দিনমজুরী করে দুই মেয়েকে নিয়ে অনেক কষ্টে বেঁচে আছি। দিন সেষে বাঁশ-ছনের ঝুপড়ি ঘরই ছিল আমার ঠিকানা। সরকারী ঘর আমার বেঁচে থাকার পথ তৈরী করে দিয়েছে। এখন দিন শেষে শান্তিতে ঘুমাতে পারবো।
মাটিরাঙ্গা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হেমেন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের রঙীন ঘর দুর্গম জনপদের মানুষের মাঝে স্বপ্ন জাগিয়েছে। সরকারের ইতিবাচক উদ্যোগের ফলে ভুমিহীন-গৃহহীন মানুষ জমিসহ পাকা বাড়ি পেয়েছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতেও ভুলেননি এ তৃনমুল জনপ্রতিনিধি।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. ইশতিয়াক আহম্মেদ বলেন, দফায় দফায় যাছাই-বাছাই শেষে উপকারভোগী নির্বাচন করা হয়ে থাকে। বরাদ্ধের ক্ষেত্রে দু:স্থ, প্রতিবন্ধি, স্বামী পরিত্যাক্তা ও বিধবাদের অগ্রধিকার দেয়া হয়। মাটিরাঙ্গায় এ পর্যন্ত ৪শ ৬৯টি গৃহহীন পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের সেমিপাকা ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজ তৃলা দেব বলেন, পাহাড়ের দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ নানা প্রতিকুলতাকে মোকাবেলা করে নির্মান করা হয়েছে এসব ঘর। সরকারী বিধি মোতাবেক ঘর বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে সুফল পাচ্ছে পিছিয়েপড়া মানুষ।
এম/এস