বান্দরবানের লামা উপজেলায় যাত্রী বেশে মোটর সাইকেল ড্রাইভারকে কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (১১জুলাই) দিবাগত রাত ১০টায় উপজেলার রূপসীপাড়া ইউনিয়নের রূপসীপাড়া হতে শিলেরতুয়া সড়কের হাতিরঝিরি এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
আহত মোটর সাইকেল ড্রাইভার মংয়োং থোয়াই মার্মা (৩৫) রূপসীপাড়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড টিয়ারঝিরি পাড়ায় থাকতো। বর্তমানে স্ত্রী সন্তান নিয়ে রূপসীপাড়া বাজারে ভাড়া বাসায় বসবাস করে। সে আলীকদম উপজেলার ৩নং নয়াপাড়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড বাবু পাড়ার মংচহ্লা মার্মার ছেলে।
মংয়োং থোয়াই মার্মা বলেন, রাত সাড়ে ৯টায় রূপসীপাড়া বাজারে তিনজন লোক তাকে শিলেরতুয়া যাওয়ার জন্য ভাড়া করে। যাত্রী তিনজনের মধ্যে পুতিয়া নামে একজনকে সে চিনতো, তাই সে ভাড়ায় যেতে রাজী হয়। যাত্রাপথে তিনজন তাকে হাতিরঝিরি নামক নির্জন স্থানে পৌঁছালে মোটর সাইকেল থামিয়ে এলোপাতাড়ি ছুরি মারতে থাকে। দুষ্কৃতিকারী পুতিয়া ও মোঃ সাইমুন তার হাত ধরে রাখে এবং মোঃ জামাল হোসেন তাকে ছুরি মারে। একপর্যায়ে তার হাত পা বেঁধে জবাই করার প্রস্তুতিকালে আরেকটি মোটর সাইকেল আসতে দেখে দুষ্কৃতিকারীরা তাকে ফেলে জঙ্গলে পালিয়ে যায়।
পরে আসা ওই মোটর সাইকেলের লোকজন ও স্বজনরা মংয়োং থোয়াই মার্মাকে উদ্ধার করে রাত সাড়ে ১০টায় লামা হাসপাতালে নিয়ে আসে।
লামা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মেসবাহ উদ্দিন জানান, আহত যুবকের সামনে (বুকে) ৭টি ও পিছনে (পিঠে) ২টি ছুরির আঘাত রয়েছে। পেটে ছুরির আঘাতে তার ভূরি বের হয়ে গেছে। আশংকাজনক হওয়ায় আহত ব্যক্তিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে।
মংয়োং থোয়াই মার্মা আরো বলেন, আমাকে ছুরি মারার সময় ঘাতক জামাল হোসেন বলছিল, আর মামলার স্বাক্ষী হবি ? গত কয়েকদিন আগে রূপসীপাড়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে এক গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় আমাকে মামলায় স্বাক্ষী করা হয়। সেই জন্য আসামীপক্ষ গিয়াস উদ্দিনের ভাই মোঃ জামাল হোসেন ভাড়া করা লোকজন দিয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
এদিকে ঘটনার পরপরই সন্ত্রাসী তিনজন ভাড়া করা মোটর সাইকেলটি নিয়ে শিলেরতুয়া দিয়ে পালিয়ে যেতে চেষ্টা করে। রূপসীপাড়া বাজার থেকে এই ঘটনার বিষয়ে ফোন পেয়ে শিলেরতুয়া এলাকায় স্থানীয় লোকজন পাহারা বসায় এবং সন্দেহভাজন দুইজনকে আটক করে। তাদের কাছ থেকে ছুরি ও ভাড়া করা মোটর সাইকেলটি উদ্ধার করে স্থানীয়রা। পরে লামা থানার পুলিশ উপস্থিত হলে আটক দুইজন সন্ত্রাসী, ছুরি ও মোটর সাইকেলটি বুঝিয়ে দেয়া হয়।
আটককৃতরা হল, মোঃ জামাল হোসেন (২৭) পিতাঃ আবুল কালাম, সাং- পূর্ব পুকখালী, ১নং ওয়ার্ড, ঈদগাঁ ইউনিয়ন, উপজেলা- ঈদগাঁ, জেলা- কক্সবাজার এবং মোঃ সাইমুন (২০) পিতাঃ মোঃ হারুনুর রশিদ, সাং পূর্ব গুমাথলি, ৯নং ওয়ার্ড, ঈদগাও ইউনিয়ন, উপজেলা- ঈদগাঁ, জেলা- কক্সবাজার। জনতার ধাওয়া খেয়ে পুতিয়া নামে একজন পালিয়ে যায়।
স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার আবু তাহের বলে, খরব পেয়ে আমি ছুঁটে আসি। গরীব মোটর সাইকেল ড্রাইভারকে এভাবে ক্ষতবিক্ষত করার ঘটনায় সু-বিচার দাবী করছি।
আটক দুইজনকে গ্রেফতারে শিলেরতুয়া বাজারে সঙ্গীয় পুলিশ সদস্য নিয়ে উপস্থিত হয় লামা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মোল্লা রমিজ জাহান জুম্মা। তিনি বলেন, জনতা দুইজনকে আটক করে আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে। সে সাথে ছুরি ও মোটর সাইকেলটি আমরা বুঝে নিয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এম/এস