পর্যটন নগরী কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার কৃতি সন্তান, মহেশখালী প্রেসক্লাব-এর প্রতিষ্ঠাতা, প্রবীণ সাংবাদিক, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক জনাব আলহাজ্ব শফিকুল্লাহ খান এক বিস্ময়কর প্রতিভার নাম। সর্বজন শ্রদ্ধেয় এই বরেণ্য সাংবাদিক একজন সৎ, দক্ষ শিক্ষক ও মহেশখালী উপজেলায় সাংবাদিকতা জগতের একজন পথিকৃৎ হিসেবে বেঁচে থাকবেন যুগ যুগ ধরে।
জন্ম:- কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার ছোট মহেশখালী দক্ষিণ নলবিলার সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব,প্রখ্যাত আলেম দ্বীন, মহেশখালী উপজেলার শিক্ষার আলো বিস্তারের অগ্রদূত,অবসরপ্রাপ্ত সরকারী শিক্ষক,অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা,জনাব মরহুম আলহাজ্ব মাওলানা মকবুল আহমদ ও মরহুমা মোমেনা বেগম (রহ:) -এর ঘর আলোকিত করে ১৯৬০ সালের ২’রা মে জন্ম নেন মহেশখালী উপজেলার রত্ন জনাব আলহাজ্ব সাংবাদিক শফিকুল্লাহ খাঁন।
আলোকিত সমাজ গড়ার কারিগর জনাব মরহুম আলহাজ্ব মকবুল আহমেদ-এর সুযোগ্য ১৩ সন্তানের মধ্যে জনাব সাংবাদিক শফিকুল্লাহ খান ছিলেন ৪র্থতম সন্তান।
শিক্ষা জীবন: মহেশখালী উপজেলার ফকিরাঘোনা মাদরাসার হাফেজে কোরআনের প্রখ্যাত উস্তায, শতশত শিক্ষার্থীর জনপ্রিয় শিক্ষক, হাফেজ মাওলানা মরহুম নুরুচ্ছফা (রহ:)এর নিকট পবিত্র কুরআন হিফজ করে মহেশখালীর প্রাচীনতম দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বর্তমান পুটিবিলা ইসলামীয়া ফাজিল মাদ্রাসায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পড়াশুনা শেষ করেন জনাব আলহাজ্ব শফিকুল্লাহ খান। এরপর চট্টগ্রামের পটিয়া শাহচাঁন্দ আউলিয়া মাদ্রাসা থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে। উচ্চশিক্ষার জন্যে পাড়ি জমান পাশের দেশ ভারতে। সেখানে সাংবাদিকতা,ধর্মীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন বিষয়ে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন এবং বাংলা,উর্দূ,ফার্সী, আরবি ও ইংরেজি ভাষায় পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। জ্ঞানার্জনের অদম্য স্পৃহার ফলে তিনি ভারত থেকে চলে যান পাকিস্তানের করাচী শহরে। সেখানের প্রসিদ্ধ বিদ্যাপীঠ করাচী জামেয়া হোসাইনিয়া মাদরাসা থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে দেশে ফিরে আসেন।
কর্মজীবন: দেশে ফিরেই তিনি ১৯৮৪সালে তৎকালীন পিছিয়েপড়া দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর গণমাধ্যম তথা সাংবাদিকতার প্রচার প্রসারে নিজেকে নিয়োজিত করেন এবং প্রতিষ্ঠা করেন মহেশখালী প্রেসক্লাব।এই প্রেসক্লাবের মাধ্যমে তিনি স্থানীয় শিক্ষিত ও সচেতন তরুনদের সাংবাদিকতা পেশার বিভিন্ন কলাকৌশল,নিয়ম-কানুন ইত্যাদি হাতে-কলমে শিক্ষা দেন। উচ্চতর ডিগ্রিধারী শিক্ষিত লোক হলেও তিনি তৎকালিন একজন প্রভাবশালী পেশাদার সাংবাদিক হিসেবেই বেশ পরিচিত ছিলেন। মূলত ১৯৮৪সালের পর থেকেই তিনি আপাদমস্তক একজন পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে এমন একটি সমাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন যেখানে এর আগে কেউ মহেশখালী উপজেলায় সাংবাদিকতা পেশার সাথে পরিচিত ছিলেন না। আশির দশক থেকে শুরু করে ২০১৮সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে তিনি সাংবাদিকতা পেশার চর্চা করেছেন। দৈনিক আজাদী, দৈনিক পূর্বকোণ, দৈনিক নয়া বাংলা,সাপ্তাহিক কক্সবাজার, দৈনিক সৈকত, সাপ্তাহিক রাঙ্গামাটিসহ জাতীয় ও আঞ্চলিক অনেক পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন জনাব আলহাজ্ব সাংবাদিক শফিকুল্লাহ খান। বহুমাত্রিক গুণাবলীর অধিকারী জনাব মরহুম সাংবাদিক শফিকুল্লাহ খানের পুরো জীবনটাই ছিল বর্ণিল বৈচিত্রে ভরপুর। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি ছিলেন একাধারে একজন হাফেজে কুরআন, আলেমে দ্বীন, প্রতিথযশা সাংবাদিক, মহেশখালী প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা, পাশাপাশি মসজিদের ইমাম ও চট্টগ্রাম শহরের এপোলো শপিং সেন্টার মসজিদ, পটিয়া, সীতাকুণ্ডসহ বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজের খতিব হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। একজন হাফেজে কোরআন,সাথে উচ্চতর ডিগ্রিধারী একজন আলেম, প্রথিতযশা একজন সাংবাদিক, মসজিদের খতিবসহ একই সাথে বহুগুণের অধিকারী বিরল সৌভাগ্যবান একজন ব্যক্তি জনাব আলহাজ্ব মরহুম শফিকুল্লাহ খান।সর্বশেষ তিনি দৈনিক নয়া বাংলা পত্রিকার প্রধান বার্তা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব কর্মরত ছিলেন। অত্যন্ত নম্র,ভদ্র ও সদালাপী এই প্রবীণ সাংবাদিক আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষায় ছিলেন খুবই সচেষ্ট ও যত্নবান।
পারিবারিক জীবন:
১৯৮৭সালের মে মাসে মহেশখালী উপজেলার কালারমার ছড়া ইউনিয়নের প্রবীণ আলেমেদ্বীন, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি শিক্ষক, সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব, জনাব আলহাজ্ব মাওলানা শামসুদ্দিন সাহেবের বড় মেয়ে জনাবা মোরশিদা খানমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন মরহুম সাংবাদিক মাওলানা শফিকুল্লাহ খান। ৫ছেলে ও ১মেয়ে সন্তানের জনক তিনি।
শিক্ষার আলো বিস্তারে জনাব মরহুম সাংবাদিক শফিকুল্লাহ খান:
তিনি তাঁর মরহুম শ্রদ্ধেয় পিতার প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ নলবিলা মকবুলাবাদ মাদরাসা ও হেফজখানার হাল ধরেন এবং দীর্ঘদিন সাফল্যের সাথে মাদ্রাসা পরিচালনা করেন।সে সময়ে ছোট মহেশখালীর অসংখ্য ছেলে-মেয়ে দূর-দূরান্ত তাঁর থেকে শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে মাদ্রাসায় ছুটে আসতেন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার আব্দুর রাজ্জাক কারিগরি মাদ্রাসার স্বনামধন্য শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। বিভিন্ন সময়ে নানান প্রতিষ্ঠানে তাঁর কর্মজীবন ও শিক্ষকতা জীবনে গড়ে তুলেছেন শত শত শিক্ষার্থী। অসংখ্য শিক্ষার্থীকে শিক্ষাদানের মাধ্যমে এলাকায় শিক্ষার আলো বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি।
মসজিদ পরিচালনার দায়িত্ব পালন ও বৃক্ষরোপন:
জনাব আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা মরহুম সাংবাদিক শফিকুল্লাহ খান দীর্ঘদিন ধরে অত্যন্ত দক্ষতা ও সাফল্যের সাথে দক্ষিণ নলবিলা মকবুলাবাদ মাদরাসা ও হেফজখানা এবং দক্ষিণ নলবিলা (রাহাতজান পাড়া) জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। পরিচালনার দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে তিনি মসজিদ মাদ্রাসা,মক্তব ও কবরস্থানের ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেন। ১৯৯১সনে ভয়াবহ ঘুর্ণিঝড়, বন্যা আর তুফানের পর বিপর্যস্ত এলাকায় বাংলাদেশ সরকার মূল্যবান গাছ রোপণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন সরকারের বনবিভাগ। শ্রদ্ধাভাজন জনাব মরহুম মাওলানা সাংবাদিক শফিকুল্লাহ খান-এই সংবাদটি শুনার সাথে সাথে নিজ এলাকা দক্ষিণ নলবিলায় গাছ রোপণ করার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে পরিবেশ ও বন বিভাগে মেহগুনিগাছ, সেগুনগাছসহ মূল্যবান গাছের চাহিদাপত্র সম্বলিত এটি চিঠি লিখেন। সে অনুযায়ী বনবিভাগ গাছের চারা বরাদ্দ দিলে জনাব আলহাজ্ব মরহুম শফিকুল্লাহ খান গাছের চারা গুলো মসজিদ প্রাঙ্গণে আশেপাশে রোপন করেন এবং বড় হওয়া পর্যন্ত সেগুলোর যত্ন নেন। পরবর্তীতে এই গাছগুলো দিয়ে রাহাতজান পাড়া জামে মসজিদের অনেক উপকার হয়, উন্নয়ন সাধিত হয়। মসজিদ মাদ্রাসার কল্যাণে শ্রদ্ধাভাজন মরহুম শফিকুল্লাহ খান সম্পূর্ন নিঃস্বার্থভাবে কাজগুলো করেছিলেন।
সামাজিক ও রাজনৈতিক সচেতনতা:
বৃহত্তর গোরকঘাটা ইউনিয়ন থেকে ভাগ হয়ে ছোট মহেশখালী ইউনিয়ন পরিষদ প্রতিষ্ঠার জন্য জনাব আব্দু সামাদ চেয়ারম্যান ও মরহুম মোহাম্মদ আলী চেয়ারম্যানের সাথে সাংবাদিক শফিকুল্লাহ খান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। নিজ এলাকার সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির সুদূরপ্রসারী চিন্তা থেকেই ছোট মহেশখালী ইউনিয়ন পরিষদ প্রতিষ্ঠা লাভের পর অনুষ্ঠিত সর্বপ্রথম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জনাব আব্দুস সামাদ চেয়ারম্যান ও মরহুম মোহাম্মদ আলী চেয়ারম্যানের সাথে চেয়ারম্যান পদে দক্ষিণ নলবিলা (রাহাত জান পাড়া) থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন জনাব আলহাজ্ব মরহুম সাংবাদিক শফিকুল্লাহ খান। চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার মধ্য দিয়ে নিজ এলাকার রাজনৈতিক সচেতন ও জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সাংবাদিক শফিকুল্লাহ খান আলোরবর্তিতা হিসেবে আগামী প্রজন্মকে পথ দেখিয়ে গেছেন। দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর গোরকঘাটা-জনতা বাজার সড়ক ও রশিদ মিয়া ব্রিজ নির্মাণে অনবদ্য ভূমিকা পালন করেন তিনি। এছাড়াও, স্থানীয় মসজিদ মাদ্রাসা,মকতব ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নের সার্বিক বিষয়ে নিঃস্বার্থ অবদান রাখেন বরেণ্য সাংবাদিক মরহুম শফিকুল্লাহ খান।
এলাকার গ্রহণযোগ্য জনপ্রিয় ধর্মীয় আলোচক:
জনাব আলহাজ্ব মরহুম সাংবাদিক শফিকুল্লাহ খান ছিলেন বহুমাত্রিক গুণাবলীর অধিকারী একজন ব্যক্তি। স্থানীয় (রাহাতজান পাড়া) জামে মসজিদে তিনি কোরআন হাদিসের আলোকে গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজ নসিহত পেশ করতেন। এলাকার সর্বস্তরের লোকেরা তাঁর সুললিত কন্ঠের গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজ নসিহত মনোযোগ সহকারে শুনতেন। জটিল কঠিন মাসয়ালা তিনি সহজ,সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় মানুষদের বুঝাতে পারতেন।ফলে একজন নিরহংকারী গ্রহণযোগ্য হাফেজ ও আলেম হিসেবে তিনি এলাকার সর্বস্তরের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন।
নিরহংকার ও সবার সাথে মিশুক একজন উদারমনের অধিকারী ব্যক্তি:
এলাকার ছোট বড় সবার সাথে হাসিখুশি মনে কথা বলা ছিল হাফেজ মাওলানা সাংবাদিক শফিকুল্লাহ খানের অন্যতম গুণাবলী। এলাকায় কেউ মৃত্যুবরণ করলে তিনি ছুটে আসতেন এবং মাইয়েতের গোসল দাফন জানাজা ও কবরস্থ পর্যন্ত প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে সহযোগিতায় লেগে থাকতেন। সর্বস্তরের মানুষের সাথে গল্প আড্ডা দিতেন। এলাকার মুসল্লিদের নিজ বাড়িতে নিয়ে গিয়ে খাবার,নাস্তা,পানি খাওয়াতে পারলে খুশি হতেন।
বিভিন্ন সময়ে এলাকার মসজিদ মাদ্রাসা ও কবরস্থান তিনি নিজ হাতে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করতেন নিঃস্বার্থভাবে।
হজ্বপালন ও বিদেশ সফর:
১৯৮৭সালে বিয়ের পর তিনি হজ্জ পালনের উদ্দেশ্যে পবিত্র মক্কায় গমন করেন। এছাড়াও পড়াশুনা, সাংবাদিকতা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে,কর্ম-পেশার প্রয়োজনে ভারত, সৌদি আরব,ইরান পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমন করেন।
মৃত্যু ও শেষ বিদায়:
দুনিয়ার জীবনে আমরা দেখি ফুলবাগানের সবচেয়ে সুন্দর পরিপাটি আকর্ষণীয় ফুলটিই বাগানের মালিকের বেশি নজর কাড়ে। হয় তো মহান আল্লাহ জনাব আলহাজু মরহুম মাওলানা শফিকুল্লাহ খান কে বেশী ভালবাসতেন তাই ১৩ভাই বোনের মধ্যে সবার প্রথমেই তাঁকে পৃথিবী থেকে চিরকালের জন্যে নিয়ে গেছেন৷ স্ত্রী, ৬সন্তান, নাতি- নাতনি ও ১২ ভাই-বোনসহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন, সহকর্মী, সহপাঠী, শত শত শিক্ষার্থী ও বহু গুণগ্রাহীসহ হাজারো মানুষকে শোকসাগরে জানিয়ে ২১শে জুন ২০২১, সোমবার দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬২ বছর বয়সে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন দক্ষিণ নলবিলা রাহাত জান পাড়া জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সম্মানিত সাবেক সভাপতি, মহেশখালী প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা, বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী, সকলের প্রিয়, সর্বজন শ্রদ্ধেয় জনাব আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা শফিকুল্লাহ খান (রহঃ)।(ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)
পরেরদিন ২২শে জুন ২০২১ মঙ্গলবার, অসংখ্য শোকাহত মানুষের উপস্থিতিতে সকাল ৯টা ৩০মিনিটে দক্ষিণ নলবিলা (মৌলভি পাড়া) কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ময়দানে জানাজার নামাজের মধ্যদিয়ে অশ্রুসিক্ত শোকাহত মানুষকে চিরবিদায় জানিয়ে মরহুম পিতা-মাতার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হন মহেশখালীর বরেণ্য সাংবাদিক ও হাফেজ মাওলানা শফিকুল্লাহ খান। জানাজার নামাজে ইমামতি করেন তাঁর ৩য় ছেলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাফেজ আশরাফ উল্লাহ খাঁন আরাফাত।
সর্বমহলে অত্যন্ত সুপরিচিত প্রবীণ সাংবাদিক জনাব আলহাজ্ব শফিকুল্লাহ খাঁনের মৃত্যুর সংবাদ শুনে শোকাহত পরিবারে নানান পেশা, নানান শ্রেণীর মানুষের ঢল নামে৷ শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে পুরো এলাকা। আত্মার মাগফেরাত কামনায় এবং শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে মহেশখালী উপজেলা ইলেকট্রিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার বিভিন্ন স্তরের গণমাধ্যমকর্মী, সমাজসেবক, রাজনীতিবীদ ও স্থানীয় প্রশাসনের ব্যক্তিবর্গসহ অসংখ্য শোকাহত মানুষ ছুটে আসেন প্রবীণ এই সাংবাদিকের গ্রামের বাড়িতে। মহেশখালী -কুতুবদিয়া (কক্সবাজার-২)আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিক এমপি-ঢাকা থেকে টেলিফোনের মাধ্যমে জনাব মরহুম সাংবাদিক শফিকুল্লাহ খানের শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। বরেণ্য এই সাংবাদিকের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাতে মরহুমের পরিবারে ছুটে আসেন মহেশখালী উপজেলার সম্মানিত নির্বাহী অফিসার জনাব মাহফুজুর রহমান, ছোট মহেশখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জনাব মুহাম্মদ শাহজাহান, জনাব আব্দুস সামাদ ও জনাব সিরাজুল মোস্তফা বাঁশি, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জনাব মাওলানা জহির উদ্দিন, আওয়ামী লীগ নেতা মাস্টার এনামুল করিম, কক্সবাজার জেলা প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি সাংবাদিক ফরিদুল আলম শাহিন ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব আলহাজ্ব সালেহ আহমদসহ অনেকে।
মহেশখালী প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মরহুম আলহাজ্ব শফিকুল্লাহ খান-এর অকৃত্রিম, নিঃস্বার্থ ও অনন্য অবদানকে স্মরণ করে ২৫শে জুন ২০২১ রোজ: শুক্রবার উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণের মহেশখালী প্রেসক্লাবের আয়োজনে প্রেসক্লাব সভাপতি জনাব আবুল বশর পারভেজ-এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জনাব এম. ছালামত উল্লাহ এর সঞ্চালনায় প্রেসক্লাব পরিবার ও উপজেলার সর্বস্তরের গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে এক স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত স্মরণ সভা শেষে মহেশখালী প্রেসক্লাব পরিবার ও সর্বস্তরের গণমাধ্যম কর্মীগণ প্রবীণ সাংবাদিক জনাব মরহুম শফিকুল্লাহ খান-এর বাড়িতে গিয়ে শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। মহেশখালী প্রেসক্লাবের একজন প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বরেণ্য সাংবাদিক জনাব শফিকুল্লাহ খান-এর মৃত্যুতে এক শোকবার্তায় মহেশখালী প্রেসক্লাব যেমনিভাবে উল্লেখ করেছেন।
অবহেলিত মহেশখালী উপজেলার গণমানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে উপজেলার সর্বস্তরের শিক্ষিত সচেতন জনসাধারণের মাঝে সাংবাদিকতা পেশার প্রচার প্রসার করার সুমহান উদ্দেশ্যে অক্লান্ত পরিশ্রম, নিরলস চেষ্টা-প্রচেষ্টা, ও স্বীয় কর্মদক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে জনাব আলহাজ্ব মরহুম শফিকুল্লাহ খান ১৯৮৪ সালে মহেশখালী প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন৷ মহেশখালী প্রেসক্লাবের একজন প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে জনাব আলহাজ্ব মরহুম শফিকুল্লাহ খান আমাদের মাঝে আজীবন বেঁচে থাকবেন। আমরা তাঁর অবদানের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি। মহেশখালী উপজেলার সর্বজন শ্রদ্ধেয় এই প্রবীণ সাংবাদিকের মৃত্যুতে মহেশখালী প্রেসক্লাব পরিবার গভীরভাবে শোকাহত৷ আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।”
মহেশখালী উপজেলায় সাংবাদিকতা জগতের পথিকৃৎ ও মহেশখালী প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সুপরিচিত অত্যন্ত উদার,সৎ, দক্ষ ও প্রতিভাবান এই বরেণ্য সাংবাদিকের দীর্ঘ কর্মময় জীবন নিয়ে মহেশখালী প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এম/এস