ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর
উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রাম। বেশির ভাগ মানুষ কৃষিজীবী। জমিতে ধান, সবজির পাশাপাশি কেউ কেউ জড়িয়েছেন সূর্যমুখী চাষে। তাঁদের মধ্যে ব্যতিক্রম মোহাম্মদ আলি আজ্জম সরকার। তিনি হেঁটেছেন ভিন্ন পথে। ইউটিউব দেখে সখের বসে চাষ করছেন ড্রাগন ফলের। এখানেই শেষ নয়,আলি আজ্জমে’র ড্রাগন পথ দেখাচ্ছে অন্যদের। তাঁর দেখাদেখি ড্রাগন ফল চাষ শুরু করেছেন অনেকে। সম্প্রতি মোহাম্মদ আলি আজ্জম সরকারে’র ফলের বাগান ঘুরে দেখা গেছে, পাঁচ ফুট উচ্চতার খুঁটি পেঁচিয়ে উঠেছে ড্রাগন ফলের গাছ। গাছে ঝুলছে তিন থেকে চারটি কাঁচা-আধা পাকা ড্রাগন ফল। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে ড্রাগনের চাষপদ্ধতি জেনে নিচ্ছেন।বাগানে কথা হয় মোহাম্মদ আলি আজ্জম সরকারে’র সঙ্গে, কথা বলে জানা যায়, ইব্রাহিমপুর গ্রামে পৈতৃক সম্পত্তি প্রায় ৬ বিঘা জমির পুরো জায়গাজুড়ে তিনি ২০২১ সালে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেন।তাঁর এই ড্রাগন চাষে উদ্ভোদ্ধ করেন তার দুই ভাই আবুল হোসেন সরকার এবং মিজানুর রহমান সরকার।৮০০ খুঁটিতে তিনি প্রায় ৩২০০ চাড়া রুপন করেন। চারা রোপণের এক থেকে দেড় বছরের মাথায় গাছে ফল আসে। সম্প্রতী তাঁর বাগান থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০০ কেজি ড্রাগন ফল বিক্রি করতে পারতেছেন। প্রতিটি গাছে তিন থেকে চারটি ফল ধরেছে।একটি গাছ পরিপক্ব হতে তিন থেকে চার বছর সময় লাগে। পরিপক্ব গাছে ২৫ থেকে ৩০টি ড্রাগন ফল ধরে। পরীক্ষামূলক চাষে সাফল্য আসায় তিনি ড্রাগন ফলের চাষ আরও বাড়াচ্ছেন। বাজারে ড্রাগন ফলের চাহিদাও অনেক।নবীনগর পৌর এলাকার একাধিক চাষি ড্রাগন চাষে নেমেছেন। তারা জানান, ড্রাগন চাষে ঝুঁকি কম, ফলের দামও বেশি দেখে অনেকে উৎসাহিত হচ্ছেন। কৃষি ব্যাংক অথবা বিভিন্ন এনজিও সংস্থা ড্রাগন চাষের বিপরীতে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করলে অন্যান্য চাষিরা ড্রাগনে ঝাঁপিয়ে পড়তেন।নবীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জগলুল হায়দার বলেন,ড্রাগন দক্ষিণ আমেরিকার জঙ্গলে জন্ম নেওয়া লতানো ক্যাকটাস গাছের ফল। বর্তমানে থাইল্যান্ড, চীন, মালয়েশিয়া, ভারত ও বাংলাদেশে ড্রাগন ফলের চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া ড্রাগন চাষের উপযোগী। চার প্রকারের ড্রাগনের মধ্যে বাণিজ্যিক চাষের জন্য বাউড্রাগন-১ (সাদা) ও বাউড্রাগন-২ (লাল) উপযোগী।আমাদের নবীনগর উপজেলার ইব্রাহীমপুর,পৌরসভা,শ্যামগ্রাম,রছুল্লাবাদ,বড়াইল সহ বিভিন্ন যায়গায় একাধিক কৃষক প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে এই বছর ড্রাগন চাষ করেছে।আমার ধারনা প্রায় দুই কোটি টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি হবে এবছর।আমাদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে যারা এই চাষে আগ্রহী তাদের সঠিক পরামর্শ দিয়ে থাকি।তিনি আরো জানায়,সব ধরনের মাটিতে ড্রাগন চাষ হয়। তবে উঁচু জমিতে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তিন মিটার পরপর গর্ত করে চারা রোপণ করতে হয়। বছরের যেকোনো সময় চারা রোপণ করা যায়। তবে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে হলে ভালো। সিমেন্ট অথবা বাঁশের খুঁটিতে গাছ বেঁধে দিতে হয়। গাছে ফুল আসার ২০-২৫ দিনের মধ্যে ফল ধরে। প্রতিটি ফলের ওজন হয় ২০০-৬০০ গ্রাম। ১২-১৮ মাস বয়সী একটি গাছে ৫-২০টি ফল ধরে। পরিপক্ব একটি গাছে সর্বোচ্চ ৮০টি ফল পাওয়া যায়। ছাদবাগানের টবেও ড্রাগন ফল উৎপাদন করা যায়।
এম/এস