খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে শ্যালক ও কতিপয় স্থানীয় প্রভাবশালীর কু-পরামর্শে শ্বশুরের প্রতারণার শিকার হয়েছেন নিজ মেয়ের জামাই কামরুল ইসলাম।
অতি কষ্টে উপার্জিত টাকার জমি হারিয়ে এখন সর্বস্বান্ত হয়ে সুবিচারের জন্য দ্বারেদ্বারে ঘুরছেন মেয়ে ও জামাই কামরুল।
আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও উপজেলার ২৫২নং থলিপাড়া মৌজার টিএন্ডটি পাড়ার অধিবাসী পারভিন, পিতা সাহাব উদ্দীন, রোজিনার স্বামী সিরাজুল ইসলাম, ফরিদুল ইসলাম ও শ্যালকদের অপতৎপরতায় ২৪মাইল মোড়ে মহালছড়ি সরকারি কলেজের সামনে স্থানীয় মো. কামরুল ইসলামের সাড়ে ৩শতক জমি ইতোমধ্যে হাত ছাড়া হয়ে গেছে।
কামরুল ইসলামের শ্যালক শহিদুল, সফিকুল ও শাকিল লোভের বশবর্তী হয়ে কৌশলে তাদের পিতা খলিলুর রহমানকে নিজের কব্জায় নিয়ে ৬লাখ টাকায় জমি বিক্রি করেন।
মহালছড়ি থানাসহ এডিএম কোর্টে দায়ের হওয়া অভিযোগ থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
জানা যায়, ভুক্তভোগী কামরুল ইসলামের স্ত্রী মোছা. মোর্শেদা বেগম(২৫) কর্তৃক থানায় দেওয়া অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, গত ২৬/১২/২০২১ পিতা মো.খলিলুর রহমান ২৪মাইল মহালছড়ি সরকারি কলেজের সামনে থলিপাড়া মৌজায় ২১৭(ক)নং হোল্ডিং এর ০.৮(আশি শতক) একসনা বন্দোবস্তীর আবেদিত ১ম শ্রেণির ভূমি না-দাবীনামা ও দখল হস্তান্তর মূলে প্রাপ্ত হয়ে নগদ টাকার প্রয়োজনে ০.০৩-১/২(সাড়ে তিন শতক) জমি মোট ৩লক্ষ টাকা মূল্যে নগদ ২লক্ষ টাকা বুঝিয়া পাইয়া স্বামী কামরুল ইসলামের নিকট আঞ্চলিক দলিল মূলে বিক্রি করেন। ২৫/০১/২০২২ইং আরো ৪৫হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী সমূদয় টাকা মে’২২ইং তারিখের মধ্যে পরিশোধ করা হবে। তখন থেকে আমরা ওই জায়গায় ঘর করার জন্য ইট, বালি, সিমেন্ট ক্রয় করে স্তুপাকার করে রাখি। কিন্তু ১৭/০২/২০২২ইং ভাগিনা মো. খায়রুর বাদশা মোবাইলে জানায়, আমার পিতা খলিলুর রহমান ওই জায়গা পারভিন ও রোজিনা আক্তারের নিকট পূণরায় অধিক মূল্যে বিক্রি করে দিয়েছেন।
এ খবরে পিতার সাথে কথা বললে তিনি জানান, ২৫/৩/২২ইং বাকি টাকা দিয়ে জমি পুরোপুরি ভোগ-দখলে চলে যাবি। তার কথা মতো ওই দিন বাকি টাকা নিয়ে এসে দেখি আমার পিতা আমার স্বামীর ক্রয়কৃত জায়গা অন্যদেরকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। তখন আমরা জায়গা বুঝে চাইলে আমার ভাইয়েরা জায়গা বুঝিয়ে দিবে না বলে হুমকি দেয়।
পরে নিরুপায় হয়ে এ ব্যাপারে ১৭/৪/২০২২ইং খাগড়াছড়ি এডিএম কোর্টে ১৪৫ধারায় মামলা নং- ৬২/২০২২দায়ের করা হয়।
এরপরই বিরোধপূর্ণ ওই জমিতে কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।
এতে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে আদালতের মামলা ও নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করেই ভূমিদস্যুদের খপ্পরে পড়ে কামরুল ইসলামের জমি পারভিন ও রোজিনা আক্তারের নিকট বিক্রি ও নালিশী জায়গার উপর ক্রয়সূত্রে জমির মালিক পারভিন আক্তার ও রোজিনা আক্তার উল্লেখ করে গত মঙ্গলবার(১৭ মে) জোরপূর্বক সাইনবোর্ড স্থাপন করেন আমার বাবা।
এ বিষয়ে বহুবার সালিশের মাধ্যমে মীমাংসা করতে গেলে ভুক্তভোগীরা তার নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
সালিশী বৈঠকের উপস্থিত এলাকার লিডার মো. সুলতান আহমদ বলেন, এ ব্যাপারে কামরুল তার শ্বশুর খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে মহালছড়ি থানায় অভিযোগ করার সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। থানা থেকে উভয় পক্ষকে নিয়ে সামাজিকভাবে মিমাংসা করার জন্য আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। খলিলুর রহমান তার জামাইয়ের নিকট জায়গা বিক্রি করার পর টাকার লোভে একই জায়গা অন্যত্র বিক্রি করেছেন স্বীকার করে বলেন, এটা আমার ভূল হয়েছে। এ সাড়ে ৩শতক জায়গার পরিবর্তে পাশাপাশি প্রায় ২শতক(১৮ফুট) জায়গা জামাইকে দিবো। কিন্তু এই জায়গা দিতেও খলিলুর রহমানের স্ত্রী কামরুলের শ্বাশুড়ি বাঁধা প্রদান করলে কামরুল আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাতের আঁধারে নালিশী জায়গায় পারভিন ও রোজিনার মালিকানা সম্বলিত সাইনবোর্ড স্থাপন করে। প্রভাবশালী চক্রটি যেখানে আদালতের আদেশ অমান্য করার দূঃসাহস দেখাতে পারে সেখানে সামাজিকভাবে আমাদের পক্ষে সমাধান করা অসম্ভব।
শ্বশুর কর্তৃক প্রতারণার শিকার কামরুল ইসলাম বলেন, আমি অনেক কষ্টের টাকা দিয়ে আমার শ্বশুরের নিকট থেকে সাড়ে ৩শতক জায়গা ৩লাখ টাকায় ক্রয় করি। এ জায়গার উপর ঘর নির্মাণের জন্য ইট, বালি ও সিমেন্টও মজুদ করি। কিন্তু হঠাৎ খবর পাই আমার ক্রয়কৃত জায়গা আমার শ্বশুর বেশি টাকা পেয়ে প্রভাবশালী মহলের নিকট বিক্রি করছেন। নিজের মেয়ে ও মেয়ে জামাইয়ের সুখ-শান্তির দেকে ভ্রূক্ষেপ না করে টাকার লোভে পরে আমার শ্বশুর-শ্বাশুরী বিবেক-বিবেচনাহীন কাজ করায় আমরা রীতিমতো হতবাক। পৃথিবীতে আপন বলতে কেউ আর থাকলোনা!এটাই প্রমান দিলেন আমার শ্বশুর খলিলুর রহমান ও তার স্ত্রী। প্রশাসনের কাছে আমার আকুতি ও সেই সাথে সু-দৃষ্টি কামনা করছি, যাতে আমার কষ্টার্জিত টাকায় কেনা জায়গা আমি ফেরত পাই।
এ বিষয়ে খলিলুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে মহালছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে আদালতের নিষেধাজ্ঞা ভায়লেট করে নালিশী জায়গায় কেহ দখল করার চেষ্টা করলে তদন্তে সত্যতা পেলে আমরা কোর্টে লিখবো।
এম/এস