বার্ধক্যের ভাড়ে নুয়ে পড়েছে মোমেনা বেগম (৮৫)। লাঠিতে ভর করে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলে সে। মৃত স্বামীর রেখে যাওয়া একখন্ড জায়গায় ৪ মেয়ে, ১ ছেলে ও তাদের পরিবার পরিজন মিলে ৩০/৪০ জনের বসবাস। কৃষিকাজ ও দিনমজুরি করে চলে তাদের সংসার। দারিদ্র্যতার সংকটে জর্জরিত ও নিঃস্ব পরিবারটি যখন কোনমতে সংগ্রাম করে চলছিল, তখন তাদের উপর পড়ে ভূমি জালিয়াতি চক্রের মানব রুপি কিছু শকুনের কুদৃষ্টি।
মৃত স্বামীর রেখে যাওয়া লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড পুলাং পাড়ায় ৩০১নং সরই মৌজার আর/২৩০নং হোল্ডিং এর ৪ একর ৫০ শতক জমি জাল বায়নানামা ও ভুয়া রেজিষ্ট্রি করে নেয় জালিয়াতি চক্র।
মোমেনা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, তার স্বামী মৃত আব্দুল বারি গাজি ১৯৮২-৮৩ সনে ৪ একর ৫০ শতক জায়গা সরকার থেকে বন্দোবস্ত পায়। ৫০ বছরের অধিক সময় ধরে তারা এই জায়গা ৭টি বসতবাড়ি, জমিতে চাষাবাদ ও পাহাড়ে গাছ লাগিয়ে ভোগদখলে রয়েছে। মাস দুয়েক আগে আমার বড় ছেলে আব্দুল হান্নান পিতার নামে জায়গার জবানবন্দি তুললে দেখতে পায় রেকর্ডপত্রে তার বাবার নামে শুধুমাত্র ২০ শতক জায়গা আছে। বাকী ৪ একর ৩০ শতক জায়গা সরই ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মৃত আবুল বশরের ছেলের নামে শাহ আলমের নামে রেকর্ডপত্র হয়ে গেছে। কিভাবে আমাদের দখলীয় জায়গা শাহ আলমের নামে হয়ে গেছে আমরা জানিনা ? আমি ও আমার সন্তানরা কাউকে জায়গা বিক্রি করি নাই।
তিনি আরো বলেন, আমার স্বামী মৃত আব্দুল বারি গাজি ২০০৪ সালে মৃত্যুবরণ করে। ২০১৮ সালে কিভাবে আমার মৃত স্বামী শাহ আলমকে জায়গা বিক্রি করলো ?
এদিকে বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে নিন্দার ঝড় ওঠে। প্রতিকার চেয়ে এমন জালিয়াতির ঘটনা প্রশাসনকে অবহিত করতে এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য পুলাং পাড়াবাসী এক হয়ে মানববন্ধনের ডাক দেয়। সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারী) বেলা সাড়ে ১১টায় মৃত আব্দুল বারেক গাজি ওয়ারিশদের বসতবাড়ি ও ৫০ বছরের ভোগদখলীয় ৪ একর ৩০ শতক জায়গা ভুয়া জাল দলীল দিয়ে হাতিয়ে নেয়ার প্রতিবাদে স্থানীয় জনসাধারণ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। এলাকায় শতাধিক নারী পুরুষ মিলিত হয়ে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
মানববন্ধনে নেতৃত্ব দেয় মৃত আব্দুল বারি গাজির ছেলে আব্দুল হান্নান (৫৫)। তিনি বলেন, আমাদের মাথা গুঁজার শেষ আশ্রয়টুকু শাহ আলম সহ জালিয়াতি চক্র কেড়ে নেয়ার পায়তারা করছে। আমরা বিচার চাই।
পুলাং পাড়ার সর্দার মোঃ আবু দাউদ ও সেক্রেটারি আব্দুল বারেক বলেন, এমন ঘটনায় আমরা হতভম্ব। ৫০ বছরের অধিক সময় তারা দখলে। তারা কাউকে জায়গা বিক্রি করেনি। কিভাবে এই জায়গা অন্যের নামে হয়ে গেল ? ভূমি অফিস, রেজিষ্ট্রেশন অফিসের কিছু অসাধু কর্মচারী এবং দলীল লেখক সহ বড় একটি চক্র এই জালিয়াতিতে জড়িত। তাদের কাছে আমরা কেউ নিরাপদ নয়।
অভিযুক্ত শাহ আলম বলেন, আমি আব্দুল বারি থেকে ৪ একর ৩০ শতক জায়গা ক্রয় করেছি। আমি আব্দুল বারিকে চিনিনা। তার বাড়ি ও জায়গা কোথায় আমি জানিনা।
সরই ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইদ্রিস কোম্পানি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, শাহ আলম সহ জালিয়াতি চক্রের সবাইকে আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। মোমেনা বেগমের পরিবারটি অসহায়।
এদিকে মানববন্ধনের বিষয়টি জানতে পেরে লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ শহীদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পুলাং পাড়া বাজারে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। মোমেনা বেগমের পরিবারকে আইনের আশ্রয় নিতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এবিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজী আতিকুর রহমান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটিকে আসতে বলেছি। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিব ও দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।