• মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৫০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
চুরি হওয়া মোটরসাইকেল উদ্ধার করলো বান্দরবান সেনা জোন আর্ন্তজাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উদযাপন গোয়ালন্দে পদ্মার ভাঙন রোধে জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে লামায় ওয়ালটনের ডিজিটাল ক্যাম্পেইন সিজন ২১ উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র‍্যালী দেশ সংস্কারে নির্বাচন দিয়ে সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি বাঘাইছড়িতে শান্তি সম্প্রীতির লক্ষে স্থানীয় সুশীল সমাজের মত বিনিময় সভা চোর পেটানোর ঘটনায় পাল্টা হামলা, হিন্দু মুসলিম আহত ১০  নেত্রকোনায় মণ্ডপে মণ্ডপে নারী ভক্তদের সিঁদুর খেলা অনুষ্ঠিত বিসর্জনের মধ্য দিয়ে কৈলাসে দেবীকে বিদায় জানালেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা  উন্নয়ন কর্মকান্ড ও অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাসী বিএনপি   রাজস্থলীতে ৪ টি পূজা মন্ডবে প্রতিমা বির্সজনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো শারদীয় দূর্গোৎসব কাপ্তাই থানা পুলিশ এর অভিযানে ৪১ লিটার চোলাই মদ সহ দুই জন আটক

“ইতিহাসের অন্ধকারতম অধ্যায়”

নিজস্ব প্রতিবেদক: / ৬২১ জন পড়েছেন
প্রকাশিত : শনিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২১

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় বলতে হয়,

“বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি, চির-কল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।”

মানব ইতিহাসের কোথাও এর তুলনা খুঁজে পাওয়া যায় না। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের জন্যই জন্ম হয়েছে রাষ্ট্রের, অপরাধী শাস্তি না পেলে রাষ্ট্রের অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়ে। একটি হত্যার বিচার না হলে বহু হত্যা সংঘটিত হয়। এ অবস্থায় সাধারণ ও শান্তিপ্রিয় মানুষের জীবন হয়ে পড়ে দুর্বিষহ। কিন্তু এও আমরা জানি যে, মানুষের শুভ বোধও কল্যাণী সত্তাই শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়। অমাবস্যা যত অন্ধকার হোক না কেন, সে-আঁধার এক সময় কেটে যায়। ইতিহাসের আস্তাকুড়ে কালে কালে নিক্ষিপ্ত হয়েছে স্বৈরশাসকেরা, জাতীয় ঐতিহ্য ও মূল্যবোধ বিবর্জিত শাসকগোষ্ঠী। মীর জাফর-মোশতাকেরা চিরদিন বিশ্বাসঘাতকের ঘৃণ্য পরিচয়ের আবর্জনাস্তূপে নিক্ষিপ্ত হয়।

তার ব্যক্তিত্ব, চিন্তাশক্তি ছিল অতুলনীয়। তার ভরাট কণ্ঠস্বর, সময়োপযোগী শব্দচয়ন, বক্তব্যের প্রকাশভঙ্গি, শারীরিক উচ্চতা ও নেতৃত্বসুলভ চেহারা, দৃঢ়তা— সবকিছুই তাকে আকর্ষণীয় করে তুলেছিল। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন তিনি। বাঙালি জাতিসহ অধিকারহারা মানুষদের তিনি অনুপ্রাণিত করেছেন, উৎসাহিত করেছেন। তিনি ছিলেন নির্মোহ ও নির্লোভ একজন মানুষ। বাঙালি জাতিকে তিনি শুধু আবাসভূমি ও স্বাধীনতা দিয়ে যাননি, জাতি গঠনে তিনি যে দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন তা অতুলনীয়।
তার রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কর্মসূচি তার যোগ্য উত্তরসূরি তার কন্যা শেখ হাসিনা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে নিচ্ছেন। কিছু স্বার্থান্বেষী মতলববাজ, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান, ৩০ লাখ মানুষের জীবনদান, ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি, হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট হওয়া— এসব বাস্তব সত্যকে অস্বীকার অথবা বিতর্কিত করে আসছে। তারা চিরকালই পাকিস্তানের দালাল ও রাজাকার হিসেবে পরিচিত হয়ে থাকবে। বাঙালি জাতি হিসেবে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে আত্মপরিচয়ে বলীয়ান হয়ে কথা বলতে তারা লজ্জা পায়। পাকিস্তানের নৃশংসতা, নিষ্ঠুরতা, বর্বরতা কত ভয়ানক ছিল, তা বলে শেষ করা যায় না। বাবার সামনে মেয়েকে, ছেলের সামনে মাকে, ভাইয়ের সামনে বোনকে ধর্ষণ— কী নির্মম নিষ্ঠুরতা। বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠসন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের বর্বরোচিতভাবে হত্যা করেছে তারা। মৃত্যুর আগে পানি খেতে চাইলে মুখে প্রস্রাব করে পানির তৃষ্ণা মিটিয়ে দিত সেই হায়েনার দল।

আমাদের ইতিহাসও সে-কথা বলে। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, ঘনিষ্ঠজনদের হত্যাকারীরা ভেবেছিল হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সবকিছু নিঃশেষ হয়ে যাবে। কিন্তু তাদের সে-দুরাশা সফল হয়নি, হবেও না কোনদিন। বাঙালির জাগরণ ও অগ্রযাত্রাকে কখনও প্রতিহত করা যায়নি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনারই জয় হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতি হয়েছে সংগঠিত ও অধিকতর সুসংহত। সংবিধানে কালো অধ্যায় ‘বব’ বাতিল করে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত হত্যাকারীদের বিচারের মাধ্যমে দণ্ডাদেশ কার্যকর হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধীদের বিচারকার্য চলমান আছে ও কতিপয় শীর্ষ অপরাধীদের শাস্তি ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর জীবনের জীবন্ত ডায়েরি ছিলেন বেগম মুজিব। একজন ভাল মা যে সহস্র শিক্ষকের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ তা বেগম মুজিবকে দেখেই উপলব্ধি করা যেতো। তাইতো তিনি বঙ্গমাতা, বঙ্গজননী। বেগম মুজিবকে আমরা প্রত্যক্ষ করি রবীন্দ্রনাথের ১৯৩৬ সনে প্রদত্ত উক্তিতে: “নতুন সভ্যতা গড়বার কাজে মেয়েরা এসে দাঁড়িয়েছে, প্রস্তুত হচ্ছে তারা পৃথিবীর সর্বত্রই। তাদের মুখের উপর থেকেই যে কেবল ঘোমটা খসল তা নয়, যে-ঘোমটার আবরণে তারা অধিকাংশ জগতের আড়ালে পড়ে গিয়েছিল সেই মনের ঘোমটাও তাদের খসছে। যে মানবসমাজে তারা জন্মেছে সেই সমাজ আজ সকল দিকেই সকল বিভাগেই সুস্পষ্ট হয়ে উঠল তাদের দৃষ্টির সম্মুখে। এখন অন্ধসংস্কারের কারখানায় গড়া পুতুলগুলো নিয়ে খেলা করা আর তাদের সাজবে না। তাদের স্বাভাবিক জীবন প্রণালী, বুদ্ধি, কেবল ঘরের লোককে নয়, সকল লোককে রক্ষার জন্যে কায়মনে প্রবৃত্ত হবে।”এটি আজ সর্বজনবিদিত যে দীর্ঘ কারাবাস জীবনে বেগম মুজিব কিভাবে পৌনঃপৌনিক প্রচেষ্টা চালিয়ে কারাগারে কাগজ-কলম পৌঁছে দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে বার বার অনুরোধ করে রোজনামচা লেখার জন্য বঙ্গবন্ধুকে অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন, সহায়তা করেছিলেন, তার ফলেই আমরা পেয়েছি বঙ্গবন্ধু রচিত ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও ‘আমার দেখা নয়াচীন’। এই গ্রন্থত্রয়ের জন্য বেগম মুজিব আমাদের নিকট চিরদিন প্রণম্য হয়ে থাকবেন। এ বিরল অবদানের মাধ্যমে বঙ্গমাতা শেখ বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব বাংলাদেশের ইতিহাসে অনপনেয় স্বাক্ষর রেখে গেছেন।

লেখক ও কলামিস্ট:
তারেক আল মুনতাছির


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ