খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা উপজেলায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি)র বিশ লাখ টাকার প্রকল্পে ব্যপক দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে। প্রকল্পের কাজ না করেই স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগসাজোস ও দুর্নীতি করে টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন।
জানা যায়, ১৯ মে ২৪ গুইমারা উপজেলার দুই ইউনিয়ন হাফছড়ি ও সিন্দুকছড়িতে আটটি কাজের বিপরিতে বিশ লাখ বিয়াল্লিশ হাজার পাঁচশত টাকা টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কাজটি পায় ঠিকাদার কবি রঞ্জন ত্রিপুড়া। যার টেন্ডার নং-৯৪৬৪৮০, কন্ট্রাক্ট নং-এডিপি/গুইমারা/২০২৪/০১। কিন্তু প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই জুলাই মাসে কাজের পুরো টাকা উত্তোলন করা হয়। প্রকল্পগুলো, ছোটপিলাক বৌদ্ধ বিহারের পাবলিক টয়লেট নির্মাণ, অশোকারাম বৌদ্ধ বিহারের পাশে ধারকওয়াল নির্মাণ, রোয়াজাপাড়া হিরনজন ত্রিপুড়ার বাসা থেকে অগ্রসেন বাসা পর্যন্ত (হেরিং বোন বন্ড) এইচবিবিকরণ, শনখলাপাড়া অগ্রমৈত্রি বৌদ্ধ বিহারের সংস্কার, হাফছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ, উত্তর হাফছড়ি চিন্তাসুখ বৌদ্ধ বিহারের সংস্কার, বাজারপাড়া শ^শানস্মৃতি সীমাঘরের নিচে ধারকওয়াল নির্মাণ, ধুরংপাড়া জাদি (বুদ্ধের অবশিষ্ঠাংশ দেহের অংশ) উন্নয়ন। কাজগুলো ঠিকাদার কবি রঞ্জন ত্রিপুড়ার কাছ থেকে কিনে নেন মুক্তা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রকল্পের মধ্যে বেশিরভাগ প্রকল্পের কোনো কাজই হয়নি। কোনো প্রকল্পের কাজ হয়েছে আংশিক। গুইমারা উপজেলা প্রকৌশলী ও কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আতাত করে কাজ না করেই বিল উত্তোলন করে ভাগভাটোয়ারা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
হাফছড়ি হাফছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আমার বিদ্যালয়ে কোন কাজই হয়নি। এ বিষয়ে গুইমারা উপজেলা র্নিবাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, হাফছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সীমানাপ্রাচীর, ধুরংপাড়া জাদি উন্নয়ন, উত্তর হাফছড়ি চিন্তাসুখ বৌদ্ধ বিহারের সংস্কার, বাজারপাড়া শ^শানস্মৃতি সীমাঘরের নিচে ধারকওয়াল নির্মাণ, এইচবিবিকরণ রাস্তাসহ কয়েকটি প্রকল্পের কাজ না করেই কাগজে কলমে শতভাগ বাস্তবায়ন দেখিয়ে চলতি বছরের জুলাইয়ে বিল উত্তোলন করা হয়েছে।
গুইমারা উপজেলা প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো: শাহজাহানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এ বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজী হননি। তিনি লাইনটি কেটে দেন।
গুইমারা উপজেলা সহকারি প্রকৌশলী ও তদারকি কর্মকর্তা রুহুল কুদ্দুস নাঈম জানান, ঠিকাদার বৃষ্টিবর্ষার জন্য মাল নিতে পারেনি। তাই কাজ করা হয়নি। পে-অর্ডার কেটে রেখেছি। সেক্ষেত্রে এটা তো কোনো ফ্যাক্টর না। আমরা কাজ করবো। তিনি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ না করারও অনুরোধ করেন।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রকৌশলী তৃপ্তি শংকর চাকমা বলেন, এরকম অনিয়মরে বিষয়ে জানা নেই। যদি অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে ইউনএনও, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী দায়ি।
ঠিকাদার কবি রঞ্জন ত্রিপুড়া বলেন, কাজ না করে বিল উত্তোলনের বিষয়ে আমি জানিনা। উপজেলা প্রকৌশলীকে জিঙ্গাসা করেন। তিনি বলতে পারবেন।
গুইমারা উপজেলা র্নিবাহী কর্মকর্তা রাজীব চেীধুরী কাজ না করেই বিল উত্তোলনের বিষযটি জানেন বলে জানান। তিনি বলেন, খুব দ্রুত কাজ শেষ করা হবে।
এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক সহিদুজ্জামান বলেন, কাজ না করে টাকা উত্তোলনের কোনো সুযোগ নেই। কর্মকর্তার হিসাবে টাকা রাখা অবৈধ। দুর্নীতির প্রমান পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।