পার্বত্য চট্টগ্রামে জনপ্রতিনিধিত্ব ও সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে সকল ধরনের বৈষম্য দূর করার দাবি জানিয়ে পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সু প্রদীপ চাকমাকে আজ (২৫ শে আগষ্ট) শনিবার দুপুরে স্মারকলিপি দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বৈষম্য বিরোধী নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি সচেতন নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মো: কামাল উদ্দিন, সাংবাদিক মো: হুমায়ুন কবির, ছাত্র সমাজের প্রতিনিধি রাঙামাটি সরকারি কলেজের মো: শহিদুল ইসলাম ও রাবিপ্রবির ছাত্র মো: নুর আলম, পিসিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ হাবীব আজম।
স্মারকলিপিতে নেতৃবৃন্দ বলেন,
পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল প্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় সর্বোচ্চ পদে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হতে পদায়ন করা হয়ে আসছে। জাতীয় ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের সভাপতির পদসহ সকল সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, উপ-মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীর পদসমূহ শুধুমাত্র ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য নির্ধারিত। উন্নয়ন বোর্ড এর চেয়ারম্যানের পদটি পাহাড়ি-বাঙালি উভয়ের জন্য নির্ধারিত থাকলেও এই পদেও সবসময় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হতে পদায়ন করা হয়ে আসছে। সমতা ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে চলতি টার্মে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে একজন বাঙালি নিয়োগ দেয়ার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের আপামর বাঙালি জনগন জোরদাবি জানাচ্ছে।
তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে সদস্য নিয়োগের ক্ষেত্রে জনসংখ্যা অনুপাতে সকল সম্প্রদায় হতে জেলা পরিষদে সদস্য নির্বাচিত করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে ৫১ শতাংশ বাঙালি জনসংখ্যা হিসেবে পার্বত্য জেলা পরিষদে নূন্যতম ৫০ শতাংশ সদস্য বাঙালি জনগোষ্ঠী হতে নিয়োগ করতে হবে।
প্রতিটি পার্বত্য জেলা পরিষদে ভাইস চেয়ারম্যানের পদ সৃষ্টি করতে হবে। চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে এক টার্মে পাহাড়ি হলে পরের টার্মে বাঙালি এভাবে পর্যায়ক্রমে নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের বিদ্যমান ভোটার তালিকা অনুসারে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে জনগনের নির্বাচিত পরিষদ গঠন করতে হবে। বর্তমানে বিদ্যমান পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করে জনসংখ্যা অনুপাতে সকল জাতি ও সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণমূলক জেলা পরিষদ গঠন করতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলা পরিষদ সমূহে সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে যোগ্যতার নূন্যতম মাপকাঠি নির্ধারণ করে দিতে হবে এবং পেশাগত পূর্বাভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দিয়ে সদস্য নিয়োগ করতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল মৌজার যে সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা সংখ্যাগরিষ্ঠ সে সম্প্রদায় থেকে হেডম্যান নিয়োগ দিতে হবে। বাঙালি সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাসমূহে বাঙালি হেডম্যান নিয়োগ করতে হবে। কারবারি নিয়োগের ক্ষেত্রে মৌজার সকল সম্প্রদায়ের থেকে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
বৈষম্য মূলক ও বিশেষ উদ্দেশ্য প্রনোদিত পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন সংশোধন এবং অসহায় ও ভূমিহীনদের মাঝে ভূমি বন্দোবস্তি চালু করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদ্যমান ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য সর্ব প্রথম ভূমি জরিপ (ক্যাডাষ্টেল/ডিজিটাল সার্ভে) সম্পন্ন করা, ভূমি বন্দোবস্তি চালু ও আইনের বৈষম্য মূলক ধারা/নীতিসমূহ প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন, সংশোধন ও বাতিল করতে হবে।
ষড়যন্ত্রমূলক এবং একটি বিশেষ শ্রেণী গোষ্ঠীর পার্বত্য চট্টগ্রামের সরকারি খাস ভূমি দখল এবং বনজ সম্পদ ধ্বংসের পায়তারার অংশ হিসেবে চালু করা ভিলেজ কমন ফরেস্ট (ভিসিএফ) বা পাড়াবন প্রকল্প অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ এবং এই অঞ্চলের বাস্তুসংস্থানের সাথে সংশ্লিষ্ট উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি সংরক্ষনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সংরক্ষিত বন অঞ্চল এবং জীব বৈচিত্র ধ্বংসের সাথে সম্পৃক্ত সকল কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। যথেচ্ছ ভাবে শামুক, ব্যাঙ, সাপ, বাঁশকোড়ল সংগ্রহ বন্ধ করতে হবে। জুম চাষের নামে শত শত একর বনভূমি এবং জীব বৈচিত্র পুড়িয়ে ধ্বংস করা রোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জুম নিয়ন্ত্রন বন বিভাগ, পাহাড়ি কৃষি গবেষনা কেন্দ্র, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম বৃদ্ধি করা এবং জুম চাষের বিকল্প হিসেবে বহুমুখী, দীর্ঘমেয়াদী এবং পাহাড়ের উপযোগী কৃষি ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল জেলায় বিশেষ করে রাঙ্গমাটিতে মহাসড়কের আশেপাশে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা বস্তি, দোকানপাট ও অপরিকল্পিত স্থাপনা যথাযথ পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ প্রদান স্বাপেক্ষে অপসারণের ব্যবস্থা করতে হবে। রাঙ্গামাটিকে পরিকল্পিত পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি আন্তঃ জেলা সড়ক এবং জেলা সদর থেকে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সড়ক ও নদী পথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।
সকল উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত অনগ্রসর সকল শিক্ষার্থীদের জন্য কোটা বরাদ্ধ দিতে হবে। বৈষম্য মূলক উপজাতি কোটা সংশোধন করে ভর্তি ক্ষেত্রে পাহাড়ি-বাঙালি নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়কে সমান সুযোগ দিতে হবে।
শিক্ষা বৃত্তি প্রদানের ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, জেলা পরিষদ, আঞ্চলিক পরিষদসহ সকল সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে জনংসংখ্যা অনুপাতে বৃত্তি দিতে হবে।
তিন পার্বত্য জেলায় অন্যান্য সম্প্রদায়ের ন্যায় বাঙালি শিক্ষার্থীদের জন্য স্থায়ীভাবে ছাত্রাবাস নির্মাণ করতে হবে।
বিগত সরকারের আমলে এই জাতির মেরুদন্ড ধ্বংসের জন্য পরিকল্পিতভাবে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে। বর্তমানে চালুকৃত অত্যন্ত নিম্ন মানের, অবাস্তব শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কার করে যুগোপযোগী, বাস্তবধর্মী এবং দক্ষ ও নৈতিকতা সম্পন্ন নাগরিক তৈরির জন্য উপযুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে।