• বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:১৭ পূর্বাহ্ন
  • [gtranslate]
শিরোনাম
নববর্ষের শোভাযাত্রায় ইয়েন ইয়েনের দেশবিরোধী প্ল্যাকার্ড নেওয়ায় পিসিসিপি’র বিক্ষোভ উন্নয়নের ছোঁয়া বঞ্চিত গুইমারা: স্বাস্থ্য-শিক্ষায় অন্ধকার শার্শায় ব্যবসায়ীকে চাকুর ভয় দেখিয়ে টাকা ছিনতাই আটক ২ রামগড়ে গভীর রাতে দুই বসতবাড়ি আগুনে পুড়ে ছাই, ক্ষতি ১০ লাখ রামগড়ে দুই কোচিং সেন্টারকে ভ্রাম্যমান আদালতে  জরিমানা বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের ৫ দিনের প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু লামায় রামগড়ে দেশীয় অস্ত্র এলজি ও কার্তুজ উদ্ধার রামগড়ে রংতুলি একাডেমি’র ঈদ নববর্ষ বৈসাবি পরবর্তী পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন  লামায় বাগান দখলের অভিযোগে সাতকানিয়ার শওকত আকবর জেল হাজতে ৬ দফা দাবি আদায়ের সমর্থনে: কাপ্তাই বিএসপিআই এর সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি চবির অপহৃত ৫ শিক্ষার্থীর মুক্তি ও তরুণী ধর্ষণের বিচারের দাবি ৩ মাসেও চালু হয়নি খাগড়াছড়ির রবি টাওয়ার মানিকছড়িতে দুই টেকনিশিয়ান অপহৃত!

৫০ বছর ধরে শতবর্ষী কুষ্ঠ রোগী কিশোরী বালা চাকমা, ছেলে মেয়ে থাকলেও কেউ দেখতে আসেন না

ঝুলন দত্ত, কাপ্তাই (রাঙামাটি) প্রতিনিধি: / ১৮৫ জন পড়েছেন
প্রকাশিত : সোমবার, ১ জুলাই, ২০২৪

ঝুলন দত্ত, কাপ্তাই (রাঙামাটি) প্রতিনিধি: ১ জুলাই, সোমবার সকাল সাড়ে ৯ টায়। রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনা খ্রীস্টিয়ান হাসপাতালের অধীন পরিচালিত চন্দ্রঘোনা কুষ্ঠ হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডে দেখা মিলে ৩ জন কুষ্ঠ রোগীর। তাদের একজন কিশোরী বালা চাকমা। শতবর্ষ পার হওয়া কিশোরী বালা চাকমা অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন। দৃষ্টি এবং শ্রবণ শক্তি দুইটি হারিয়েছেন অনেক আগেই। হাসপাতালের ওয়ার্ডে দায়িত্বরত মহিলা স্টাফ উক্রা চাকমা এবং পাখি ত্রিপুরার সহায়তায় কথা বলার চেষ্টা করেছেন এই প্রতিবেদক তাঁর সাথে। অস্পষ্ট গলা, কথা বুঝার উপায় নেই। তবে চাকমা ভাষায় এইটুকু বলেছেন উনার ৪ ছেলে এবং ৪ মেয়ে। স্বামী মারা গেছেন অনেক আগে। বাড়ী রাঙামাটি জেলার লংগদু উপজেলায় বললেও গ্রামের নাম জানাতে পারেন নাই। পরিবারে এখন কে কে আছেন,সেটাও জানেন না তিনি।

এইসময় হাসপাতালের স্টাফ পাখি ত্রিপুরা বলেন, আমি ২১ বছর ধরে উনাকে চিনি, উনি একসময় কুষ্ঠ পাহাড়ের কুষ্ঠ আশ্রমে ছিলেন। পরে এখানে ভর্তি হয়েছেন। শুনেছি উনার বাড়ি রাঙামাটি জেলার লংগদু উপজেলায়। ৪ ছেলে, ৪ মেয়ে আছে, স্বামী মারা গেছে অনেক বছর আগে । একসময় উনার বড় ছেলে দেখতে আসলেও এখন কেউ দেখতে আসে না উনাকে। তবে মাঝে মাঝে হাসপাতালের একজন স্টাফ এর মাধ্যমে টাকা পাঠাই।
একই কথা বললেন হাসপাতালের স্টাফ উক্রা চাকমাও, তিনি বলেন, উনাকে এখন কেউ দেখতে আসেন না। তবে আমরা হাসপাতালের পক্ষ হতে সবসময় যত্ন নিই উনি সহ বাকি কুষ্ঠ রোগীদের।

এসময় পাশের বেডে থাকা কুষ্ঠ রোগী রেজিনা বেগম এর সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, আমার বয়স যখন ১৩, তখন থেকে আমি এই হাসপাতালে আছি। ১৯৮১ সালে আমি যখন প্রথমে এই হাসপাতালে আসি, তখন থেকেই আমি উনাকে দেখে আসছি।

হাসপাতালের কর্মচারী বিমল সরকার জানান, আমি স্বাধীনের পর থেকে উনাকে এই হাসপাতালে দেখছি, অনেক আগে ছেলেরা দেখতে আসলেও এখন কেউ আসে নাই।

কুষ্ঠ হাসপাতালের সহকারী ইনচার্জ রাজেন্দ্র নাথ পান্ডে বলেন, আমি যখন ১৯৮৪ সালে এই হাসপাতালে যোগদান করি, তখন থেকে উনাকে মহিলা ওয়ার্ডে দেখতে পাচ্ছি। তবে শুনেছি উনি অনেক আগে কুষ্ঠ পাহাড়ের কুষ্ঠ আশ্রমে ছিলেন, পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে এখানে ভর্তি হন৷ ভর্তিতে ঠিকানা লিখা ছিল কুষ্ঠ আশ্রম। তাই উনার স্বামীর বাড়ির ঠিকানা আমাদের এখানে লিপিবদ্ধ নেই, তবে শুনেছি লংগদু উপজেলা হতে বড় ছেলে একজনের মাধ্যমে টাকা পাঠান, তবে উনাকে কেউ দেখতে আসেন না। তিনি আরোও বলেন, আমরা হাসপাতালের পক্ষ হতে প্রত্যেক কুষ্ঠ রোগীকে বিনামূল্যে দু’ বেলা ভাত এবং একবেলা নাস্তা দিই, সাথে বিনামূল্যে ঔষধ, চিকিৎসা সেবা, উপকরণ দিয়ে থাকি।

কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনা খ্রীস্টিয়ান ও কুষ্ঠ হাসপাতালের পরিচালক ডা: প্রবীর খিয়াং বলেন, অনেক আগে কুষ্ঠ রোগীদের বিষয়ে সামাজিক ও পারিবারিক কিছু অন্ধ বিশ্বাস বা অস্পৃশ্যতা রয়েছে, যার জন্য কুষ্ঠ হাসপাতালে এসে সুস্থ হওয়া অনেক রোগী তাদের নিজের পরিবারের কাছে অথবা সমাজে ফিরে যেতে পারেনি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সামাজিক দায় বন্ধতা থেকে এইসব রোগীদের সব দায় দায়িত্ব বহন করে চলছে! যদিও আগের তুলনায় এখন এসব অনেক কম হয়!! অনেক সচেতনতা এসেছে!!

প্রসঙ্গত: ১৯১৩ সালে এই কুষ্ঠ হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা হয়।১৯২০ সাল থেকে তিন পার্বত্য জেলায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মাঝে কুষ্ঠ রোগ ব্যাপকভাবে দেখা দেয়ায় তখন নেদারল্যান্ডের আর্থিক সহযোগিতায় হাসপাতালটি বৃহৎ পরিসরে আলোর মুখ দেখে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার লোক এ হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার জন্য আসত। কুষ্ঠ রোগীদের সমাজে জায়গা না হওয়ায় সব কুষ্ঠ রোগীদের এক সাথে বসবাসের জন্য রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ১১ নং চন্দ্রঘোনা কদমতলী ইউনিয়নে জুম পাড়া কুষ্ঠ পল্লীতে তাদের চিকিৎসা দেয়া হত। বর্তমানে আর্থিক সঙ্কটের কারণে হাসপাতাল বন্ধের পথে রয়েছে।

এ রোগীদের সমাজে বেঁচে থাকতে হলে সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ