মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ব্যুরো প্রধান, বান্দরবান,
আনন্দমুখর পরিবেশে ৩০০ নং সংসদীয় আসন বান্দরবানের লামা উপজেলায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে। সকাল ৮টা থেকে ভোটাররা দীর্ঘ সারিবদ্ধ হয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে দেখা গেছে। জেলার লামা উপজেলায় রূপসীপাড়া, লামা পৌরসভা, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। রোববার লামা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
রূপসীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে সরেজমিনে দেখা গেছে, ভোর থেকে প্রচন্ড শীতকে উপেক্ষা করে ঘন কুয়াশার মধ্যে এলাকার লোকজন ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হতে শুরু করেন। শুরুতে ভোটারের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। তবে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে পুরুষ ভোটারের চেয়ে নারী ভোটারের বেশি উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। ভোটাররাও সুশৃঙ্খলভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে বেরিয়ে যাচ্ছেন। দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ শৃঙ্খল রাখতে কাজ করছেন। ভোটারদের নানাভাবে সহযোগিতা করতে দেখা গেছে তাদের।
রূপসীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল সকাল ভোটাধিকার প্রয়োগ করে বাড়ি ফিরছেন ৭০ বছরের বৃদ্ধ মহিলা প্রুমারী মার্মা। তিনি বলেন, সুস্থ-সুন্দর পরিবেশে ভোগান্তি ছাড়া ভোট দিয়েছি। ঝামেলা এড়াতে ভোরে এসে লাইনের শুরুতে দাঁড়িয়েছি। সকাল ৮টা ১০ মিনিটে ভোট দিয়েছি। অল্প সময়ের মধ্যে ভোট দিতে পেরেছি।
জীবনে প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন রূপসীপাড়া ইউনিয়নের নুর আলী মুন্সি পাড়ার বাসিন্দা কলেজ ছাত্র মোঃ মোজাম আলী। তিনি বলেন, সকাল ৮ টায় দিকে ভোটকেন্দ্রে এসে কিছুক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। ২০ মিনিটের মধ্যে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পেরেছি। শাহেনা আক্তার আরও বলেন, প্রথমবারের মতো ভোট দিতে পেরে অনেক আনন্দ লাগছে। ভোটকেন্দ্রে আসার সময় এক ধরনের ভয় কাজ করছিল। কেন্দ্রের ভেতরে বা বাহিরে কোনো ধরনের সমস্যা বা সংঘাত হতে পারে এমন একটা আশঙ্কা থেকেই ভয় কাজ করছিল। তবে ভোটকেন্দ্রে এসে সে ধরনের কোনো পরিস্থিতি দেখেননি বলে জানান তিনি।
এ ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন বলেন, সকাল থেকে পুরুষ ভোটারের চেয়ে নারী ভোটারের উপস্থিতি বেশি। সকাল থেকে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ কার্যক্রম চলছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। একেন্দ্রে মোট ভোটার ২৬১৯ জন। বুথ ৭টি।
লামা পৌরসভার আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মোঃ আসাদ সিদ্দিকী, লামামুখ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার কাঞ্চন দে এবং ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের অংহ্লারী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মোঃ আবদুর শুক্কুর বলেন, ভোর থেকে সুশৃঙ্খল ভাবে ভোট দিতে ভোটাররা লাইনে দাঁড়িয়েছে। কেন্দ্রের ভিতরে বাহিরে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
প্রসঙ্গত, বান্দরবানের রুমা থানচি ও রোয়াংছড়ি উপজেলার দুর্গম ৮টি কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়া হয় হেলিকপ্টারের মাধ্যমে। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন জানিয়েছেন পর্যায়ক্রমে বান্দরবানের ১২ টি কেন্দ্রে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানো হবে।
এবার দ্বাদশ সংসদীয় নির্বাচনে বান্দরবানে ১৮২ টি কেন্দ্রে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনী নিরাপত্তায় ইতিমধ্যে ৪২ প্লাটুন বিজিবি, ১২শ পুলিশ, ২২০০ আনসার সহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছে। দুটি পৌরসভা ও সাত উপজেলা নিয়ে এই সংসদীয় আসনে ভোটার সংখ্যা ২ লক্ষ ৮৮০৩০। এবার আওয়ামী লীগের বীর বাহাদুর উশৈসিং ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী এটিএম শহিদুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা শান্তনু কুমার দাশ বলেন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ টিমে কাজ করছে। উপজেলার কন্ট্রোল রুম থেকে লামার ৪০টি ভোর কেন্দ্রে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।