মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ব্যুরো প্রধান, বান্দরবান
আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনকে ঘিরে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের ৩০০নং আসনের মনোনয়ন পত্র দাখিল করার আজ শেষ দিন। জমা দেওয়া সর্বশেষ সময় ছিল বিকাল চারটার। নির্বাচনকে ঘিরে শেষ দিনে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন তিনপ্রার্থী।
তারা হলেন- পার্বত্য জেলা বান্দরবানের ৩০০ নং আসনের আওয়ামিলীগের একক প্রার্থী বীর বাহাদুর উশৈসিং, স্বতন্ত্র প্রার্থী মংঙ্যেয়ে প্রু ও জাতীয় পার্টি লাঙ্গল প্রার্থী এটিএম শহিদুল ইসলাম
বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) সকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন কাছে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মংঙ্যেয়ে প্রু ও বিকালে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন জাতীয় পার্টি লাঙ্গল প্রার্থী এটিএম শহিদুল ইসলাম।
এর আগে গতকাল বুধবার সকালে ৩০০নং আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন আওয়ামিলীগের একক প্রার্থী বীর বাহাদুর উশৈসিং।
এদিকে আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনকে ঘিরে এখনো কোন তৎপরতা দেখা যায়নি বিএনপি দলের নেতকর্মীদের। বান্দরবানের বিএনপি দুটি দল বিভক্ত রয়েছে। সাচিংপ্রু জেরি সমর্থক ও জাবেদ, ম্যাম্যাচিং সমর্থক। দুই দলের নেতারা নির্বাচনের অংশগ্রহন করবেন কীনা সে বিষয়ের এখনো জানা যায়নি। তবে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হলে নির্বাচনের অংশগ্রহন করবেন বলে জানান জেলা বিএনপি দলের নেতাকর্মীরা।
জেলা বিএনপি সভাপতি ম্যাম্যাচিং মারমা জানান, দলের সিদ্ধান্ত ছাড়া তাদের দল নির্বাচনের অংশ নেবেন নাহ। বর্তমান সরকার অধীনে নির্বাচন ও সরকার পতনের একদফা দাবী আদায় না হওয়ার পর্যন্ত নির্বাচনের অংশগ্রহন করবেন নাহ।
পার্বত্য এলাকায় পাহাড়ের বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠন রয়েছে। সংগঠনের কোন কোন দল গেছেন আত্মগোপনে আবার কিছু দল মাঠ পর্যায়ের থাকলেও নির্বাচনের তারাও অংশ নেবেন নাহ । তবে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ( ইউপিডিএফ) গণতান্ত্রিক সংগঠনটি আগামী উপজেলা কিংবা ইউনিয়নের পর্যায়ে নির্বাচনে অংশ নেবে বলে জানা গেছে।
ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ( ইউপিডিএফ) গণতান্ত্রিক জেলা সাধারণ সম্পাদক উবামং মারমা জানিয়েছেন, তাদের দল এখনো জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার এখনো পরিস্থিতি হয়ে উঠেনি। তবে আগামীতে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নির্বাচন করার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানান।
আঞ্চলিক সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটি সহ- সাধারণ সম্পাদক জলিমং মারমা বলেন, বান্দরবান থেকে তাদের দলও নির্বাচনের অংশ নিবেন নাহ। বিভিন্ন কারণে দলের নেতাকর্মীরা আতঙ্কে আত্মগোপনে রয়েছে। তাছাড়া নির্বাচন করা পরিবেশ নাই বলে তিনি জানিয়েছেন।
এদিকে জেলায় বান্দরবানের জাতীয় পার্টির আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, জিএম কাদের বিদিশা সমর্থিত দুটি দল রয়েছে। কিন্তু তাদের সংগঠনের কোন কার্যক্রম দেখা যায়নি। তবে কয়েকমাস আগে বান্দরবানের জিএম কাদের বিদিশা সমর্থিত দলের আহ্বায়ক মৃত নাছির উদ্দিন বেচেঁ থাকার কালীন বিভিন্ন স্থানে নানা কার্যক্রম দেখা গেছে। তিনি মারা যাওয়ার পর দলটির কোন অস্তিত্ব দেখা মেলেনি। তাছাড়া এই দুইটি সমর্থিত দলের মধ্যে জাতীয় পার্টির আনোয়ার হোসেন মঞ্জু অধীনের দলীয় কার্যালয় থেকে বান্দরবানের ৩০০নং আসনের মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছিলেন এটিএম শহিদুল ইসলাম । বিকালে রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর মনোনয়ন পত্র দাখিল জমা করেছেন।
জাতীয় পার্টি লাঙ্গল প্রার্থী এটিএম শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি দলীয়ভাবে মনোনয়ন পেয়েছি। সেই সাথে বান্দরবানে পিছিয়ে পড়া জাতিগোষ্ঠীদের শতভাগ মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি।
অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামিলীগ বান্দরবানের মাঠ পর্যায়ের তৎপরতা রয়েছে। ৩০০নং আসনে বান্দরবানের ছয়বার নির্বাচিত আওয়ামীলীগের একক প্রার্থী বীর বাহাদুর উশৈসিং মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। তিনি ১৯৯১ সাল থেকে পরপর ৬ বার আওয়ামীলীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। ৭ম বারের মতন নির্বাচনের প্রচারণায় মাঠে রয়েছে। এবারেও বীর বাহাদুর উশৈসিং ৭ম বারের মতন আবারো নৌকা নির্বাচিত হবে এবং বান্দরবানকে স্মার্ট জেলা হিসেবে গড়ে তুলতে নৌকা ছাড়া বিকল্প নাই বলে জানান আওয়ামিলীগের নেতাকর্মীরা।
বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেন, দেশ এবং জেলার জন্য এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উন্নয়নের ছোয়া এখনো বাকি আছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যায় আছে সেটি আরো উন্নতি করতে হলে সর্বক্ষেত্রে আরো কাজ করতে হবে। যেটি উন্নয়ন হয়েছে সেটিকে আরো পরিধিভাবে বাড়ানো জন্য কাজ করে যাবেন। এদেশে উন্নয়ন, সম্প্রীতি ও সোনার বাংলার গড়ার যে স্বপ্ন সেটিকে বাস্তবায়ন করতে হলে আওয়ামিলীগ ছআর কোন বিকল্প নাই। ৩০০ নং আসনের ৭ম বারের মতন এলাকার সেবা করার সুযোগ দেওয়ার জন্য নৌকাকে ভোট দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
এবিষয়ে জেলা প্রশাসক ও ৩০০নং আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, অনলাইনে এবং অফলাইনে মনোনয়ন ফরম দাখিল করার শেষ দিন পর্যন্ত তিনজন প্রার্থীর দাখিল হয়েছে। সাত উপজেলা ও দুটি পৌরসভা নিয়ে বান্দরবান ৩০০ নম্বর সংসদীয় আসন। সবকিছু ঠিক থাকলে এই আসনে ১৮২টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরো বলেন, নির্বাচকে ঘিরে সাতটি উপজেলায় সাতজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবে। তাছাড়া প্রত্যেকটি ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তা জন্য সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে তৎপরতা থাকবে বলে জানান।