মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ব্যুরো প্রধান, (বান্দরবান)
বান্দরবানের লামায় বিয়ে বাড়িতে সামাজিক চাঁদা নিয়ে ত্রিমুখী সংঘর্ষে বর সহ ১৭ জন আহত হয়েছে। এসময় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটেছে। ঘণ্টাব্যাপী মারামারিতে বর, কনের বাবা-মা, সমাজের সর্দার সহ তিন পক্ষের ১৭ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে ৯ জনকে লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে ৫ জনকে ভর্তি রেখে বাকী ৪ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বরের বাড়ি পার্শ্ববর্তী আলীকদম উপজেলায় হওয়ায় অনেকে আলীকদম গিয়ে চিকিৎসা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন বর নাজমুল ইসলাম।
বুধবার (২৫ অক্টোবর) বিকেল ৫টায় লামা উপজেলার রূপসীপাড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড পূর্ব শিলেরতুয়া গ্রামে কনের বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। খবরপেয়ে লামা থানা পুলিশের ২০ জনের একটি টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এসময় পুলিশ একে একে আহতদের উদ্ধার করে লামা হাসপাতালে নিয়ে আসে।
কনের বাবা মোঃ হাসান ও পাশের বাড়ির মোবারক হোসেন জানান, আলীকদম উপজেলা সদরের বাজার পাড়া এলাকার মোঃ শাহজাহান এর ছেলে নাজুমল ইসলামের সাথে তার মেয়ে ইয়াছমিন আক্তার (১৮) এর বিবাহ ঠিক হয়। বুধবার পূর্ব শিলেরতুয়া মেয়ের নানার বাড়ীতে অনুষ্ঠান করে মেয়েকে তুলে দেয়া হচ্ছিল। ইতিমধ্যে অধিকাংশ মেহমান খাওয়া দাওয়া শেষ করেছে। কিছু মেহমান খাচ্ছিল। এলাকার মৌলভী ডেকে বর-কনের উপস্থিতিতে বিবাহ হচ্ছিল। এসময় কথা উঠে সামািজক চাঁদা নিয়ে। তখন মেয়ের বাবা মোঃ হাসান বলেন এলাকার মুরুব্বি সাইফুল ইসলাম সহ সামাজিক চাঁদা নিয়ে কথা হয়েছে। তখন পূর্ব শিলেরতুয়া সমাজের সর্দার আব্দুল মন্নান ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন ‘আমি সমাজের সর্দার। আমি ছাড়া অন্য কেউ কিভাবে সমাজের চাঁদা ঠিক করে।’ এসময় কথাবার্তার কাটাকাটি হলে বর ও কনে পক্ষের কয়েকজন সর্দার মন্নানের গায়ে হাত তোলে। অনুষ্ঠানে সর্দারের ছোট ভাই মোঃ রফিকও উপস্থিত ছিলেন। সে প্রতিবাদ করায় তাকেও মারধর করা হয়।
বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে মুহুর্তে সমাজের ৬০/৭০ জন লোক এসে বর পক্ষের মেহমান ও কনের লোকজনের উপর হামলা চালায়। অনুষ্ঠান পন্ড হয়ে যায় এবং প্রচুর খাবার নষ্ট হয়। স্থানীয়দের হামলার ভয়ে আলীকদম থেকে আসা কিছু মেহমান ৫/৬টি মোটর সাইকেল নিয়ে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী শিলেরতুয়া নয়া পাড়া গ্রামে আশ্রয় নেয়। পূর্ব শিলেরতুয়া গ্রামের রজ্জব আলীর ছেলে মোঃ শফির নেতৃতে ২০/২৫ জন ছেলে লাঠি হাতে নিয়ে তাদের ধাওয়া করে এবং শিলেরতুয়া নয়া মার্মা পাড়ার দক্ষিনে ঠান্ডাঝিরি নামকস্থানে তাদের মারধর করে। এসময় আরো অনেকে আহত হয়। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। শিলেরতুয়া নয়া পাড়ার বাসিন্দা খতিজা বেগম বলেন, আলীকদমের মেহমান গুলোকে শিলেরতুয়া গ্রামের লোকজন নৃশংসভাবে মেরেছে।
আহতরা হলেন, বর নাজমুল হোসেন (২১), কনের বাবা মোঃ হাসান (৫০), মা সালমা বেগম (৪০), সর্দার আব্দুল মন্নান (৪৮), এলাকার মুরুব্বি মোঃ রফিক (৪২), সাইফুল ইসলাম (৫২), বর পক্ষের মোঃ বাদশা মিয়া (২৫), মোঃ রবিউল (১৭), ঈমাম মেহেদী (১৮), মোঃ এরফান (২২), ইমরান (১৮), মোজাম্মেল (২১), সাঈম (১৭) মনি আক্তার (৫০), রেজিয়া বেগম (৬৫) ও পূর্ব শিলেরতুয়া এলাকার মোঃ ইউসুফ (৩০), মোঃ আবু দাউদ (৪০)।
কনের মা সালমা বেগম বলেন, এলাকার সবাই ডাকাত। এলাকার সবাইকে দাওয়াত দিতে পারি নাই বলে এই ঘটনা ঘটেছে। কনে পক্ষের অভিযোগ হামলাকারী ভাংচুরের পাশাপাশি বিয়ের মালামাল ও মেয়েদের গায়ের স্বর্ণ লুট করে নিয়ে গেছে। মেয়ের মামা মোঃ ইলিয়াছ বলেন, মন্নান সর্দার ঘটনা সূত্রপাত করেছে। কনের খালা জাহেদা বেগম বিয়ে ভাংতে তারা এই হামলা করেছে। মেহমানকে কেউ এভাবে মারে !
গুরুতর আহত মোঃ রফিক বলেন, সমাজের চাঁদা নিয়ে কথা হচ্ছিল। সামান্য বিষয় নিয়ে বর পক্ষের লোকজন বড় ভাই সর্দারের গায়ে হাত তোলে। আমাদের তিনজনকে মেরে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। পরে এলাকার লোকজন শুনে কি করেছে আমরা জানিনা।
লামা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মোঃ শামীম বলেন, আমরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে থানায় নিয়ে এসেছি। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ এসে তারপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। ঘটনার পরে কনে কে তার বাবা মায়ের উপস্থিতিতে নিরাপদে বরের গাড়িতে তুলে দেয়া হয় এবং তারা নতুন বউকে নিয়ে চলে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন থানায় মামলা করলে পদক্ষেপ নেয়া হবে।