মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ব্যুরো প্রধান (বান্দরবান)
পাহাড়ি বন্যহাতির তান্ডবে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ঘিলাতলী এলাকার কৃষকরা। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার পর হাতির দল পাহাড় থেকে নেমে এসে তান্ডব চালায় ফসলি জমিতে। ফসল খেয়ে ও পা দিয়ে পিষিয়ে নষ্ট করে ফেলছে। এতে করে উঠতি ফসল হারিয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ওই এলাকার কৃষকরা। এ অবস্থায় ঢাক-ঢোল বাজিয়ে ও আগুন জ্বালিয়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন কৃষকরা।
উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ঘিলাতলী নাপিতারঝিরি গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক বলছিলেন, আমন ধান পাকতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় হাতির পাল এসে প্রতি রাতে ক্ষেতে নামে। গ্রামের সবাই মিলে লাঠিসোঁটা, মশাল নিয়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু কোনোমতেই ধান রক্ষা করা যাচ্ছে না। গত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ইং মঙ্গলবার রাত ১টায় ১৮/২০টি বন্যহাতি তার জমিতে নেমে ১ একর (২.৫ কানি) জমির ধান খেয়ে ও পাড়িয়ে নষ্ট করেছে। এতে করে তার ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ঘিলাতলী নাপিতারঝিরি আরেক কৃষক কবির আহমদ (৭৫) পিতা- মৃত হাবিবুর রহমান বলেন, বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাত ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত একই হাতির পালটি তার ৮০ শতক (২ কানি) জমির ধান নষ্ট করে ৭০ হাজার টাকার ক্ষতি করে। একইভাবে অপর কৃষক মোরশেদুল আলম (২০) বলেন, বন্যহাতি তারও ৩০ শতক জমির ধান নষ্ট করে ৪০ হাজার টাকার ক্ষতি করেছে।
বুধবার ওই এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, কয়েক দিন ধরে বন্যহাতির বিশাল একটি দল ওই এলাকায় অবস্থান করছে। হাতির এই দলটি প্রায় প্রতিদিন নেমে আসছে আবাদি জমিতে। কয়েক দিনের অব্যাহত হাতির অত্যাচারে ঘিলাতলী এলাকায় বিনষ্ট হয়েছে প্রায় ১০ একর জমির আমন ধানখেত। এতে দিশাহারা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক। খাদ্যের সন্ধানে অভুক্ত হাতিগুলো লোকালয়ে এসে ছোটাছুটি করে। হাতির তান্ডবে এখন তাদের রাত কাটে নির্ঘুমে। স্থানীয় কৃষকরা জানায়, সব হারানোর ভয়ে কেউ কেউ আধাপাকা ধান কেটে নিয়ে আসছে। কেউ কেউ অপেক্ষা করছে।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার মোহাম্মদ হোসেন মামুন বলেন, হাতিগুলো পাহাড় থেকে দলবেঁধে নেমে আসে ফসলের খেতে। রাত জেগে পাহাড়া দিয়েও রক্ষা হয় না। এ বিষয়ে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান মোহাং নুরুল হোসাইন হাতির আক্রমণরোধে সরকারের স্থায়ী পদক্ষেপ কামনা করে বলেন, বছরের পর বছর ধরে বন্যহাতির তান্ডবে পাহাড়ি মানুষের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ।
লামা বন বিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা একেএম আতা এলাহি বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। ফসলের ক্ষতিগ্রস্তদের বন বিভাগের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।