চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হলেও বাড়ছে মাছের দাম। স্বল্প আয়ের মানুষের কেনার মতো মাছ পাঙ্গাশ, তেলাপিয়ারও দাম বেড়েছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, মাছের বাড়তি দামে অস্বস্তি থাকলেও তারা অসহায়। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে বাজার তদারকির উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিম্ন আয়ের মানুষেরা ইলিশ বা রুই, কাতলার মতো মাছ কিনতে পারে না। এসব মানুষদের প্রাণিজ আমিষের অন্যতম উৎস সিলভার কার্প, তেলাপিয়া বা পাঙ্গাসের মতো অপেক্ষাকৃত কম দামি মাছ। কিন্তু সেসব মাছের দামও এখন এই জনগোষ্ঠীর নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।
মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও সুফল পাচ্ছেন না ক্রেতারা। সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের বাজারে মাছের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০ থেকে দেড়শ টাকা।
নিম্ন আয়ের মানুষের প্রাণিজ আমিষের অন্যতম উৎস পাঙ্গাশ ও তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে আড়াইশ টাকা কেজি দরে। আর রুই, পাবদার কেজি ৪৫০ থেকে ৫০০, ইলিশের কেজি ১৬০০ টাকা । বর্ষায় মাছের ভরা মৌসুমে দাম বৃদ্ধিকে অযৌক্তিক বলছেন ক্রেতারা।
মাছের দাম নিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের অভিযোগ থাকলেও মাছের উৎপাদনের দিক দিয়ে কিন্তু বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে উন্নতি করেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএও’র ‘দ্য স্টেট অব ওয়ার্ল্ড ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার ২০২২’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুক্ত জলাশয় বা স্বাদুপানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।
সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরেই বাংলাদেশ মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। অর্থাৎ, প্রতি বছর দেশজ চাহিদার শতভাগ দেশীয় উৎপাদন দিয়ে পূরণ করার সক্ষমতা পেয়েছে সেসময় থেকে।
তবে উৎপাদনের দিক দিয়ে ক্রমাগত উন্নতি হতে থাকলেও বিভিন্ন কারণে এই উৎপাদনের সুফল মানুষ সরাসরি ভোগ করতে পারছে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। দাম কমাতে মাছের খাদ্য উৎপাদনে সক্ষমতা বাড়ানো এবং মধ্যস্বত্ত্বভোগী নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ তাদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মাদ রোকনুজজামান বলেন, মাছের খামার থেকে বাজারে খুচরা ব্যবসায়ী পর্যন্ত মাছ নিয়ে আসার সময় দাম বেড়ে যায়। খামার থেকে বিক্রেতা পর্যন্ত এই মধ্যস্বত্ত্বভোগীর সংখ্যা যত বাড়বে, মাছের দামও ক্রেতার জন্য তত বাড়বে।
ড. মোহাম্মাদ রোকনুজজামান আরও বলেন, মাছের ফিড যদি আমরা শতভাগ নিজেদের দেশে তৈরি করতে পারি তাহলে মাছ উৎপাদনের খরচ বেশ কিছুটা কমবে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দামও কমবে।
মাছের দাম সহনীয় রাখতে বাজার তদারকি বাড়ানোর উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।