রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়া পতিতালয়
দক্ষিণ এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ যৌনপল্লি এটি। সরকারি হিসেবে এখানে প্রায় ৩ হাজার যৌনকর্মীর বসবাস। কিন্তু বেসরকারি হিসেবে সেই সংখ্যাটি ৫ হাজারও বেশি বলে জানায় স্থানীয়রা।
এটি মুলতঃ একটি টুরিস্ট এলাকাও বটে। কারণ সারা বাংলাদেশ তথা বহির বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থেকে মানুষ ভিজিট বা পরিদর্শন করতে তথা এই পতিতালয় বাসিন্দাদের জীবনমান দেখতে, উপভোগ করতে,তাদের পাশে দাঁড়াতে নিয়মিত আসেন এখানে। বিগত সময়ে এই পতিতালয়ের যৌনকর্মীরা ছিলো অসহায় সুবিধা বঞ্চিত ও স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের দ্বারা নানা ধরনের নির্যাতনের স্বীকার। কিন্তু গত ২০২০ সালে থেকে এই যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা শুরু করে উত্তরণ ফাউন্ডেশন নামে একটি সামজিক প্রতিষ্ঠান। যার প্রতিষ্ঠা চেয়ারম্যান বাংলাদেশ টুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান। পরে এই সংগঠনের সহযোগিতা নিয়ে যৌনকর্মীরা গঠন করে অসহায় নারী ঐক্য সংগঠন নামে আরেকটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। যার নেতৃত্বে রয়েছে এই পতিতালয়ের সবার নির্বাচিত প্রতিনিধি সংগঠনের ভাষায় যাকে বলে সভানেত্রী। তার নাম জুমুর বেগম। তারা সম্মলিত প্রচেষ্টায় শুরু করে উন্নয়ন করার কাজ। তারপর থেকেই ভাগ্যের পরিবর্তন হতে শুরু করে যৌনকর্মীদের। বর্তমানে স্বাস্থ্য সেবা,বিভিন্ন অনুদান,উৎসবে কোরবানি ঈদে মাংস বিতরণ, যৌনকর্মীদের ছেলে ও মেয়েদের পড়াশোনার ব্যবস্থা, গর্ভবতী মায়ের চিকিৎসা ,চাঁদাবাজ এর দৌরাত্ম্য বন্ধ, জানাজা নামাজ, দাফনের জন্য কবর স্থানের ব্যবস্থা,জুতা পরিধান করা, যে কোন জায়গায় যাওয়ার স্বাধীনতা সহ মিলেছে সর্ব ধরনের নিপিড়ন নির্যাতন থেকে মুক্তি। কারণ অতীতে এই পতিতালয়ের একজন যৌনকর্মী জুতা পায় দিয়ে বা পরিধান করে পতিতালয়ের বাহিরে যাওয়া নিষেধ ছিলো। কেউ মারা গেলে তাকে দেওয়া হত না জানাজা, করা হতো না দাফন কাফন। শুধু মাত্র পদ্মনদীর তীরে নিয়ে চাপা মাটি দিয়ে রাখা হত। যৌনকর্মীরাও যে মানুষ এই অধিকার টুকু তাদের ছিলো না।
কিন্তু উত্তরন ফাউন্ডেশন কাজ শুরু করার পর থেকে যৌনকর্মীরাও যে মানুষ, তাদের যে স্বাধীনতা রয়েছে তা নিশ্চিত করেছে। এখন কোন যৌনকর্মী মারা গেলে তাকে দেওয়া হচ্ছে জানাজা, করা হচ্ছে দাফন তাদের নিজস্ব কবর স্থানে স্বাভাবিক নিয়মে। যা থেকে এরা বঞ্চিত ছিলো ৪৫ বছর যাবত। এখন তারা উন্নত জীবন তৈরী করার নেশায় ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। নিজেরা পতিতা কিন্তু স্বপ্ন দেখেন তাদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করে বড় চাকরি করবে। নিজেদের মত পতিতালয়ের পরিচয়ে বড় হবে না সন্তানেরা।
ছদ্ম নামে রিমা জোসনা,কাকলি,অনামিকা সহ একাধিক যৌনকর্মীরা জানান, এখন আর মনে হয়না আমরা পতিতালয়ে আছি, মনে হয় আমরা অভিযাত কোন এলাকায় আছি। আমাদের এখানে থাকতে কোন সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু এমন একটা সময় ছিলো যখন আমরা মাথা উচু করে দাঁড়ানো তো দুরের কথা আমরা যে টাকা ইনকাম করতাম তারও ভাগ নিতো যেত প্রভাবশালীরা রাজনৈতিক নেতার ক্যাডার’রা।
আর অসহায় নারী ঐক্য সংগঠন সভানেত্রী জুমুর বেগম বলেন, যৌনকর্মীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছি। তাদের পাশে দাঁড়ানো মত মানুষ ছিলো না, উত্তরণ ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান এসে দাড়িয়েছে। এটা এই পতিতালয়ের বাসিন্দাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া। নির্যাতন নিপিড়ন বন্ধ হয়েছে স্ততি ফিরেছে পতিতাপল্লিতে।
এবিষয়ে গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ স্বপন কুমার মজুমদার বলেন, আপনারা নিশ্চিত অবগত আছেন বাংলাদেশ পুলিশ আইন শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি সামাজিক ও মানবীক কাজগুলো করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায়, উত্তরণ নামক একটি মানবীক সংগঠন যার প্রতিষ্ঠাতার চেয়ারম্যান জনাব হাবিবুর রহমান বিপিএমবার,পিপিএমবার এডিশনার আইজিপি বাংলাদের টুরিস্ট পুলিশ ঢাকা। সমাজের অসহায় অবহেলিত জনগোষ্ঠীকে নিয়ে দীর্ঘবছর কাজ করে আসছে। গোয়ালন্দ ঘাট থানাধীন দৌলতদিয়া যৌনপল্লি দেশের সর্ব বৃহৎ যৌনপল্লি। এখানে যৌনকর্মীদের কল্যাণে ও জীবনমান উন্নয়নে গত ২০২০ সাল থেকে উত্তরণ ফাউন্ডেশন কাজ করে যাচ্ছে। এই পল্লির অসহায় যৌনকর্মীদের মাঝে উত্তরণ ঈদ উপহার, খাদ্য সামগ্রি কেরবানীর মাংস এবং স্বাস্থ্য সচেতনা সম্পর্কে সম্পন্ন অজ্ঞ যৌন কর্মীদের মেডিক্যাল ক্যাম্প এর মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছে। রাজবাড়ীর জেলার পুলিশ সুপার এর নেতৃত্বে আমরা গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ উত্তরনের এই সকল মানবীক কাজগুলোতে শরীক হয়ে আসছি এবং যৌনকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করনে কাজ করে যাচ্ছি।
পার্বত্যকন্ঠ নিউজ/এমএস