বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড পেতাইন্যাছড়া গ্রাম। লামা-চকরিয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী একটি এলাকা। জায়গাটি সবুজে বেস্টিত সমতল ও ঘনবসতিপূর্ণ। ছবিরমত এই জনপদে কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত অবধি চলে ড্রেজার মেশিন (সেলু মেশিন) দিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন। ৩টি পয়েন্টে ৪টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে সমতল ভ‚মি গর্ত করে ও কুমারী ছড়া থেকে নির্বিচারে বালু তোলা হচ্ছে। ১০/১৫টি ডাম্পার গাড়ি দিয়ে দিনে-রাতে এইসব বালু পাচার হচ্ছে লামা-চকরিয়া উপজেলা বিভিন্ন স্থানে। বেশ কিছুদিন ধরে বালু তোলার কারণে পেতাইন্যাছড়া এলাকার দুই শতাধিক একর সমতল ভ‚মি ও কুমারী ছড়াটিতে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। আর এইসব বালু পরিবহন করতে গিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে সদ্য নির্মিত কুমারী-চাককাটা এইচবিবি সড়কটি নষ্ট হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুইটি ব্রিজ হেলে গেছে। কোনভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছেনা এই বালু উত্তোলন।
গত রবিবার বিকেলে দেখা যায়, পেতাইন্যাছড়া এলাকায় কয়েকটি সিন্ডিকেট ৩টি পয়েন্টে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তোলে ৮টি বড় বড় স্তুপ করে রেখেছে। শতাধিক শ্রমিক বালু উত্তোলন ও পরিবহনে কাজ করছে। একেরপর এক ডাম্পার গাড়ি এসে বালু নিয়ে যাচ্ছে। একদিকে স্তুপ খালি হচ্ছে অপরদিকে আবার বালু তোলে পরিপূর্ণ করা হচ্ছে সেইস্থান। এই যেন এক ভিন্ন জগৎ। যেখানে কারো কোন জবাবদিহিতা নেই। অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করায় ভাঙনের মুখে পড়ছে ফসলি জমি, রাস্তা-ঘাট। ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে শত বিঘা ফসলি জমি। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে তিনটি ব্রিজ, শতাধিক সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ও ফসলি জমি।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে পেতাইন্যাছড়া গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, প্রতিবাদ করে অতীতে অনেকেই হয়রানির শিকার হয়েছেন। এখন তাই কেউ আর সাহস করেন না। গণমাধ্যমে কথা বললেও প্রভাবশালী মহল চড়াও হয়। তারা জানান, মৃত নুরুল ইসলাম এর ছেলে ওয়াজ উদ্দিন এর জায়গা থেকে চকরিয়া ভেন্ডিবাজার এলাকার সাবেক সেনা সদস্য মোঃ বেলাল, মৃত আব্দু ছমদ এর ছেলে মনছুর আলম প্রকাশ পেটান এর জায়গা থেকে চকরিয়া ফাঁসিয়াখালী এলাকার মোঃ শামীম, রিফাত ও মোঃ বাহাদুর এর জায়গা থেকে মোঃ মিরাজ, বাপ্পী ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রতিনিয়ত বালু তুলছে। এছাড়া কুমারী স্কুল পাড়ায় মৃত জহির উদ্দিনের ছেলে মোঃ নোমান কুমারী ছড়ার আগা থেকে বালু এনে স্তুপ করে বিক্রি করছে। পেতাইন্যাছড়া ব্রিজের পাশে মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে আব্দুস সালাম লেদু মাটি কেটে জমি তৈরি করতে গিয়ে ব্রিজ ও রাস্তার ক্ষতি করছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, তাদের প্রতিবাদ কোনো কাজে আসেনি। বরং নানা ধরনের হুমকি-ধামকির মুখে পড়তে হয়েছে। এতে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে প্রশাসনের ভূমিকা।
এদিকে পার্শ্ববর্তী ৫নং ওয়ার্ডের খালখুইল্যাখোলা এলাকায় বড়ছনখোলা গ্রামের মোঃ মিরাজ, বামহাতিছড়া এলাকার বাপ্পী, চকরিয়া ফাঁসিয়াখালী এলাকার মোঃ আলাউদ্দিন, রোমেশ, চকরিয়া ভেন্ডিবাজার এলাকার সাবেক সেনা সদস্য মোঃ বেলাল সিন্ডিকেট লামার ফাঁসিয়াখালী ছড়া থেকে বালু তুলছে। বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারেজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু বা মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ। উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছেন লামায় কোন অনুমোদন বালুমহাল নেয়।
৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোঃ আবু ওমর জানিয়েছেন, ‘ইতিমধ্যে এলাকার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জরুরিভিত্তিতে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করা না হলে এসব এলাকা এবং স্থাপনাগুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।’
এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মোস্তফা জাবেদ কায়সার বলেন, ‘উপজেলায় সরকার অনুমোদিত কোন বালু মহাল নেই। উল্লেখিত স্থানে কোন বালু নিলামও দেয়া হয়নি। এলাকার ক্ষতি করে, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে কেউ বালু উত্তোলন করতে পারবেন না। জনস্বার্থে যা যা করণীয়, তা করা হবে।’
পার্বত্যকন্ঠ নিউজ/এমএস