গত দুই দশক আগেও বাংলাদেশে অটিস্টিক শিশুদের শিক্ষার জন্য তেমন কোন সুযোগ সুবিধা ছিল না। এ ব্যাপারটি সবার নজরে আসে যখন প্রধানমন্ত্রী কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বাংলাদেশের অটিজমদের নিয়ে কাজ শুরু করেন। বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধী শিশুদের উন্নয়নের লক্ষ্যে কমপক্ষে ১৯ টি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
বর্তমানে কিছু বেসরকারি সংগঠন বাংলাদেশের প্রতিটি ইউনিয়নে প্রতিবন্ধী স্কুল প্রতিষ্ঠা করছে। প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা প্রদান ও এমপিওভুক্তির মাধ্যমে শিক্ষকদের বেতন নিশ্চিতকরণই এই স্কুল গুলোর মূল লক্ষ্য। উদ্দেশ্য মহৎ হলেও কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বেকার ছেলে মেয়েদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
মাগুরার শালিখা উপজেলার বুনাগাতি গ্রামের মতিয়ার রহমান প্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষকদের দাবি অনুযায়ী এখানে ১৩ শিক্ষকদের কাছ থেকে মোট ৭০ লক্ষ টাকা স্কুলের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য আদায় করা হয়েছে। শিক্ষকদের এই টাকা থেকে প্রায় ২২ লক্ষ টাকায় স্কুলের নামে নিজস্ব জমিও কেনা হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে এই ১৩ জন শিক্ষককে বাদ দিয়ে, নতুন আরও ১৮ জন শিক্ষক নিয়োগ করে প্রত্যেকের কাছ থেকে আনুমানিক কমপক্ষে ৪ লক্ষ টাকা করে আদায় করা হয়েছে। এভাবে ১ কোটি টাকার উপর অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রতিবন্ধী মতিয়ারের বিরুদ্ধে।
মতিয়ার রহমানকে এ ব্যাপারে শিক্ষকরা চাপ দিলে তিনি থানায় জিডি করেন এবং তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অফিস চুরির অভিযোগ আনেন ও মামলা করবেন বলে শাসিয়ে দেন। এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক শিক্ষক রিয়াজুর রহমান জানান ” মূলত অফিসের নথিপত্র গায়েবের উদ্দেশ্যে তিনি মিথ্যা নাটক সাজিয়েছেন “। তিনি আরো জানান মতিউর রহমান শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও বুদ্ধিতে সে খুবই চতুর ও ধূর্ত প্রকৃতির মানুষ।
বুনাগাতি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা জানান ” আমার দুই মেয়ের চাকরির জন্য এই স্কুলে ৫ লক্ষ টাকা নগদ ক্যাশই দিয়েছি, মাটি ভরাট, ঘর বানানোসহ আনুষঙ্গিক কাজে আরো পাঁচ লক্ষ টাকা খরচ করেছি, এখন মতিয়ার বলছে চাকরি হবে না। আমি রীতিমতো পথে বসে গেছি।”
এ প্রসঙ্গে মতিউর রহমানকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বর্তমান বুনাগাতি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান বকতিয়ার রহমানকে দোষারোপ করেন। তিনি বলেন বকতিয়ার আমার পিছনে লাগছে সে স্কুলটা আমাকে করতে দেবেনা। এ ব্যাপারে বকতিয়ার চেয়ারম্যান জানান আমি নিরপেক্ষ, আমি চাই স্কুলটি সুন্দরভাবে চলুক, এবং বিনা কারণে যে ১৩ জন শিক্ষককে বহিষ্কার করা হল তাদের স্বপদে বহাল করা হোক। ইতিমধ্যে শালিখা উপজেলার ইউএনও মহোদয়ের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ইউএনও গোলাম মোহাম্মদ বাতেন জানান বিষয়টি আমরা আমলে নিয়েছি এবং খুব গুরুত্বের সাথে তদন্তের কাজ চলছে। তদন্ত শেষ হলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেব।
মতিউর রহমান দাবি করেন শুধুই প্রতিবন্ধী স্কুলই নয়, তিনি এই ইউনিয়নে বিভিন্ন সময়ে প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন গড়ে তুলেছেন। অথচ তার সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শারীরিক প্রতিবন্ধী জিয়াউর রহমান বলেন ” তার কোন সংগঠনের কোনো গঠনতন্ত্র নেই, কমিটিতে অধিকাংশ তার পরিবারের সদস্য, একার মতো একাই সবকিছু করেন ”
আর একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হাবিবুর রহমান (৩০) জানান ” কেউ পরিদর্শনে আসলে উনি পাশের গ্রাম থেকে মানুষ ভাড়া করে নিয়ে আসেন, পরবর্তীতে কারো কোনো খোঁজ রাখেন না।”
বাদপড়া ১৩ জন শিক্ষকদের দাবি মতিয়ার রহমানকে সভাপতির পদ থেকে অপসারণ করে, ইউএনও সাহেবের অধিনে একটি পূর্ণাঙ্গ গঠনতন্ত্র তৈরি করে সেই মোতাবেক স্কুলটি পরিচালনা করা হোক।
মুঠোফোনে মতিয়ার রহমানের সঙ্গে কথা বলতে গেলে এ বিষয়ে লেখালেখি করলে তিনি সাংবাদিকের নামে মামলা করবেন বলে শাসিয়ে দেন।