লামার উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের রাজাপাড়া এলাকায় ২৮৫নং সাঙ্গু মৌজার আবদুর রাজ্জাক মেম্বারের ৩৯ বছরের ভোগদখলীয় হোল্ডিং নং- আর/৪৯০ ও রাবার হোল্ডিং নং-৮ এর ৩০ (ত্রিশ) একর জায়গা ভূয়া হেডম্যান রিপোর্ট মূলে জবরদখলের অপচেষ্টা ও মিথ্যা সংবাদ সম্মেলনের প্রতিবাদে ‘সাংবাদিক সম্মেলন’ করেছে মৃত আবদুর রাজ্জাক মেম্বারের পরিবারের সদস্যরা।
বুধবার (১৪ জুন) দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে লামা মফস্বল সাংবাদিক ইউনিয়নের হলরুমে এই সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় আবদুর রাজ্জাক মেম্বারের ছেলে, ফাঁসিয়াখালী ইউপি মেম্বার ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসাইন মামুন, তার ভাই গিয়াস উদ্দিন এবং আত্মীয় লুৎফর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জায়গার মূল মালিক আবদুর রাজ্জাক মেম্বারের ছেলে মোহাম্মদ হোসাইন মামুন। তিনি বলেন, পার্বত্য এলাকায় স্থায়ী বাসিন্দা হিসাবে আমার বাবা ১৯৮৪-৮৫ সালে ২৮৫নং সাঙ্গু মৌজায় হোল্ডিং নং- আর/৪৯০ মূলে ৫ একর ও ১৯৮৮-৮৯ সালে রাবার হোল্ডিং নং-৮ মূলে ২৫ একর মোট ৩০ (ত্রিশ) একর জায়গার মালিক হয়। সেই জায়গার রাবার সহ বিভিন্ন গাছপালা লাগিয়ে ৩৯ বছর ধরে আমরা ভোগদখলে আছি। গত পাঁচ মাস আগে থেকে গতিরাম পাড়ার বাসিন্দা হরি চন্দ্র ত্রিপুরার ছেলে চন্দ্র মনি ত্রিপুরা, হরি চন্দ্র ত্রিপুরা, ক্যচিং মুরুং ও বলি চন্দ্র ত্রিপুরা জোর করে জবরদখল করতে অপচেষ্টা চালায়। আমরা বাঁধা দিই এবং এই বিষয়ে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদে আমার ছোট ভাই গিয়াস উদ্দিন বাদী হয়ে মামলা করে। স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বার ও জনপ্রতিনিধিরা মিলে আমাদের ৩০ একর জমির সীমানা ঠিক করে দেয়। কিন্তু তারপরেও কিছুদিন আগে চন্দ্র মনি ত্রিপুরা, হরি চন্দ্র ত্রিপুরা, ক্যচিং মুরুং ও বলি চন্দ্র ত্রিপুরা সহ একটি চক্র মিলে আমাদের রাবার বাগানের মাঝখানে খালি জায়গায় জঙ্গল পরিষ্কার করে আগুন লাগিয়ে দেয়, যাতে করে আমাদের অনেক রাবার চারা পুড়ে যায়। এই বিষয়ে স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিদের জানালে তারা আমাদের আইনের আশ্রয় নিতে বলে। আমরা লামা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৪৪ চেয়ে মামলা করি। সেই বিষয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে গত ১৩ জুন মঙ্গলবার দুপুরে আমি এবং আমার ছোট ভাই গিয়াস উদ্দিনকে অভিযুক্ত করে ওই ভূমিদস্যুগ্রুপ মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমাদের জায়গা তাদের দাবী করে এবং আমরা তাদের নির্যাতন করছি বলে ভুল তথ্য দিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে।
তিনি আরো বলেন, বিরোধীয় জায়গায় তারা কোন বৈধ কাগজ দেখাতে পারেনি। আমাদের বাবার নামে সরকার কর্তৃক দেয়া বৈধ কাগজপত্র রয়েছে এবং যার সাথে মিল রেখে আমরা ভোগদখলে আছি। বিরোধীপক্ষ হরি চন্দ্র ত্রিপুরা ২০১৩ সালের একটি হেডম্যান রিপোর্ট দেখাচ্ছে অথচ যে হেডম্যান এই রিপোর্ট দিয়েছে বলা হয়েছে সেই হেডম্যান ২০০৯ সালে মারা গেছে। ক্যচিং মুরুং ১১২নং হোল্ডিং মূলে তিন একর তৃতীয় ও দুই একর দ্বিতীয় শ্রেণীর জমি তার নাম পিতার নাম মিল নেই এমন একটি হোল্ডিং এর জবানবন্দি দেখাচ্ছে। যার সাথে জায়গার ও তার পরিচয়ের মিল নেই। মূলত তারা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এই পরিচয়টিকে পুঁজি করে আমাদের হয়রাণী করতে উঠেপড়ে লেগেছে। আইনীভাবে না পেরে তারা ঘোলাজলে মাছ শিকার করতে ভুল তথ্য দিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে শান্ত এলাকাকে অশান্ত করার পায়তারা করছে। তারা সংবাদ সম্মেলনে আমি আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দলীয় ক্ষমতার অপব্যয় করছি উল্লেখ করে, যা শতভাগ মিথ্যা।
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত গিয়াস উদ্দিন বলেন, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের সাঙ্গু মৌজার ৭২৭নং দাগের রাবার হোল্ডিং নং ৮ মূলে আমাদের বাবা আবদুর রাজ্জাকের নামে ২৫ একর রাবার প্লট রয়েছে। কয়েক বছর আগে বাবা আবদুর রাজ্জাক মারা যাওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতিপক্ষ হরি চন্দ্র ত্রিপুরা ও ক্যচিং মুরুং সহ অন্যরা বিভিন্ন সময় রাবার প্লট ডুকে গাছের চারা রোপন করে প্রায় ১০ একর জমি জবর দখলে নেন। জমি নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে গত মে মাসে স্থানীয় হেডম্যান, ইউপি মেম্বারসহ গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যস্থতায় বিষয়টি সমাধা হয়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই প্রতিপক্ষরা পূণরায় রাবার প্লটে ডুকে জঙ্গল পরিস্কার করে গাছ লাগানোর চেষ্টা করেন। একারণে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৪৫ ধারায় মামলা করি। আমরা কারো জামি দখল করিননি বা দখলের চেষ্টাও করছি না।
পার্বত্যকণ্ঠ নিউজ ইমএস