বিছিন্নবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) বান্দরবানের রুমা থানচি দুই উপজেলা সীমান্তে বিভিন্নভাবে নির্যাতন নিপিড়ন হুমকি ধমকিতে থানচি উপজেলা সদরে মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যলয়ের আশ্রয় নিয়েছে ১১টি পরিবার। রবিবার (২৮ মে) দুপুর সাড়ে ১২টা ১১ পরিবারের ৩২ জন সদস্য থানচি সদরে পৌছেন।
অসহায় অবস্থা পুরুষ ১০ নারী ১৩ ও শিশু ০৯ জন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে আশ্রয় শিবিরের তাঁদের থাকার খাওয়া ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। ১১ পরিবার সকলে রুমা উপজেলা ৩ নং রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডে বাকলাই পাড়া বাসিন্দা বলে জানা যায়।
ভুক্তভোগি ও প্রশাসন জানায়, দীর্ঘ ৯ মাস ধরে কুকি চিন ও আইনশৃংখলা বাহিনীর গোলাগুলির মধ্যবর্তী স্থান বাকলাই পাড়াতে অবস্থান করছে তারা। এছাড়া তাদের পাড়ার পাশ দিয়ে কুকিচিন সদস্যদের আনাগোনা বেশি। এতে আতঙ্কিত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে তারা বনে জঙ্গলে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এ বিষয়ে একাধিকবার বিভিন্ন মহলে সহযোগিতা চেয়েও পায়নি তারা। অবশেষে গতকাল শনিবার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খামলাই ম্রোর সাথে যোগাযোগ করলে তার সহযোগিতায় পাড়াবাসীরা থানচি সদরে চলে আসে এবং মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়।
আশ্রয় শিবিরের বাকলাই পাড়ার প্রধান (কারবারী) থংলিয়াত বম বলেন, আমাদের পাড়া মোট ৩৭ পরিবার ছিল । কুকিচিং ন্যাশনাল ফ্রন্ট ( কেএনএফ) তান্ডব কারনে সেনাবাহিনী অভিযানের ৬ মাস আগেই ২৬ পরিবারের লোজন অন্যত্র চলে গিয়েছে এবং বিভিন্ন স্থানের আশ্রয় নিয়েছে। আমরা ১১ পরিবার কোন রকমে পুরুষরা দিনের বেলা পাহাড়ে জুম ঘরে পালিয়ে থাকতাম। রাতে বৌ বাচ্ছাদের রান্না করার খাবার নিয়ে আবার চলে যাইতাম এভাবে অক্টোবর ২০২২ হতে মে ২০২৩ গত ৯ মাস যাবৎ অনেক কস্ট বিনিময় অনাহারে অর্ধহারে নির্ঘুম সময় পার করছিলাম। আমাদের কস্টের কথা রাজনৈতিক নেতা ও অনেক জনপ্রতিনিধিদের জানিয়ে ও কোন লাভ হয় নি। অবশেষে নিরুপায় হয়ে গতকাল শনিবার অনেক কস্ট করে পাহাড় থেকে মুঠোফোনের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খামলাই ম্রো কে আমাদের জীবনের করুন পরিস্থিতির বিষয়টি অবগত করা হলে আমাদের উপজেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে থানচি সদরে আসার পরামর্শ দেন। সুতারাং আমরা চলে আসছি।
আশ্রয় শিবিরের রোলরেম বম (৫৩) বলেন, আমাদের সকল পরিবারের গৃহপালিত হাঁস মুরগি,গরু ছাগল, গয়াল, শুকর, ধান, ঘরবাড়ী সব রেখে জীবন বাঁচানোর জন্য থানচি সদরের প্রশাসনের ব্যবস্থা করে দেয়া আশ্রয় শিবিরে পরিস্থিতির শান্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের রাখার জন্য আবেদন করিতেছি।
আশ্রয় শিবিরের বাকলাই পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাওরামতং বম জানান, অক্টোবর ২০২২ হতে আদ্যবধি পর্যন্ত স্কুল ও বন্দ ছেলে মেয়ে ও নেই। হযবরল জীবন যাপন করছি। কোন সময় বাড়ীতে কোন সময় জঙ্গলে খাওয়া দাওয়া ঠিক ছিল না।
পরিস্থিতির শান্ত না হওয়া পর্যন্ত থানচি মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকবে বলে জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মুহা: আবুল মনসুর। তিনি বলেন, প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আসা ১১ পরিবার সকলে রুমা উপজেলা ৩ নং রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড, বাকলাই পাড়ার বাসিন্দা। যতদিন তারা আশ্রয়ে থাকবে ততদিন প্রশাসন সকল ধরনের সহযোগিতা করবে বলেও জানান তিনি।
পার্বত্যকন্ঠ নিউজ/এমএস