প্রতিটি সন্তানের জন্য পৃথিবীতে সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল ‘মা-বাবা’। যত আবদার যত অভিযোগ সবই তাদের কাছে। ধরণীতে অনেক খারাপ মানুষ আছে, কিন্তু একজন খারাপ মা-বাবা খুঁজে পাওয়া যাবেনা। গুরুত্বের দিকে মায়ের পরই বাবার স্থান। শাস্ত্রে বলা হয়- ‘পিতা স্বর্গ পিতা ধর্ম পিতাহী পরমং তপঃ। পিতরী প্রিতিমাপন্নে প্রিয়ন্তে সর্ব দেবতা।’ অর্থ- পিতাই ধর্ম, পিতাই স্বর্গ, পিতাই পরম তপস্যা। কিন্তু সেই পিতা যদি বুক ছেঁড়া ধন অবুঝ সন্তানের গলায় ধারালো অস্ত্র ঠেকিয়ে জিম্মি করে তখন কলংকিত হয় প্রিয় এই সম্পর্ক।
তেমনি এক ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে বান্দরবানের লামা উপজেলায়। স্ত্রীর সাথে মতের অমিল ও পারিবারিক অশান্তির জের ধরে তিন বছরের শিশু মোঃ সাকিল কে গলায় দা ঠেকিয়ে জিম্মি করেছে তারই পিতা হাফিজুল ইসলাম। সাড়ে ৪ ঘন্টা জিম্মি থাকার পর পাষন্ড পিতা হাফিজুল ইসলামের কাছ থেকে অভিযান চালিয়ে শিশু মোঃ শাকিল কে উদ্ধার করে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় জনতা। উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের দুর্গম ৩নং ওয়ার্ডের প্রংগ ঝিরি এলাকায় রবিবার রাতে এই ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত টানা সাড়ে ৪ ঘন্টা চেষ্টার পরে রক্তাক্ত শিশুটিকে জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করা হয়।
পাষন্ড পিতা হাফিজুল ইসলাম (৫০) প্রংগ ঝিরি এলাকার ইসহাক গাজীর ছেলে এবং ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেলের ড্রাইভার। গজালিয়া ইউনিয়নের ডিসি রোড এলাকায় তার একটি চা দোকান রয়েছে। সংসার জীবনে সে ৫টি বিবাহ করে এবং জিম্মি করা শিশু মোঃ সাকিল (৩) তার চতুর্থ স্ত্রী (নওমুসলিম) কুলছুমা আক্তারের একমাত্র সন্তান।
শিশুটির মা কুলছুমা আক্তার জানায়, গত দুইদিন ধরে তার স্বামী হাফিজুল শিশুটিকে তার কাছে জিম্মি করেছে। কেউ তার কাছে গেলে তাকে দা, ছুরি, কোদাল ও রড দিয়ে কোপানোর চেষ্টা করে। রবিবার সকালে দুইজনকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে ও বিকেলে দুইজনের ঘর কেটে ফেলে। এমনকি আমার শিশুটিকে গত দুইদিন কিছু খেতে দেয়নি এবং দা দিয়ে কুপিয়ে জখম করেছে। সাকিলের মাথা ও কপালে দা দিয়ে আঘাত করায় রক্ত ঝরছে। অসহায় এই মা আহাজারি করে বলেন, ‘আপনারা আমার সন্তানকে আমার কোলে ফিরিয়ে দেন।’
পাষন্ড হাফিজুল ইসলামের ছোট ভাই শফিকুল ইসলাম বলেন, শনিবার রাতে আমার ভাবী ও ভাতিজাদের মারধরের বিষয়ে বলায় সে আমার ঘর কুপিয়ে কেটে ফেলেছে। হাফিজুল সবসময় হাতে দা নিয়ে ঘোরাফেরা করে। তার কাছে এলাকার কেউ নিরাপদ না এবং সে কাউকে মানেনা। এমনকি আমার বাবা ইসহাক গাজীকেও সে মারধর করেছে। স্থানীয় মেম্বার ও জনতা এই উচ্ছৃঙ্খল হাফিজুলের বিচার দাবী করেছে। ফায়ার সার্ভিস টিমের দলনেতা মোঃ আব্দুল্লাহ বলেন, এমন পাষন্ড বাবা দেখিনি। নিজের সন্তানকে কুপিয়ে আহত করে আবার জিম্মি করেছে। কয়েক ঘন্টা চেষ্টার পর বাচ্চাটিতে অক্ষত উদ্ধার করতে সক্ষম হই।
গজালিয়া পুলিশ ক্যাম্পের আইসি মোঃ মফিজ বলেন, রবিবার দিনের বেলায় মুন্নী রাণী সাহা (২৫) ও সুমন সাহা (৩৮) নামে দুইজনকে দা দিয়ে কুপিয়ে আহত এবং রথিচন্দ্র ত্রিপুরা ও শফিকুল ইসলামের ঘর কুপিয়ে কেটে ফেলার বিষয় জানতে পেরে আমরা সন্ধ্যায় প্রংগ ঝিরিতে আসি। স্থানীয় জনতা ও পুলিশ আসতে দেখে হাফিজুল ইসলাম তার তিন বছরের শিশু সাকিলের গলায় দা ঠেকিয়ে জিম্মি করে তার বাবা ঘরের ছাদে উঠে যায়। স্থানীয় মেম্বার, মুরুব্বী সহ আমরা অনেক চেষ্টা করে তার কাছ রক্তাক্ত বাচ্চাটি উদ্ধার করতে না পেরে লামা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেই। রাত সাড়ে ১০টায় ফায়ার সার্ভিস, স্থানীয় জনতা ও আমরা যৌথ চেষ্টা চালিয়ে সাড়ে ৪ ঘন্টা পরে জিম্মিদশা থেকে বাচ্চাটি উদ্ধার করি এবং পাষন্ড পিতা হাফিজুল ইসলামকে আটক করে গজালিয়া পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে যাই। তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
রনি/পক