বহুল আলোচিত দুই হাজার কোটি টাকা ম্যানিলন্ডারিং মামলার অন্যতম আসামী, ফরিদপুর-৩ আসনের সাংসদ খন্দকার মোশাররফের এপিএস ফোয়াদের আরও দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে ফরিদপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারুক হোসেন এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ নিয়ে দুই দফায় ফোয়াদের দুই দিন করে মোট চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হলো।
এর আগে গত ১২ আক্টোবর রাতে ঢাকার বসুন্ধরা এলাকার সি ব্লকের ৮ নম্বর সড়কে অবস্থিত ১৮৩ নম্বর বাসার সামনে থেকে এ এইচ এম ফোয়াদকে গ্রেপ্তার করে ফরিদপুরের গোয়েন্দা পুলিশ।
গ্রেপ্তারের পরদিন গত ১৩ অক্টোবর ফোয়াদকে এক নম্বর আমলি আদালতে হাজির করে ২০১৫ সালের ১২ জুলাই ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় দায়ের করা ছোটন বিশ্বাস (২৮) হত্যা মামলার আসামি হিসেবে দেখিয়ে তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানায় পুলিশ। ওই আদালতের বিচারক রত্মা সাহা শুনানি শেষে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
দুইদিনের রিমান্ড শেষে শুক্রবার বিকেলে ফোয়াদকে আদালতে সোপর্দ করে আরও সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানান এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফরিদপুর কোতয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল গফফার। শুনানি শেষে ফারুক হোসাইনের আদালত আরও দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড হওয়ার পর আদালত থেকে ফোয়াদকে আবার পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুরের আলোচিত দুই ভাই শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি (পরে বহিষ্কৃত) ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের বিরুদ্ধে ঢাকার সিআইডির দায়ের করা দুই হাজার কোটি টাকা মানি লন্ডারিং মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি ফোয়াদ। ওই মামলা এবং ছোটন বিশ্বাস হত্যা মামলা ছাড়াও তার বিরুদ্ধে আরও সাতটি মামলা রয়েছে ফরিদপুর কোতয়ালী থানায়। অন্যান্য মামলার মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল সাহার বাড়িতে হামলা, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামচুল আলমের ওপর হামলা, জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক দীপক মজুমদারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করে তার উপর ভংয়কর হামলা, সরকারি চাল আত্মসাতের মামলা রয়েছে। এ এইচ এম ফোয়াদ জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ছিলেন। পরে তাকে ওই পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় অবৈধ কর্মকাণ্ডের কারণ।
জেলা আওয়ামীলীগের নেতারা জানান, ফোয়াদ নগরকান্দার বিলনালিয়ার মোজাহার রাজাকারের সন্তান। কৌশলে ছাত্রলীগে যোগদেন। এরপর সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের পিও পদে যোগ দেন। কৌশল সাজাতে সাজাতে তখনকার এপিএস সত্যজিৎ মুখার্জি ও মন্ত্রীর কাছের জন হিসেবে পরিচিত মোকারম হোসেন বাবুকে তার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে এপিএস পথ বাগিয়ে নেন। শুরু হয় সারাদেশে টেন্ডারবাজি। ফরিদপুর এলজিইডি বাদে বাংলাদেশের প্রায় সকল অফিস নিয়ন্ত্রণ করতেন এই ফোয়াদ। তার অত্যাচারে তখনকার আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতৃত্ব দূরে সরে যেতে থাকে মন্ত্রীর কাছ থেকে। জামাত-বিএনপি থেকে বিভিন্ন লোককে নিয়ে এসে টাকা নিয়ে তাদের পদ দিতে থাকেন তিনি এসময়। তার এইসব কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রন করতে তিনি তৈরি করেন হেলমেট এবং হাতুড়ি বাহিনী ফরিদপুরে। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকে ফরিদপুর ছেড়ে ঢাকা এবং বিদেশে চলে যেতে বাধ্য হয়। ফোয়াদের রয়েছে ফরিদপুরসহ সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় একাধিক বাড়ি গাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। প্রসঙ্গত, গত ২০২০ সালের ১৬ মে রাতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। পরে ১৮ মে সুবল সাহা অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই বছর ৭ জুন রাতে পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু হয়। ওই রাতে ফরিদপুর-৩ আসনের সাংসদ খন্দকার মোশাররফের শহরের বদরপুরস্থ বাড়ির এলাকা থেকে ফরিদপুরের আলোচিত দুই ভাই শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন ওরফে বরকত এবং ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান ওরফে রুবেলসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই দিন অল্পের জন্য গ্রেপ্তার এড়িয়ে পালিয়ে যান ফোয়াদ। এদিকে ফোয়াদকে আটকের পরেই আনন্দ মিছিল বের করা হয় শহরে আওয়ামীলীগ এর পক্ষ থেকে। এছাড়া ফোয়াদের নিজ বাড়ির এলাকা ছাড়াও বিভিন্নস্থানে মিষ্টি বিতরণ করেন সাধারণ মানুষ।