ধর্মীয় বয়ান দিয়ে নারীদের বোকা বানিয়ে সর্বস্ব লুটে নিত ‘বয়ান পার্টি’ নামে পরিচিত একটি প্রতারক চক্র। সম্প্রতি রাজধানীর রামপুরায় এক নারীকে বোকা বানিয়ে ২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় সামনে আসে এই চক্রের নাম। এই চক্রের দলনেতাসহ ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
পুলিশ বলছে, চক্রটি গত ৫ বছরে দুশোর বেশি নারীকে বোকা বানিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক কোটি টাকা। তাদের টার্গেট বোরখা পড়া নারী।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, গত ২২ জুলাই রাজধানীর রামপুরায় সকালে হাঁটতে বের হয়ে এই চক্রের খপ্পরে পড়েন এক নারী। ফুটেজে দেখা যায়, ওই নারীর মাথায়ও হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন একজন। এরপর ১০ মিনিটের কথার পর বাসায় গিয়ে এক লাখ ১৮ হাজার টাকা, এক জোড়া স্বর্ণের দুল এনে চক্রটির হাতে তুলে দেন ওই নারী।
ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, ‘আমি বাসায় গিয়েছি। তারপর ওনারা এগিয়ে এলো। আমি ওদের হাতে কিছু টাকা দিয়েছি, তখন ওনারা বললো সোনা কিছু থাকলে নিয়ে আসেন। স্বর্ণের কিছু জিনিসও আমি দিয়েছি।’
মামলার পর তদন্তে নেমে একই ধরনের আরও অভিযোগ পেতে থাকেন গোয়েন্দারা। ২১ মে ভোরে দক্ষিণখানের বামের জামতলা এলাকার সিসিটিভি ফুটেজেও ওই চক্রের দেখা মেলে। সেখানেও এক নারীকে বোকা বানিয়ে প্রায় ১৬ লাখ টাকার জিনিসপত্র হাতিয়ে নেয় তারা।
ওই নারীর স্বামী সালেহ আহমেদ বলেন, ‘তারা বাসায় আসলো, তখন আমিও ছিলাম। আমার সাথে স্বাভাবিক আচরণ ছিলো। বাসায় যত গোল্ড, টাকা পয়সা ছিলো সব নিয়ে ওদের হাতে দিয়ে দিলো। পরে দুপুরের দিকে তার হুস হলো।’
সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে চক্রের ৭ জনকে শনাক্ত করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। এর মধ্যে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ঢাকা ও মাদারীপুর থেকে।
গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, চক্রটি বোরকা পরা নারীদের টার্গেট করে গতিরোধ করে। পরে একজন নিজেকে পীর পরিচয় দিয়ে ধর্মীয় বয়ান দেয়। এরপর পরিবার বিপদে আছে জানিয়ে ইমানের পরীক্ষার জন্য বাসায় রক্ষিত সব টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার দান করে দেয়ার পরামর্শ দেয়। এর বিনিময়ে কয়েক মাসের মধ্যে চারগুন সম্পদ পাওয়ার প্রলোভন দেখায়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার রাজীব আল মাসুদ বলেন, ‘মুখের কথায় তারা কনভিন্স করে। এমনভাবে কনভিন্স করে যে কিছু সময়ের জন্য তারা হিপনোটাইজড হয়ে যায়। ওই সময় তারা কি করে এটা তাদের মনেও থাকে না। দলনেতাকে জিজ্ঞেস করার পর সে বলেছে যে প্রায় ৫ বছর ধরে তারা এ কাজ করে আসছে। বাকী সদস্যরা কেউ দলে আসে আবার চলেও যায়।’
বয়ান পার্টির পলাতক সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযানের পাশাপাশি এমন চক্র আরও আছে কি না, খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দা পুলিশ।