নব্বইয়ের দশকে ছিলেন হাজারীবাগের ট্যানারি শ্রমিক। পরে সন্ত্রাসী ইমন ও বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন পিন্টুর ছত্রছায়ায় বদলে যায় দিন। ২১ বছরের ব্যবধানে সেই মনির হোসেন এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। আছে ৯ টি ট্যানারি, ৬টি বাড়ি, একটি কমিউনিটি সেন্টারসহ ১০ একর জমি। গোয়েন্দারা বলছেন, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ নানা অবৈধ পথে এসেছে এই সম্পদ। তিনটি হত্যা মামলায়ও অভিযুক্ত তিনি।
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর বেড়িবাঁধ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একটি জমিতে পুলিশের সাইনবোর্ড টানানো। প্রায় এক একর এই জমিটির মালিক ছিলেন মনির। সম্প্রতি তিনি এটি বিক্রি করেছেন সরকারের কাছে।
একই ভাবে, ঝাউচর রোডের ৫ তলা এশিয়ান কমিউনিটি সেন্টার, নিচতলায় ছোট একটি মার্কেট এবং এর আশপাশের প্রায় ২-৩ একর জায়গার মালিকানাও তার। সম্পতি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি প্রায় বন্ধ।
ঝাউচরের জুতা ও অ্যাম্বোয়ডারি কারখানা ৩টি দিয়ে রেখেছেন ভাড়ায়। ভেতরে অবৈধভাবে পালা হচ্ছে হরিণ। তবে দীর্ঘ অপেক্ষার পরও মেলেনি ক্যামেরা নিয়ে ঢোকার অনুমতি। পাশেই আছে একটি আবাসিক ভবন। এর খানিকটা সামনেই একাধিক কারখানারও আবাসিক ভবন করেছেন তিনি।
কামরাঙ্গীরচরে মনির কোম্পানির নাম বলতেই নানা স্থাপনা দেখিয়ে দেন স্থানীরা। দশ তলা এই বাড়ির পাশেই, তোলা হচ্ছে আরেকটি ভবন। এমন ১০ বাড়ি নির্মাণের পর বিক্রি করেছেন নানা জনের কাছে।
সাভারে আয়ুব ব্রাদার্স ও আসিয়ান লেদার নামে ট্যানারি দুটির দেখভাল করেন নিজেই। হাজারীবাগের আয়ুব ব্রাদার্সের ভবন ভাড়া দেয়া ৩টি প্রতিষ্ঠানের কাছে। গ্রেপ্তারের পর মনিরের সব স্থাপনাতেই ঝোলানো হয়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাইনবোর্ড।
মার্কেন্টাইল ব্যাংকের মহাখালী শাখায় গিয়ে জানা যায় ১২০ কোটি টাকার সম্পদ জামানত রেখে ১৭০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন মনির। তবে সাইনবোর্ড টানানোর বিষয়টি তাদের জানা নেই।
স্থানীয়রা বলছেন, হাজারীবাগের আজিজ ট্যানারিতে নব্বইয়ের দশকে দৈনিক ২০ টাকা বেতনের শ্রমিক ছিলেন এই মনির। পরে সন্ত্রাসী ইমন ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের প্রশ্রয়ে বনে যান মাফিয়া ডন।
মোহাম্মদপুরের ছয়তলা ভবনে পরিবার নিয়ে থাকতেন মনির। শতচেষ্টায়ও মিলেনি পরিবারের বক্তব্য। এক পর্যায়ে নিরাপত্তারক্ষী জানালেন, এ নিয়ে কিছু বলতে রাজি নন তারা।
গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, সম্প্রীতি ব্যবসায়ী একলাস হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন মনির। তদন্তে রুহুল, জসিমসহ ৩টি হত্যা মামলায় তার সম্পৃক্ততা মিলেছে। আছে জমি দখলের একাধিক অভিযোগ।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, ‘ইমনের ছত্রছায়া এবং ২০০২ সালে এলাকার একজন প্রভাবশালী এমপি নাসিরুদ্দিন পিন্টুদের দিয়েই মুলত তার উত্থান হয়েছে। এদের ছত্রছায়ায় থেকে সে একটার পর একটা চামড়ার কারখানা দখল করেছে। ২০০৪ সালে সে তার এক আত্মীয়কে খুন করে সে তার কারখানাটা দখল করেছে।’
মনিরের এসব সম্পদের বিষয়ে তদন্ত করতে সিআইডি এবং দুদককে সুপারিশ করবে গোয়েন্দা পুলিশ।