যে-কোনো সংকটে চাহিদা বাড়ার অজুহাতে
জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এই দৃশ্য ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার সময়ও দেখা যাচ্ছে। রোগীকে খাওয়াতে হবে তরল। এই সুযোগে ডাবের দাম বেড়ে দুশো টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে। বাড়তি লাভের আশায় সবজি ব্যবসায়ী বনে গেছে ডাব বিক্রেতা। চিকিৎসকরা বলছেন, ডাব বাদ রেখে ও অন্য যেকোনো ফলের রস, স্যালাইন ডেঙ্গু রোগের জন্য উপকারী। ডেঙ্গু মুক্তিতে ডাবের উপকারিতার বিশেষ কোনো প্রমাণ নেই।
রাজধানীর প্রতিটি হাসপাতালের সামনেই এখন ডাবের রমরমা ব্যবসা। চাহিদার তুলনায় ডাবের সরবরাহ কম থাকায় ডাবের দাম বেশি। তাই বাড়তি লাভের আশায় তরি- -তরকারির ব্যবসা ফেলে অনেকেই শুরু করেছে এই ডাবের ব্যবসা।
মুগদা হাসপাতালের সামনেই কাশেম মিয়ার ডাবের দোকান। সাংবাদিক পরিচয় জেনে লাপাত্তা হয়ে যান তিনি। পরে তাকে পাওয়া গেলে তিনি বলেন, আমি আড়ত থেকে পাইকারি একটি ডাব ১১০ থেকে ১১৫ টাকায় কিনি। এরপর হাসপাতালের ফুটপাতে ভ্যান গাড়িতে করে বিক্রি করি বলে পুলিশ এবং আনসার সদস্যদের দিতে হয় ৬০০ টাকা রোজ। লাভ না করলে খামু কি, চলুম কেমনে।
ডেঙ্গু রোগীর জন্য অস্বাভাবিক দামে ডাব কিনতে হওয়ায় ক্ষোভ স্বজনদের। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ ১৬০ থেকে ২০০ টাকায় দাম চায় ডাব বিক্রেতা। দামাদামি করলে বলে ডাব খাওয়া লাগবে না, রোগীকে স্যালাইন খাওয়ান। আরো উল্টাপাল্টা কথা বলে তারা। ডেঙ্গু তো আমাগো পরিবারের পোলাপাইন রে মারতাছে, আর এইদিকে ডাব ওয়ালারাও
আমাগো মারতাছে। কই যামু আমরা। কথাগুলো বলছিলেন মুগদা মেডিকেলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হওয়া শিশুর মা জমিলা খাতুন।
মুগদা হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আরেক শিশুর পিতা সেলিম মিয়া বলেন, পেশায় আমি একজন গার্মেন্টস কর্মী। এই হাসপাতলে চিকিৎসা ভালই চলছে। কিন্তু রোগীর জন্য তরল খাবার কিনতে যে আউট খরচ হয় তাতে আমি কুলাইয়া উঠতে পারছি না। একটা ডাব কিনতে ১৭০ থেকে ২০০ টাকা লাগে। এত টাকা পামু কই। গত এক সপ্তাহে পোলাডারে তিনটা ডাব খাওয়াইছি। আর তো পারি না রে ভাই।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মিটফোর্ড হাসপাতাল এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনেই রয়েছে বেশ কয়েকটি ডাবের দোকান। বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ডাব ১৭০ থেকে ২০০ টাকায়। নেই দর কষাকষির সুযোগ টুকু। বিক্রি হচ্ছে একদামে। হাসপাতালের ভেতর ডেঙ্গু আক্রান্ত স্বজন, ফলে বাধ্য হয়েই ডাব কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত আরেক রোগীর স্বজন জানান, বাজার মনিটরিং করার জন্য কোন লোক তো আসে না। আসলে তো এত দামে এই ডাব বিক্রি করতে পারত না।
দুর্গত অঞ্চল থেকে ঢাকা শহরে একটি ডাব পৌঁছে যাচ্ছে গড়ে ৮৩ থেকে ৮৫ টাকায়। এরপর আড়ত দারের কমিশন, লেবার খরচ, পরিবহন ভাড়া সহ সব মিলিয়ে জনসাধারণকে একটি ডাব কিনতে হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায়। কখনো কখনো ২০০ টাকায়ও কিনতে হচ্ছে। যে ডাবের জন্য ডেঙ্গু রোগীদের এত চাহিদা, মেডিকেল বিশেষজ্ঞরা বলছেন ডেঙ্গু রোগের উপশমের সঙ্গে ডাবের বিজ্ঞানসম্মত কার্যকারিতার বিশেষ কোনো সম্পর্ক নেই। বিশেষজ্ঞরা বলেন, লবণ মেশানো লেবুর পানি এবং ওরস্যালাইন থেকেও রক্ত ঘাটতির এই সুবিধা পাওয়া যেতে পারে।