আব্দুল মান্নান, স্টাফ রিপোর্টার (খাগড়াছড়ি)
খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি কৃষি নির্ভর উপজেলা। চলতি মৌসুমে দেড় শতাধিক প্রান্তিক কৃষক ৬৭০ হেক্টর উঁচু নিচু জমিতে গ্রীষ্মকালীণ শাক,সবজি ও পেঁপে চাষ করেছে প্রান্তিক কৃষক। শ্রাবণের টানা ও ভারী বর্ষণে নিচু জমির শাক, সবজি ও পেঁপে ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যায়। পেঁপে ছাড়া বেশির ভাগ ক্ষেতের সবজি বৃষ্টির আগে বাজারে বিক্রি হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কমেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষেতের মধ্যে ২৪ হেক্টর পেঁপে ও ২৬ হেক্টর সবজি! বৃষ্টি পরবর্তী কৃষি অফিসের পরিসংখ্যানে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র উঠে এসেছে । এতে দেখা যায় ২৬৬ জন ক্ষতিগ্রস্ত চাষির মধ্যে ১৮০ জনের ২৬ হেক্টর সবজি ও ৮৬ জনের ২৪ হেক্টর পেঁপে বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । এতে পেঁপে চাষি পুঁজি খুৃঁইয়েছেন ২ কোটি টাকা। আর সবজিতে ৫০ লাখ টাকা।
সরজমিন ও কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কৃষি নির্ভর উপজেলায় ৬৭০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন শাক, সবজি ও ফলমূল চাষ হয়েছে। এর মধ্যে দেড় শতাধিক প্রান্তিক কৃষক ৭০ হেক্টর জমিতে পেঁপে ও ৬০০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন ফসল চাষ করেছে। শ্রাবণের ভারী বর্ষণে নিচু জমির পেঁপে গাছের গোড়ায় পানি জমে ক্ষেত মরে গেছে। এতে পেঁপে চাষির স্বপ্ন ভঙ্গ! আর সবজি ক্ষেতের ফসল বিক্রির শেষ সময়ে কৃষক ক্ষতির শিকার হয়েছেন।
বৃষ্টি পরবর্তী উপজেলা কৃষি অফিস সরজমিন পরিদর্শন করে পেঁপেসহ গ্রীষ্মকালীণ সবজি ক্ষেতের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ধার করিয়েছেন। এতে কাঁকরোল, বরবটি, পেঁপে, ঢেঁড়স, মিষ্টি কুমড়া, করলা, লাউ, বেগুন, চিচিঙ্গা ক্ষেত ক্ষয়ক্ষতি তালিকায় ২৬৬ জন প্রান্তিক কৃষকের ক্ষতির শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে পেঁপে ২৪ হেক্টর ও সবজি ২৬ হেক্টর। টাকার অংকে পুঁজি ক্ষতির পরিমাণ পেঁপেতে ২কোটি, সবজিতে ৫০ লাখ টাকা। তবে কৃষকের দাবী ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
গত শনিবার ক্ষতিগ্রস্ত পেঁপে ক্ষেতে কথা হয় পেঁপে চাষে নিঃস্ব হওয়া কয়েকজন চাষার সাথে। ডানইছড়ির নতুন উদ্যোক্তা মো. হানিফ বলেন,আমি একটি বাড়ি, একটি খামারের পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে চাকরী করার পাশাপাশি নিজ জমিতে পেঁপে চাষ করে জীবন পরিবর্তনে স্বপ্ন নিয়ে ৮০ শতক নিচু জমিতে ৮২০টি হাইব্রিড পেঁপের চারা লাগিয়েছিলাম। এতে খরচ হয়েছে সাড়ে ৫লাখ টাকা। গাছে গাছে ফল ও ফুলে ভরপুর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় টানা ও ভারী বৃষ্ট! ক্ষেতের পানি সরে গেলেও এখনও পর্যন্ত রোদ না উঠায় প্রায় ৮০% গাছ মরে সাফ! এতে আমি পুঁজি হারিয়েছি ৪ লাখ টাকা। সেম্প্রুপাড়ার উদ্যোক্তা মো. আবু তাহের, অলি মিয়া,মো. নুর ইসলাম, তলীপাড়ার রাংচাই মারমা ও ফোরকান আলীসহ অনেকের সাথে। এ সময় অলি মিয়া জানান, গরু,ছাগল বিক্রি করে এবং সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে প্রায় সোয়া ৩ লাখ টাকা পুঁজি খাটিয়ে ২কানি(৮০ শতক) ক্ষেত লাগিয়েছিলাম। বৃষ্টিতে এমন ক্ষতির আশংকা স্বপ্নেও ভাবিনি! থলি পাড়ার রাংচাই মারমা জানান, আমি. ৮০ শতক জমিনে পেঁপে লাগিয়েছিলাম। লাগাদার বৃষ্টিতে সব গাছ মরে গেছে! আমার পুৃঁজি প্রায় ৪ লাখ টাকা পানিতে!,
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়ন ও খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সহায়তায় এই এলাকায় গড়ে উঠা কৃষি পণ্য সংগ্রহ কেন্দ্র বা কালেকশন পয়েন্টের সভাপতি ও প্রান্তিক কৃষক মো. ফোরকান আলী জানান,প্রান্তিক কৃষকেরা মৌসুমী শাক,সবজি, ফল-ফলাদি নিয়ে দূরের বাজারে এখন যেতে হয় না। বেপারীরা কালেকশন পয়েন্টে এসে ন্যায্যমূল্যে ফসল কিনে নেওয়ার সুবাদে মানুষজন চাষাবাদে ঝুঁকছিল। কিন্তু এবার বৃষ্টিতে প্রায় ৬০% ফসল ম্লান! ২০ হেক্টর জমিতে প্রায় ২ কোটি টাকার পুঁজি হারিয়েছে কৃষক!
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, উপজেলায় গ্রীষ্মকালীণ শাক,সবজি ও পেঁপে চাষ হয়েছে ৬৭০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে শুধু পেঁপেই ৭০ হেক্টর। এসব ফসলের অর্ধেক নিচু জমিতে। ভারী বৃষ্টিতে নিচু জমির পেঁপেসহ প্রায় ৫০ হেক্টর জমির ফসল কম-বেশি নষ্ট হয়েছে। এতে কৃষকেরা হারানো পুঁজির পরিমাণ আনুমানিক আড়াই কোটি টাকা। অবশিষ্ট জমির ফসল রক্ষায় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়ে আমরা সরজমিনে কৃষকদের ছত্রাকসহ প্রয়োজনীয় ঔষধ প্রয়োগের পরামর্শ দিচ্ছি। ক্ষতিগ্রস্ত এসব কৃষকদের আগামীতে কৃষি প্রণোদনায় অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।